গবেষকদের কাছে সে পরিচিত ছিল শুধুমাত্র একটি সংখ্যা হিসেবেই, নাম্বার ১৬। তার ব্যবহার কিংবা আচার আচরণ অন্যদের চাইতে একটু আলাদা তবে আরও একটি বিশেষ গুণ তাকে করেছিল অনন্য। নাম্বার সিক্সটিন পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক মাকড়সা হিসেবে পরিচিত ছিল।
ট্র্যাপডোর গোত্রের এই মাকড়সা (বৈজ্ঞানিক নাম গাইয়াস ভিলোসাস) সর্বপ্রথম মানুষের গোচরে আসে ১৯৭৪ সালে। তখন থেকেই ২০১৬ সাল পর্যন্ত তাকে এনে রাখা হয় অস্ট্রেলিয়ার নর্থ বাঙ্গুলা রিজার্ভে। গবেষকরা তার ওপর করেন নানা ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা। পৃথিবীর বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী এই মাকড়সা। ওয়াটারগেট, বিশ্বের প্রথম পার্সোনাল কম্পিউটার আইবিএম, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব- সবকিছুর প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়ে আছে এই আটপেয়ে জীব। আরও কিছুদিন হয়ত পৃথিবীর আলোবাতাসে বেঁচে থাকতে পারত সে, তবে গবেষকদের কিছুদিন আগে পাওয়া তথ্যানুযায়ী জানা গিয়েছে যে বেঁচে নেই আর এই নাম্বার সিক্সটিন।
এর আগে যে টারানটুলা মাকড়সার সবচেয়ে বেশিবছর বেঁচে থাকবার রেকর্ড ছিল, তা হচ্ছে ২৮ বছর।
থেরাফোসিডা গোত্রের এই মাকড়সাটিকে হারিয়ে দিয়েছে নাম্বার সিক্সটিন। গত ১৯ এপ্রিল প্রকাশিত একটি জার্নালে গবেষকেরা নাম্বার সিক্সটিনের খাদ্যাভ্যাস ও বেঁচে থাকার ধরণ নিয়ে নানা আলোচনা করেছেন। গবেষক দলের প্রধান লিনডা ম্যাসন বলেন,
“আমাদের জানামতে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক মাকড়সা। নাম্বার সিক্সটিন সম্পর্কে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমরা জানতে পেরেছি যে ট্র্যাপডোর গোত্রের মাকড়সা কীভাবে তাদের বংশবিস্তার করে, কীভাবে তারা খাবার খায়, জাল বিস্তার করবার সময় কেমন করে নকশা তৈরি করে ইত্যাদি নানা বিষয় সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি।” লিনডা অস্ট্রেলিয়ার পার্থে অবস্থিত কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নামজাদা গবেষক।
ট্র্যাপডোর স্পাইডার হিসেবে নাম্বার সিক্সটিনের বৈশিষ্ট্যঃ
প্রায় চার দশক ধরে নাম্বার সিক্সটিন মাটির অভ্যন্তরের রুপ কেমন, তা সম্পর্কে জানতে পারেনি। ট্র্যাপডোর মানে হচ্ছে মাটির নিচে থাকা একটি আস্তরণের ভেতর বসবাসকারী। এই জাতের মাকড়সারা তাদের বংশবিস্তার ও আবাসন এমনভাবে করে থাকে যেটি সচরাচর মানুষের গোচরে আসেনা। এছাড়াও নানাধরণের শত্রুর হাত থেকেও তারা মুক্ত থাকে। শরীর যত বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাদের আবাসনের আকারও তত বাড়তে থাকে। নিষেকের সময় হলে স্ত্রী মাকড়সা পা দিয়ে গর্তের আকার আরও সুসঙ্ঘত করে দেয় যাতে বাইরে থেকে কোনো ধরনের আঘাত আক্রমণ আসতে না পারে।
গবেষকেরা বলছেন যে একটি ট্র্যাপডোর স্পাইডার নিজের আবাসন নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকে এবং সবসময় সেটিকে আগলে রাখতে চায়। সাধারণত অন্যের আবাসনের দিকে এটি খুব বেশি চোখ দেয় না। পাঁচ বছর বয়স হলে একটি পুরুষ মাকড়সা তার সঙ্গী খুঁজতে বেরিয়ে যায় তবে স্ত্রী মাকড়সারা তাদের তৈরি ঘরেই থাকে। যদি এটি কোনোভাবে ধ্বংসও হয়ে যায়, কোনভাবে সে এটি মেরামত করে থাকে। তবুও অন্য কোনো ঘরে গিয়ে সে আশ্রয় নেয় না। বিজ্ঞানীদের এই স্বভাবটি খুব চমৎকার লেগেছে। লিনডা বলেন যে মাকড়সাদের কাছেও আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। এর মাধ্যমে এটিই বোঝা যায়।