তাঁকে রেকর্ডের বরপুত্র বলা হলেও বোধহয় কম বলা হবে। প্রতি মৌসুমে নিত্যনতুন সব রেকর্ড করাটাকে বোধহয় অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন লিওনেল মেসি। অভ্যাস ত্যাগ করলেন না এই মৌসুমেও। দেপোর্তিভো লা করুনার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে হয়ে গেলেন দারুণ একটি রেকর্ডের মালিক। লা লিগায় সাতটি ভিন্ন ভিন্ন মৌসুমে ৩০ বা তার বেশি গোল করা একমাত্র ফুটবলার এখন লিওনেল মেসি।
গত নয় মৌসুমের মধ্যে ৭ টিতেই লীগে ৩০ গোলের বেশি করেছেন এই আর্জেন্টাইন। শুরুটা ২০০৯/১০ মৌসুম দিয়ে। সেবার করেছিলেন ৩৪ গোল। এরপরের মৌসুম ২০১০/১১ তে করেছেন ৩১ গোল। ২০১১/১২ মৌসুম টা তো রীতিমত অবিশ্বাস্য কাটিয়েছেন। একমাত্র ফুটবলার হিসেবে লা লিগায় সেবার ৫০ গোলের মালিক হয়েছিলেন তিনি।
পরের মৌসুমেও একই কীর্তির পুনরাবৃত্তি প্রায় করেই ফেলেছিলেন, সেবার গিয়ে থামেন ৪৬ গোলে। মাঝে ২০১৩/১৪ মৌসুমে পারেননি, সেবার করেছিলেন ২৭ গোল। এরপর আবার ২০১৪/১৫ মৌসুমে করলেন ৪৩ গোল। ২০১৫/১৬ তেও পারেননি, করেছিলেন ২৬ গোল। এরপর গত মৌসুমে করলেন ৩৭ গোল। আর কাল লুইস সুয়ারেজের পাস থেকে নিজের প্রথম গোল করার পথে ছুঁয়ে ফেললেন এই মৌসুমেও ৩০ গোল করার কীর্তি। পরে আরও দুই গোল করে সংখ্যাটাকে নিয়ে গেছেন ৩২ এ। লীগে বাকি আরও চার ম্যাচ, সংখ্যাটাকে নিশ্চিতভাবেই আরও বাড়িয়ে নিতে চাইবেন তিনি।
অর্জন আছে আরও একটা। গণ্ডিটাকে লা লিগা থেকে বাড়িয়ে যদি করা হয় সব ধরনের প্রতিযোগিতা, তাহলে লা লিগার ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা ১০ মৌসুমে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় কমপক্ষে ২৫ গোল করার রেকর্ড এখন মেসির দখলে।
শুরুটা সেই ২০০৮/০৯ মৌসুম থেকে। সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সেবার করেছিলেন ৩৮ গোল। এরপর থেকে নিজের পারফরম্যান্সের গ্রাফকে শুধু ঊর্ধ্বমুখীই করে চলেছেন। পরের ৯ মৌসুমে গোল করলেন যথাক্রমে ৪৭, ৫৩, ৭৩, ৬০, ৪১, ৫৮, ৪১, ৫৪ ও ৪৩ টি (মৌসুম এখনো শেষ হয়নি)।
লীগে সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনটাও আরও পাকাপোক্ত করেছেন মেসি। ৩২ গোল নিয়ে সবার চেয়েই এগিয়ে আছেন তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ গোল রোনালদোর, এরপর ২৩ গোল নিয়ে তিনে আছেন লুইস সুয়ারেজ, ২০ গোল নিয়ে চারে ইয়াগো আসপাস এবং ১৯ গোল নিয়ে পাঁচে আছেন অ্যান্টোইন গ্রিজম্যান। পিচিচি ট্রফি (স্প্যানিশ লীগে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরষ্কার) মোটামুটি নিশ্চিত করেই ফেলেছেন, ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু জয়ের পথেও লিভারপুলের সালাহকে পেছনে ফেলেছেন এই হ্যাটট্রিক দিয়ে। ৩২ গোলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে আছেন মেসি, আর ৩১ গোলে ৬২ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে সালাহ। সালাহর হাতে ম্যাচ বাকি আছে মাত্র দুটি, যেখানে মেসি পাবেন আরও চারটি ম্যাচ।
মেসির এমন রেকর্ডময় রাতে শিরোপা উৎসব করেছে বার্সেলোনাও। ড্র করলেই শিরোপা নিশ্চিত হতো, বার্সা আনুষ্ঠানিকতা সেরেছে জয় দিয়েই। মেসির হ্যাটট্রিক ও ফিলিপে কুটিনহোর গোলে দেপোর্তিভোকে ৪-২ গোলে হারিয়ে নিজেদের ২৫ তম লীগ শিরোপা নিশ্চিত করেছে কাতালান ক্লাবটি। গত ১০ মৌসুমে এটি তাঁদের সপ্তম শিরোপা! লা লিগাকে যেন নিজেদের সম্পত্তিই বানিয়ে ফেলছে ক্লাবটি। যদিও ৩৩ শিরোপা নিয়ে এখনো অনেকটা এগিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ।
গত সপ্তাহে সেভিয়াকে হারিয়ে কোপা ডেল রে জেতার পর এবার লীগ শিরোপা, এই নিয়ে নিজেদের ইতিহাসে অষ্টমবারের মতো ডাবল জিতলো ক্লাবটি। এই ম্যাচের মধ্য দিয়েই রেলিগেশন নিশ্চিত হয়েছে দেপোর্তিভোর।
লীগ শিরোপা জয়ের পর কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে মার্কাকে জানিয়েছেন, ‘সারা মৌসুম জুড়ে তাড়া করার পর লীগ শিরোপা জেতাটা আসলেই খুব স্বস্তিদায়ক। লীগ শিরোপা এক ম্যাচ দিয়ে কখনো নিশ্চিত হয় না। একদম শুরু থেকেই আমরা সবার উপরে ছিলাম। আর শেষে এসে প্রমাণ করলাম আমরাই সেরা। টানা জিতে চলাটাই সবচেয়ে কঠিন।’
শিরোপা জয়ের পথে নিজের কৃতিত্বও স্বীকার করতে চাইলেন না সাবেক বিলবাও কোচ, ‘আমি তো নতুন করে কিছু আবিষ্কার করিনি। দিনের শেষে খেলোয়াড়েরাই ট্রফি এনে দেয়। কোচের চেয়ে তাঁদের কৃতিত্বটাই বেশি।’
বার্সার জার্সি গায়ে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার এটিই হয়ে রইবে শেষ ট্রফি। দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে বার্সার মূল দলের হয়ে ৩২ টি ট্রফি জিতে বিদায় নিচ্ছেন তিনি। আরেক সাবেক কিংবদন্তি জাভি হার্নান্দেজও জিতেছিলেন ৩২ টি ট্রফি। এমনকি লিওনেল মেসিরও বার্সার জার্সি গায়ে এটি ৩২ নম্বর ট্রফি। লা লিগা জিতেছেন ৯ টি, কোপা ডেল রে ৬ টি, স্প্যানিশ সুপার কাপ ৭ টি, চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ৪ টি, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ৩ টি ও উয়েফা সুপার কাপ জিতেছেন ৩ টি।