কমিক বইয়ের এনিমেটেড ফিল্ম দেখতে যারা পছন্দ করেন, তাদের কাছে ডিসি এবং মার্ভেলের জনপ্রিয় কমিক চরিত্রগুলোর এনিমেটেড ভার্সন খুবই জনপ্রিয়। কিছুদিন আগেই মুক্তি পেল ডিসির সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র ব্যাটম্যানের নতুন কিস্তি, ব্যাটম্যান নিনজা। মূলত, গতানুগতিক ব্যাটম্যান স্টোরিলাইন থেকে এটি একটু ভিন্নঘরানার। কারণ, ব্যাটম্যান নিনজার প্লট আধুনিক গোথাম সিটিকে নিয়ে নয়, তৈরি করা হয়েছে সামন্ততান্ত্রিক জাপানকে ঘিরে। মূল চরিত্রগুলো ঠিকই রয়েছে তবে প্লটের প্রয়োজনে তাদেরকেও আদি জাপানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছে। খলচরিত্রে রয়েছে চিরশত্রু জোকার। সাথে হার্লে কুইন, বেইন, টু ফেইস ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোরও সমাবেশ ঘটেছে। ব্যাটম্যানের বাটলার আলফ্রেড, সেলিনা ওরফে ক্যাটওম্যান, নাইটউইংসহ আরও নানা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র সমানভাবে স্থান পেয়েছে ব্যাটম্যান নিনজায়।
একটু খেয়াল করে দেখবেন, চেহারাগুলো ঠিক আমেরিকান ঘরানার নয়। সেখানে একটু জাপানিজ ছাপ রয়েছে। কারণ এনিমেটেড ফিল্মটি পরিচালনা করেছেন বিখ্যাত এনিমে আফ্রো সামুরাই নির্মাতা তাকাশি ওকাজাকি। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, আদি জাপান ফুটিয়ে তোলা হলেও এখানে ব্যাটম্যানের গ্যাজেট সবই রয়েছে। ব্যাটমোবিল, ব্যাটবাইক, এমনকি একটি দৃশ্যে ব্যাটম্যানকে দেখা যাবে আর্মারড রুপেও। এনিমের সাথে একটি চমৎকার ফিউশন ঘটাতে তাকাশি কোনো ধরণের কার্পন্য করেননি সেটা দেখলেই বোঝা যায়। প্রাচীন জাপানের গ্রামের রাস্তায় একেবেকে ব্যাটমোবাইল যখন জোকারের দুর্গ ধ্বংস করতে যায়, দর্শকের মনে নিদারুণ এক সিম্ফোনি বেজে ওঠে, সেটি বলাই বাহুল্য। এছাড়াও মিনিগানের মুহুর্মুহু শব্দ, পানিপথে জাহাজের সাথে জাহাজের যুদ্ধ দেবে ঝঙ্কার।
ছবির প্লটে অনুযায়ী, গরিলা গ্রড একটি টাইম মেশিন তৈরি করেছে। টাইম মেশিনে চড়ে ২০১৮ সাল থেকে ব্যাটম্যান সোজা গিয়ে পড়ল জাপানে, যেখানে এখনও চলছে সামন্ততন্ত্র। একটু ধন্দে পড়ে গেল ব্রুস ওয়েইন। সাহায্য করতে চলে এল ক্যাটওম্যান। তাকাশি এই সময় পরিভ্রমণে খুব একটা সময় ব্যয় করেননি। যা বলতে চেয়েছেন, কিছু মিনিটের মাঝে বলেই চলে গিয়েছেন জাপানে। সেখানে মূল চরিত্রগুলো বিকশিত করেছেন, গল্পের কাহিনী আস্তে আস্তে এগিয়ে চলেছে ব্যাটম্যান ও নিনজা ক্ল্যানের সাথে একাত্মতায়। আস্তে আস্তে চলতে থাকে গল্পের কাহিনী।
গল্পে দেখা গিয়েছে যে মূল চরিত্রগুলো আগে আগে জাপানে চলে এলেও ব্যাটম্যানের সময় লেগেছে দুই বছর। জোকার ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের জাপান শহর সাজাতে পেয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ সময়। এছাড়াও ব্যাটম্যানের আগমন ছিল নির্ধারিত। সেজন্য প্রস্তুতির সময়ও পেয়েছিল তারা অনেক। সামন্ততান্ত্রিক সমাজে এক ধরনের অরাজকতা তৈরি করে রেখেছে জোকার। উত্তর দক্ষিণ পূব পশ্চিমে রয়েছে তার প্রিয়পাত্ররা। এদের একাট্টা করে কতদূর কী করতে পারবে ব্যাটম্যান সেটিই হচ্ছে দেখার বিষয়। তবে ব্যাটম্যান একা নেই। সাথে রয়েছে তার বন্ধুবান্ধব। মার খেয়ে পড়ে থাকার পর নাইটউইং তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ব্রুস জানতে পারে তার জন্য অপেক্ষা করে আছে শত বছরের নিনজা ক্ল্যান। নতুন এক ইতিহাসের মুখোমুখি হয় সে। এরপর? বাকিটা জানতে হলে আপনাকে দেখতে হবে ব্যাটম্যান নিনজা।
ছবিতে সবাইকে সমান গুরুত্ব দেয়া হয়নি। যার যখন যেখানে প্রয়োজন, সে সেখানে এসেছে। তবে ব্যাটম্যানের আদিম বৈশিষ্ট্য, কাউকে বিশ্বাস করলে তার কাছে ধোঁকা খেতে হবে, এটি একটু বিরক্তই লেগেছে বৈকি। পরিচালক চাইলে নতুন আঙ্গিকেও সাজাতে পারতেন পটভূমি। নিনজা ক্ল্যানের সাথে ব্যাটম্যানের কসরত ও পরবর্তী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতিপর্বের যে সম্মিলন ঘটেছে, সেটিও পরিচালক তুলেছেন চমৎকারভাবে। বাকিটা জানতে হলে আজই দেখে ফেলুন ব্যাটম্যান নিনজা!
ট্রেইলার দেখতে পাবেন নিচের লিঙ্কে…