আর্মেনিয়ার ছোট্ট একটি কুটিরে টুকটুক শব্দ ভেসে আসছে। পাথর কুঁদে একটি ভাস্কর্য তৈরি করা হচ্ছে এখানে। নানারকমের আকৃতি তৈরি হচ্ছে, ভোঁতা থেকে সরু চিকন, বিভিন্ন আকৃতি তৈরি হচ্ছে এখানে। দুই ভাই একমনে কাজ করেই যাচ্ছে। মাঝে মাঝে হয়ত একটু ঢিল দেয়া প্রয়োজন। শরীর তো আর কোনো যন্ত্র নয়। একটু সিগারেট ফুঁকে নিয়ে আলাপচারিতায় মগ্ন হয় দুই ভাই। পারিবারিক কিছু আলাপচারিতাও শেষ করে নেয়। তবে বেশিরভাগ সময়ই থাকে কোন ভাস্কর্যটা তৈরি করা হবে পরবর্তীতে, তা নিয়ে। গাছের রুপদান করা হবে নাকি পত্রপল্লবের, সেটি নিয়েও খানিক বিতর্ক চলে দুই ভাইয়ের মাঝে। একজন বলে মানুষ এটা পছন্দ করবে, তো আরেকজন বলে অন্যটা। এই নিয়েই খুনসুটি চলতে থাকে। হাতের কাছে পড়ে থাকা লাইমস্টোনের দিকে চোখ যায় মাঝেমাঝে। এই লাইমস্টোনের মাধ্যমেই তো রুটিরুজির যোগান হচ্ছে। ঘরের কাছেই খাচিক গ্রাম থেকে চলে আসে পাথরগুলো। নোরাভাঙ্ক মনাস্টেরির জন্য তৈরি হয়ে যায় দর্শনযোগ্য আরও কিছু প্রতিকৃতি। মানুষ পছন্দ করে, কিনতেও থাকে দেদারসে।
বলছিলাম আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভানের নিকটেই একটি গ্রাম নোরাভাঙ্কের কথা। গল্পটা আসলে দুই ভাইয়ের। রুবেন এবং কারেন বড় হয়েছে এই মনাস্টেরির প্রতিকৃতি দেখেই। পাথর কুঁদে যারা এমন বাহারি প্রতিকৃতি তৈরি করেন, তাদেরকে বছরের পর বছর অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছেন স্থাপক মামিক। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মূলত আর্মেনিয়ান ভাস্কর্যের সূচনা তার হাত থেকেই হয়েছিল। বিশপ, রাজপুত্র, ধর্মের প্রতি আনুগত্য ইত্যাদি নানা বিষয়ের ওপর প্রতিকৃতি তৈরি করেছিলেন মামিক। আরেনি-১ গুহাটির দিকে আর্মেনিয়াতে যারা ঘুরতে আসেন, তাদের একটি অন্যতম আকর্ষণ রয়েছে। পৃথিবীর অন্যতম প্রধান ওয়াইন প্রস্তুতকারক ফ্যাসিলিটি হিসেবে এটি বেশ পরিচিত।
ঠিক এর প্রবেশপথের মুখেই কাজ করে যাচ্ছে দ্য ঘাজারিয়ান ব্রাদার্স, রুবেন ও কারেন। পাথর কুঁদে কুঁদে তারা ভাস্কর্য তৈরি করছে, খুশিমনে শেখাচ্ছে অন্যদেরও। টুরিস্টদের সময় হলে তাদের কাজ যেন আরও বেড়ে যায়। মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তাদের হাতে যেন হাতুড়ি বাটালি ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। এখানেই তাদের রুটিরুজির যোগান হয় এবং এখানেই তারা কাজ খুঁজে পায়। ইয়েঘেনাজদোরের কাছের এই শহরে বেড়ে ওঠা দুই ভাইয়ের পেশা ও নেশা হয়ে উঠেছে পাথর কুঁদে প্রতিকৃতি তৈরি করা। গত সাত বছর ধরে কেমন করে এই পেশায় নিয়োজিত করা যায় এবং ভালোভাবে কাজ করা যায়, শুধু সেটা নিয়েই ভেবেছে তারা। স্থানীয় এক যাজকও সাধ্যমতো সাহায্য করেছেন তাদের, এখনও করে যাচ্ছেন। ধীরে ধীরে নিজেদের আরো উন্নত কীভাবে করা যায়, সেটির কায়দা কানুন জেনে নিচ্ছে এই দুইভাই। এছাড়াও অনলাইন ভিডিও দেখে দেখে নতুন নতুন আইডিয়ার মাধ্যমে শাণিত করে নিচ্ছে হাতজোড়া। তাদের কাজ দেখে মন ভরে উঠছে পর্যটকদের।
একটি সাক্ষাৎকারে রুবেন বলেন, “কাজ আমরা একসাথেই করি। মোমিক যেভাবে কাজ করতেন, তারই অনুপ্রেরণায় কাজ করে যাচ্ছি আমরা। আকারের দিকে নজর দিচ্ছি, কী তৈরি হচ্ছে সেটিও দেখছি।”
ভবিষ্যতের কী লক্ষ্য, সেটি জানতে চাইলে কারেন একগাল হেসে বলেন,
“অন্যদেরও শেখাবো। হয়ত একদিন আমাদের সন্তানরাও এখান থেকেই শিখবে।”
(সূত্রঃ স্মিথসোনিয়ান ডট কম)