ছেলেবেলায় দেখা কার্টুনের যত কন্সপিরেসি থিওরি! – Creative IT Blog
Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611
Home / ফিচার / ছেলেবেলায় দেখা কার্টুনের যত কন্সপিরেসি থিওরি!

ছেলেবেলায় দেখা কার্টুনের যত কন্সপিরেসি থিওরি!

কার্টুন! এমন একটা শব্দ যেটা শুনলে পৃথিবীর হাজার হাজার শিশুর মুখের হাসি চওড়া হয়ে যায়। ছোটবেলাতে আমরা সবাই কার্টুন দেখেছি, অনেকে বড় হয়েও দেখি। কার্টুন বলতে সাধারনত কোনো অ্যানিমেটেড টিভিশোকে বুঝানো হয়। ছোটদের পাশাপাশি বড়দের জন্যও কার্টুন তৈরী হয়।
ছোটবেলাতে আপনি কেন কার্টুন দেখতেন? সময় কাটানো জন্য? মজা পাওয়ার জন্য?
এইসব কারণেই কিন্তু মানুষ কার্টুন দেখে। তবে ব্যাপারটা হলো, ছোটবেলাতে আপনি যে দৃষ্টিতে কার্টুনগুলো দেখেছেন সেগুলোর অর্থ কি আসলেই অমন? কার্টুনগুলো কি আসলেই এতোটাই সহজ-সরল?
আর এখানেই কন্সপিরেসি থিওরিগুলো এসে যায়। এই থিওরিগুলো কয়েক মিনিটের মধ্যে আপনার শৈশবের মধুর স্মৃতিগুলোকে শেষ করে দিতে পারে! প্রিয় কার্টুনগুলোর এমন এক ভয়াবহ রূপ হাজির করবে এরা আপনার সামনে যেগুলো দেখে আপনি একেবারেই স্তব্ধ হয়ে যেতে বাধ্য!
তবে দিনের শেষে এগুলো শুধু কন্সপিরেসি থিওরিই। এগুলোর কোনোটার সত্যতাই নিশ্চিত করা যায় না। আর কার্টুনগুলো যারা বানিয়েছেন তাঁরাও এগুলো নিয়ে কখনোই কিছু বলেন না। তারপরেও একটা খটকা থেকেই যায়।
এখানেই কন্সপিরেসি থিওরিগুলোর সফলতা। এরা আপনাকে চিন্তা করতে বাধ্য করে।
এই লেখাতে অতি জনপ্রিয় কিছু কার্টুন নিয়ে প্রচলিত কিছু কন্সপিরেসি থিওরি নিয়ে আলোচনা করা হবে। যাদের কাছে নিজের ছোটবেলায় দেখা কার্টুনগুলোর স্মৃতি অসামান্য মূল্য রাখে তাঁরা দয়া করে এই লেখাটি পড়বেন না।
প্রথমেই বলবো ‘স্কুবি ডু’(scooby Doo) এর কথা। ১৯৬৯ সালে শুরু হওয়া এই কার্টুন সিরিজটি গোটা পৃথিবীতে অসম্ভব জনপ্রিয়। এই সিরিজ অবলম্বনে হলিউডে চলচিত্র নির্মিত হয়েছে একাধিক।
এখানে দেখা যায় পাঁচজনের একটি দল নানা রকমের ভৌতিক রহস্যের সমাধান করছে। এই দলের মধ্যমনি হলো স্কুবি নামের কুকুরটি। দলের শ্যাগি রজার্স নামের ছেলেটি এই কুকুরটির মালিক। এছাড়াও দলে রয়েছে আরেকজন পুরুষ যার নাম ফ্রেড। নারী সদস্য দুজনের নাম হলো ভেলমা আর ড্যাফনে। প্রতিটি পর্বের শুরুতেই দেখানো হয় যে এই দলের সদস্যরা তাদের ভ্যানে করে একটি নতুন জায়গায় যায় এবং সেখানের কোনো ভূতুড়ে রহস্যে জড়িয়ে পড়ে।


তদন্তের প্রায় সব কাজই করে ভেলমা নামের মেয়েটি। দলনেতা ফ্রেডকে কখনো তেমন কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়না, ড্যাফনেও অনেকটা সেরকই। স্কুবি আর শ্যাগি দৌড়াদৌড়ি আর লাফঝাপ দিয়েই পুরো পর্ব পার করে। তাদের মাঝে মধ্যেই বুভুক্ষের মতো খেতে দেখা যায়।
এই শো এর সবচাইতে আজব ব্যাপার হলো, বেশীরভাগ সময়েই স্কুবি কথা বলে! একটা কুকুর কিভাবে কথা বলতে পারে? আর সব পর্বেই শ্যাগিকে দেখলে কেমন যেনো ক্লান্ত আর নেশাগ্রস্থের মতো লাগে।
কন্সপিরেসি থিওরি বলে যে, শ্যাগি বড়লোকের বখে যাওয়া মাদকাসক্ত সন্তান। তার স্কুলের বন্ধু ফ্রেড তাকে ব্যাঙ্গ করে কারণ সে শারীরিক ভাবে দূর্বল, মেধাবী বান্ধবী ভেলমা তার সাথে কথা বলে না কারণ সে বোকা আর সুন্দরী বান্ধবী ড্যাফনে তার প্রেমের প্রস্তাব প্রতাখ্যান করেছে কারণ সে একজন মাদকাসক্ত।
স্কুবি? শ্যাগির কুকুর স্কুবি অনেক আগেই মারা গেছে!
শ্যাগি নিজের ব্যার্থতা ভুলে থাকতে এই অভিযানগুলো কল্পনা করে। গোটা পৃথিবীতে একমাত্র স্কুবিকেই তার কাছে আপন মনে হতো তাই সে নিজের কল্পিত দলের মধ্যমনি করেছে স্কুবিকে। ফ্রেড আর ড্যাফনেকে সে একদম গর্দভ হিসাবে দেখিয়েছে কারণ তাদের প্রতি তার কোনোই শ্রদ্ধাবোধ নেই। তবে ভেলমার প্রতি রাগ থাকলেও তার মেধাকে মনে মনে সম্মান করে সে, তাই প্রতিটি রহস্যের সমাধান ভেলমাই করে। নিজেকে কল্পনাতেও অপদার্থ আর অকর্মা হিসাবে দেখতেই পছন্দ করে সে।
অবাক লাগছে? আচ্ছা আরেক কুকুরের কাহিনী শুনুন তাহলে।
স্কুবির পরে জনপ্রিয়তার বিচারে যদি কোনো কুকুর কার্টুন চরিত্রের নাম আসে তবে সেটা হলো ‘কারেজ’। কার্টুন নেটওয়ার্কের জনপ্রিয় টিভিশো ‘কারেজ দ্য কাওয়ার্ডলি ডগ’(Courage The cowardly Dog) এর প্রধান চরিত্র হলো এই কুকুরটি। ১৯৯৫ সাল থেকে শুরু হয় এই জনপ্রিয় কার্টুনটি।


মিউরিয়াল এবং ইউসটেস দম্পত্তির কুকুর হলো কারেজ। মিউরিয়াল কারেজকে সবসময় আদর করলেও তাঁর স্বামী ইউসটেস, কারেজকে দুচোখে দেখতে পারেনা। এই দম্পত্তির সাথে একটি পুরনো বাড়িতে বাস করে কারেজ। বাড়িটির আশেপাশে বহুদূর পর্যন্ত কিছুই নেই, না আছে কোনো গাছপালা, না আছে কোনো বাড়িঘর! প্রতিটি পর্বেই কারেজ তার মালিক এবং মালকিনকে অপশক্তির হাত থেকে রক্ষা করে। এই কার্টুনের খারাপ চরিত্রগুলো হরেক রকমের। কখনো ভূত-প্রেত, কখনো বা কোনো সাইকো কিংবা কখনো এলিয়েন!
এই কার্টুনটির খারাপ চরিত্রগুলো এতটাই অদ্ভুত আর ভীতিকর যে এর দুইটি পর্ব এখনো ইউরোপে নিষিদ্ধ। আর স্কুবির মতো কারেজকেও কথা বলতে দেখা যায় মাঝে মাঝে!
এই কার্টুন নিয়ে কন্সপিরেসির শুরুটা হয় এর প্রথম সিজনের শেষ পর্ব থেকে। পর্বটির শেষে দেখা যায় ইউসটেস আর মিউরিয়াল দুজনের দেহ নিথর অবস্থায় চেয়ারে বসে আছে আর কারেজ ওপর থেকে সুতো দিয়ে তাদের চালিত করছে, যেমন ভাবে পাপেটদের চালিত করা হয় পুতুল নাচের সময়!
কন্সপিরেসি থিওরি বলে যে, ইউসটেস আর মিউরিয়াল বহু আগেই মারা গেছে। তাদের অদ্ভুত বাড়িটি হলো তাদের কবরস্থান! তাদের কুকুর কারেজ এই কবরস্থানেই থাকে এবং মন থেকে সে কখনো তার মালিক আর মালকিনের মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি। যে ঘটনাগুলো দেখানো হয়েছে সেগুলো আসলে কারেজের কল্পনা। সে প্রতিদিন এমন সব ঘটনা কল্পনা করে যেখানে নানা অশুভ শক্তি ইউসটেস আর মিউরিয়ালের ক্ষতি করার চেষ্টা করে কিন্তু তার কারণে কিছু করতে পারেনা।
আরেকটি কন্সপিরেসি থিওরি বলে যে আসলে মিউরিয়াল আর ইউসটেসের বাড়িটি হলো নরকের একটি প্রতিরূপ। কারেজ হলো গ্রীক মিথের সেই কুকুর ‘সারবেরাস’ যে নরকের দরজার প্রহরী। মিউরিয়াল প্রতিনিধিত্ব করে মানব জাতির। খল চরিত্রগুলো হলো সেইসব প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেগুলো মানুষকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দেয়। আর ইউসটেস হলো হেডিস, যে ক্রুরতার প্রতীক এবং একই সাথে নরকের অধিপতি।
কুকুর তো হলো, এবার বিড়াল নিয়ে কিছু বলা যাক? আর বিড়ালের কথা বললে তো ইঁদুরের ব্যাপারটাও এসেই যায়, তাইনা?
পৃথিবীর সবচাইতে জনপ্রিয় বিড়াল-ইঁদুর জুটি হলো ‘টম আর জেরি’(Tom and Jerry)। এরা কে? আসলে এই নিয়ে কিছু বলার দরকার নেই। কারণ এরা এতটাই জনপ্রিয় যে প্রায় সবাই এদের চেনে। এদের কাজকর্ম দেখে আমরা সবাই হাসিতে ফেটে পড়ি।
আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না কি ভয়ানক একটা কন্সপিরেসি থিওরি রয়েছে এই কার্টুনের পিছে।
কন্সপিরেসি থিওরি বলে যে টম অ্যান্ড জেরি আসলে একটা নাৎসি প্রপাগান্ডা। ১৯৪০ সালে শুরু হওয়া এই কার্টুনটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌছে যায়।
আজব ব্যাপার হলো শুরুর দিকে টমের নাম ছিলো জ্যাসপার। কিন্তু পরে এটাকে বদলিয়ে টম রাখা হয়! কেন রাখা হয়? আসলে ‘টমি’ শব্দটা সেসময়ে বৃটিশ সেনাবাহিনীতে একটা গালি হিসাবে ব্যাবহৃত হতো। আর টমও কিন্তু একটি ইংরেজ বিড়াল!
আর জেরি? শুনলে চমকে উঠবেন যে ‘জেরি’ শব্দটা জার্মান নাৎসি বাহিনীতে গালি হিসাবে ব্যাবহার করা হতো!
কার্টুনে জেরিকেই ভালো হিসাবে দেখানো হয়েছে আর টমকে বদ স্বভাবের!


কন্সপিরেসি থিওরি বলে যে জার্মানদের ভালো এবং ইংরেজদের খারাপ হিসাবে দেখানোর জন্যই এই কার্টুনটি বানানো হয়েছে!
আবার এমন একটা কার্টুন আছে যেটা বাচ্চা মেয়েদের পছন্দের তালিকায় সবসময় শীর্ষে থাকে। আমি বলছিলাম ‘দ্য পাওয়ারপাফ গার্লস’(The Powerpuff Girls) এর কথা।

১৯৯৮ সালে শুরু হওয়া এই কার্টুনে দেখানো হয় যে প্রফেসর ইউটোনিয়াম নামের একজন বৈজ্ঞানিক তার গবেষনাগারে কাজ করতে করতে দুর্ঘটনাবশত সৃষ্টি করেন ‘ব্লসম’, ‘বাবলস’ আর ‘বাটারকাপ’ কে। অতিমানবীয় ক্ষমতাসম্পন্ন এই তিন বোন তাদের শহর টাউনসভিলকে একের পর খল শক্তির হাত থেকে বাঁচাতে থাকে। এজন্যই তাদের পাওয়ারপাফ গার্লস বলা হয়।

তবে তিন বোনের চরিত্র অনেকটা তিন রকম। বাবলস খুবই নরম প্রকৃতির, বাটারকাপ প্রচন্ড বদরাগী এবং ব্লসম একজন আদর্শ ছোটমেয়ে বলতে যা বোঝায় তাই।

কন্সপিরেসি থিওরি বলে যে, এরা তিনজন আলাদা কোনো ব্যাক্তি নয় বরং একজনই! একটা ছোট মেয়ে যে মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে ভোগে।

বাবল প্রতিনিধিত্ব করে তার চরিত্রের নরম দিকটার, বাটারকাপ রাগী দিকটার আর ব্লসম হলো একজন আদর্শ মেয়ে যেটা সে হতে চায়। প্রফেসর ইউটোনিয়াম ছিলেন এই মেয়েটার বাবা, যিনি অনেক আগেই মারা গেছেন। খল চরিত্রগুলো হলো শহরের মানুষেরা, যাদের মেয়েটি কখনোই ভালো চোখে দেখেনা!

একা একা থাকতে থাকতে সেই নিজের আলাদা আলাদা ব্যাক্তিত্বদের নিয়ে উদ্ভট সব অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনী কল্পনা করে মেয়েটা। তার এই কল্পনা করা ঘটনাগুলোই কার্টুনের পর্ব হিসাবে দেখানো হয়।

পাওয়ারপাফ গার্লস নিয়ে আরেকটি বিখ্যাত কন্সপিরেসি থিওরি রয়েছে তবে সেটা বুঝতে হলে আপনাকে আরেকটি জনপ্রিয় কার্টুন ‘সামুরাই জ্যাক’(Samurai Jack) সম্পর্কেও জানতে হবে।

২০০১ সাল থেকে কার্টুন নেটওয়ার্কে প্রচার শুরু হয় সামুরাই জ্যাকের। তবে এটি আসলে বানানো হয়েছিলো আরেকটি চ্যানেল ‘অ্যাডাল্ট সুইম’ এর জন্য। পরে এর কিছু অংশ সেন্সরড করে দিয়ে এটি কার্টুন নেটওয়ার্কের উপযোগী করা হয়।

এখানে দেখা যায় যে শয়তান ডিমন ‘আকু’র বিরুদ্ধে একাই তলোয়ার নিয়ে রুখে দাঁড়ায় জ্যাক নামের একজন অকুতোভয় সামুরাই। কিন্তু আকু নিজের জাদুশক্তি প্রয়োগ করে জ্যাককে ভবিষ্যতে পাঠিয়ে দেয়।

ভবিষ্যতে এসেও জ্যাক প্রতিনিয়ত লড়াই চালিয়ে যায় নানা অতিপ্রাকৃত শক্তির বিরুদ্ধে এবং একই সাথে চেষ্টা করে অতীতে ফিরে যেতে।

অদ্ভুত ব্যাপারটা কি জানেন? যারা যারাই পাওয়ারপাফ গার্লস এবং সামুরাই জ্যাক দুটো শো দেখেছেন তারাই হয়তো খেয়াল করেছেন যে প্রফেসর ইউটোনিয়ামের সাথে জ্যাকের চেহারার অস্বাভাবিক মিল রয়েছে!

কন্সপিরেসি থিওরি বলে যে, প্রফেসর ইউটোনিয়াম আর সামুরাই জ্যাক আসলে একই ব্যাক্তি! আকু নিজের জাদুশক্তিতে জ্যাককে এমন কোনো সময়ে পাঠিয়ে দিয়েছে যেখানে সে ‘ইউটোনিয়াম’ নাম নিয়েছে এবং পাওয়ারপাফ গার্লসদের সৃষ্টি করেছে। এই থিওরি আরো বলে, যেসব দানবের মোকাবিলা পাওয়ারপাফ গার্লস করে তারা আসলে আকুরই পাঠানো!

ডেক্সটারের কথা মনে আছে? মানে ডেক্সটার বলতে বাচ্চারা যাকে বুঝে। আমি বলছি ‘ডেক্সটার’স ল্যাবরেটরি’(Dexters Laboratory) কার্টুনের প্রধান চরিত্র ডেক্সটারের কথা।
১৯৯৬ সালে কার্টুন নেটওয়ার্কে শুরু হওয়া কার্টুনে ডেক্সটার নামে একজন অতিরিক্ত মেধাবী ছেলের দৈনন্দিন জীবনের নানা ঘটনা দেখানো হয়। বাড়ির নীচে ডেক্সটারের একটা গোপন গবেষনাগার আছে। যেখানে সে নানা রকমের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে, অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিস বানায়।
তার মা-বাবা এই ল্যাবরেটরির কথা জানেন না! জানে শুধু তার বড়বোন ‘ডিডি’ যে নানা ভাবে ডেক্সটারকে জ্বালাতন করে এবং তার কাজের ব্যাঘাত ঘটায়।
এই কার্টুনের একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ডেক্সটারের ল্যাবে জিনিসপত্রের কোনো অভাব নেই, সেখানে পৃথিবীর সব কিছুই পাওয়া যায়। আরেকটা জিনিস সবারই চোখে পড়ে যে, ডেক্সটার ছাড়া এই কার্টুনের আর কারো ব্যাবহারই স্বাভাবিক নয়, সবাই কেমন যেনো উদ্ভট আচরণ করে, এমনি বড় মানুষেরাও।
কন্সপিরেসি থিওরি বলে যে, ডেক্সটার অ্যাসপারগারস সিনড্রোম নামের একটি অদ্ভুত মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত। আসলে তার কোনো ল্যাবরেটরি নেই, ল্যাবরেটরি আর অদ্ভুত কাজগুলো সবই তার কল্পনা।
বাকি চরিত্রগুলোর পাগলাটে ব্যাবহারের কারণও এইটাই যে অ্যাসপারগারস সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা মানুষের সাথে মিশতে পারেনা এবং তাদের দৃষ্টিতে তারা নিজেরা ছাড়া বাকি সবাইকেই পাগল মনে হয়!


‘ফিনিয়াস অ্যান্ড ফার্ব’(Phinease and Ferb) কার্টুনটিকে অনেকে ডেক্সটার’স ল্যাবরেটরি থেকেই অনুপ্রানিত মনে করেন।
২০০৭ সালে ‘টুন ডিজনি’ তে শুরু হওয়া এই কার্টুনটিতে দুই সৎ ভাই ফিনিয়াস এবং ফার্বের কাহিনী বলা হয় যাদের স্কুলে গ্রীষ্মকালের ছুটি চলছে। প্রতিদিন তারা নিজেদের বাড়ির পিছনের উঠানে অদ্ভুত সব জিনিসপত্র বানায়, সেগুলো দিয়ে অদ্ভুত অদ্ভুত সব কাজ করে। এইসব কাজে তাদের সাথে থাকে তাদের স্কুলের কয়েকজন বন্ধু।
ফিনিয়াসের আপন বড় বোন হলো ক্যানডিস, যে প্রতিদিনই চেষ্টা করে তাদের বানানো এই জিনিসগুলো তাদের মাকে দেখিয়ে তাদের বকুনি খাওয়াতে কিন্তু প্রতিদিনই কোনোভাবে তাদের মা আসার আগেই জিনিসগুলো গায়েব হয়ে যায়!
এইখানে আরেক ধরনের ভূমিকা পালন করে বদ চরিত্রের পাগলাটে বিজ্ঞানী ড. হেইঞ্জ ডুফেন্সবার্গ আর সিক্রেট এজেন্ট পেরি দ্য প্ল্যাটিপাস। তাদের উদ্ভট লড়াইয়ের কারণেই মূলত ফিনিয়াস আর ফার্বের কাজগুলো গায়েব হয়ে যায়!
এই কার্টুনে সবচাইতে অদ্ভুত বিষয় হলো, তারা এতো কিছু বানালেও সময় মতোই সবকিছু গায়েব হয়ে যায় আর তাদের এইসব আবিষ্কারের কারণে কেউ কখনো আঘাতও পায়না, দুর্ঘটনাও ঘটেনা!
কন্সপিরেসি থিওরি বলে যে, ফিনিয়াস, ফার্ব আর তাদের বন্ধুরা সবাই মানসিক ভাবে অসুস্থ। ফিনিয়াসের বোন ক্যানডিসেরও একই সমস্যা। তারা যেখানে থাকে সেটা আসলে তাদের বাড়ি নয়। সেটা ছোট বাচ্চাদের চিকিৎসা কেন্দ্র।
ফিনিয়াস আর ফার্ব প্রতিদিন যেগুলো বানায় সেগুলো আসলে তারা বাচ্চাদের খেলনা দিয়েই বানায়, এজন্যই কেউ আঘাত পায়না। জিনিসগুলো সময়মতো হারিয়ে যায় কারণ ওখানে বাচ্চাদের খেলার একটা নির্দিষ্ট সময় আছে ওই সময়ের পরেই চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্মচারীরা সেগুলো নিয়ে যায়।
তাদের মা ওইখানে থাকেন না। ক্যানডিস তার মায়ের কাছে ফিরে যেতে চায় আর সেজন্যই সে কল্পনা করে যে প্রতিদিনই তার মা তাদের দেখতে আসছেন! ফার্বের বাবাকে পছন্দ করেনা ক্যানডিস তাই সে এটাও কল্পনা করে যে হয়তো ফার্বের বাবা ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে তার মাকে বিয়ে করেছেন। এই কথাগুলো যখন সে ফিনিয়াসকে বলে তখন ফিনিয়াস হাসিমুখেই সব মেনে নেয় আর ফার্বকে নিজের সৎ ভাই বলে পরিচয় দিতে থাকে! আসলে তারা সৎ ভাই না!
পেরি দ্য প্লাটিপাস হলো তাদের ওই চিকিৎসা কেন্দ্রের একটা কুকুর যাকে আদর করে কর্মচারীরা সবাই ‘প্লাটিপাস পেরি’ বলে ডাকে আর ডা. হেইঞ্জ ডুফেন্সবার্গ হলেন সেই চিকিৎসাকেন্দ্রের পরিচালক যাকে বাচ্চারা কেউ পছন্দ করেনা। এজন্যই তিনি কাহিনীগুলোতে খল চরিত্রে থাকেন।
আচ্ছা, সমুদ্রের নীচে একটা আনারসের মতো দেখতে বাড়িতে কি বসবাস করা সম্ভব? হ্যা আমি বলছি স্পাঞ্জববের কথা। স্পাঞ্জবব হলো ‘নিকোলোডিয়ন’ চ্যালেনের সবচাইতে জনপ্রিয় অ্যানিমেটেড শো ‘স্পাঞ্জবব স্কোয়ারপ্যান্টস’(SpongeBob SquarePants) এর প্রধান চরিত্র। ১৯৯৯ সালে শুরু হওয়া এই কার্টুনটি এখনো অনেক জনপ্রিয়।


সমুদ্রের নীচে ‘বিকিনি বটম’ নামে একটি জায়গায় স্পাঞ্জবব আর বন্ধুরা সবাই বসবাস করে। সেখানে তাদের জীবনে ঘটে যায় নানা রকমের মজার মজার ঘটনা। আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে যে এটি একটি নির্দোষ কমেডি অ্যানিমেটেড শো।
কিন্তু এইখানে অদ্ভুত কিছু ব্যাপার স্যাপার আছে। এইখানে আগুন জ্বালিয়ে রান্না করতে দেখা যায় চরিত্রগুলোকে কিন্তু পানি নীচে কিভাবে আগুন জ্বালানো সম্ভব? এইখানের কিছু চরিত্র সবসময় নেশাগ্রস্থের মতো আচরণ করে। আরেকটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো ‘স্যান্ডি’ নামে একটি মেয়ে কাঠবিড়ালী চরিত্র আছে এখানে, যে সবসময় স্পেসস্যুট পরে থাকে।
কন্সপিরেসি থিওরি বলে যে, স্যান্ডি বাদে এরা সবাই মিউট্যান্ট যাদের জন্ম একটি তেজক্রিয় রাসায়নিক পরীক্ষণের ফলে হয়েছিলো। স্যান্ডি ছিলো সেই পরীক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন বিজ্ঞানী তাই সে মাঝে মাঝেই তাদেরকে দেখতে চায়। তেজস্ক্রিয়তা থেকে বাঁচার জন্য সে স্পেসস্যুট পড়ে।
সত্য বলতে কি ‘বিকিনি অ্যাটল’ নামে একটি প্রবালদ্বীপ আছে যেখানে চল্লিশ আর পঞ্চাশের দশকের দিকে নানারকম পারমানবিক পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হতো। আর এই বিকিনি অ্যাটলের নীচের এলাকাকেই বলে বিকিনি বটম! তাই ব্যাপারটা আসলেই রহস্যময়।
এই ধরনের আরেকটি রহস্যময় টিভিশো ছিলো কার্টুন নেটওয়ার্কের ‘এড, এড এন এডি’(Ed, Edd n Eddy)। ১৯৯৯ সালে কার্টুন নেটওয়ার্ক এই কার্টুনটির সম্প্রচার শুরু করে।
তিন বন্ধু আর তাদের মজার কিছু বন্ধু-বান্ধব নিয়ে এইখানে কাহিনী এগিয়ে চলে। প্রতিটি এপিসোডেই দেখা যায় যে তারা অদ্ভুত সব কাজ করছে, যেসবের কোনো অর্থই নেই!
এই কার্টুনের সবচাইতে আজব ব্যাপারটা হলো পুরো কার্টুনে কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক চরিত্র নেই! এখানে সবাই কিশোর আর শিশু। সবার জিহবার রঙ নীল, আর এইখানে গ্রীষ্মকাল কখনো শেষ হয়না!
কন্সপিরেসি থিওরি বলে যে, তিনজন মূল চরিত্র এবং তাদের বন্ধুরা আসলে মৃত। তারা যে অদ্ভুত শহরে বাস করে সেটা আসলে নরকের একটা অংশ, যেখানে সবসময়ই গ্রীষ্মকাল থাকে। তাদের বয়স সেখানেই থেমে গেছে যে বয়সে তারা মারা গেছিল।
তাদের নীল জিহবার ব্যাপারটা? মানুষের জিহবা কিন্তু মারা যাওয়ার পর আস্তে আস্তে নীল হতে শুরু করে!


এখানকার সব চরিত্র আলাদা আলাদা সময়ে মারা গেছে। আর মারা যাওয়ার পরেই তারা এখানে এসেছে। কিন্তু মন থেকে কখনো তারা মেনে নেয়নি যে তারা আসলে মারা গেছে। এজন্যই তারা সবসময় আনন্দ-ফূর্তির মধ্যে থাকে যাতে করে বিষন্নতা না আসে। এজন্যই এখানের কোনো চরিত্রকেই বিষন্ন হতে দেখা যায় না!
বেন টেনিসন! বর্তমানের হাজার হাজার শিশু কিশোরের স্বপ্নের নায়ক। ২০০৫ সাল থেকে কার্টুন নেটওয়ার্কে শুরু হওয়া সিরিজ ‘বেন টেন’(Ben 10) এর প্রধান চরিত্র সে।
গ্রীষ্মের ছুটিতে দাদু আর চাচাতো বোন ‘গোয়েন’ এর সাথে ভ্রমণে বের হয়েছিলো সে। তারপর ঘটনাক্রমে সেই বিখ্যাত অমনিট্রিক্সটা পেয়ে গেলো যেটার সাহায্যে সে দশজন এলিয়েনের রূপ ধরতে পারে। ধীরে ধীরে সংখ্যাটা আরো বেড়ে যায় পরে যদিও।
বেন সব এলিয়েনকে পরাজিত করে, কেউই তার সামনে দাড়াতে পারেনা। এভাবেই শিশুদের সামনে বেন হয়ে উঠেছে একজন আদর্শ নায়ক।
কিন্তু আসলেই কি ব্যাপারটা এমন?
কন্সপিরেসি থিওরি বলে যে, বেনের দাদুর ভ্যান একটা মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয় যার ফলে মারাত্মক ভাবে আহত হয় বেন। সে কোমাতে চলে যায়, পরে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয় তাকে।
কোমাতে থাকাকালীন সময়ে বেন স্বপ্নের মধ্যে তার অভিযানগুলো কল্পনা করছে। বাস্তবে আসলে এসব কিছুই হয়না!
তো এই ছিলো বিখ্যাত কিছু কার্টুন নিয়ে প্রচলিত বিখ্যাত কিছু কন্সপিরেসি থিওরি। আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে এইসব কন্সপিরেসি থিওরিগুলো কেনো এসেছে? মানে কোন জিনিসটা মানুষকে এভাবে ভাবতে বাধ্য করে?


কার্টুন আর কমিক্স নিয়ে প্রচলিত কন্সপিরেসি থিওরিগুলোর প্রধান অনুপ্রেরনা হলো ১৮৬৫ সালে লুইস ক্যারোলের লেখা শিশুতোষ নভেল ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’।
নভেলের শেষে দেখা যায় যে অ্যালিসের ওয়ান্ডারল্যান্ডের উদ্ভট অভিযান শুধু একটা স্বপ্নই ছিলো, আর কিছুনা! এই জিনিসটা অনেককে ভাবায়। যে আপনি কোনো জিনিস যেভাবে ভাবছেন, ব্যাপারটা কি আসলেই তেমন?
আর লুইস ক্যারোল নামটি আসলে একটি ছদ্মনাম। এই বইয়ের আসল লেখক ছিলেন ইংরেজ গণিতবিদ চার্লস ডডসন। এই ভদ্রলোক এই নভেল দিয়ে আসলে কি বুঝাতে চেয়েছিলেন সেই নিয়ে হাজার হাজার থিওরি প্রচলিত আছে। সেগুলো নিয়ে বলতে আরো কয়েক হাজার পাতা লিখতে হবে।
যাইহোক, এই পৃথিবী আসলেই অনেক বেশী রহস্যময়। আমরা কোনো জিনিস যেভাবে দেখি, জিনিসটা আসলে কিন্তু তেমন নাও হতে পারে।
কন্সপিরেসি থিওরিগুলো আপনাকে ভাবায়। কিছু কিছু থিওরি কিন্তু আবার সত্যও হয়েছে!
পরবর্তী সময়ে যখন আপনার প্রিয় কার্টুনগুলো দেখবেন, তখন এই থিওরিগুলোই আপনাকে ভাবাবে।

(চমৎকার এই ফিচারটি তৈরি করেছেন লুতফুল কায়সার)

তথ্যসূত্র:-
১.http://flavorwire.com/411106/15-more-bizarre-kiddie-cartoon-conspiracy-theories
২.https://www.youtube.com/watch?v=KGrxItOEg6Y
৩.https://www.pinterest.com/explore/cartoon-theories/

About ahnafratul

লেখালেখি করতে ভালোবাসি। যখন যা সামনে পাই, চোখ বুলিয়ে নেই। চারদিকে তাকাই, উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। দুনিয়াটা খুব ছোট, তারচাইতেও অনেক ছোট আমাদের জীবন। নগদ যা পাই, হাত পেতেই নেয়া উচিত। তাই না?

Check Also

কথা বলবার সময় আমরা ‘অ্যা’, ‘উম’ এসব উচ্চারণ করি কেন?

কথা বলবার সময় আমরা অনেকেই মুখ দিয়ে ‘অ্যা’, ‘উম’ ইত্যাদি আওয়াজ নিঃসরণ করে থাকি। এর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *