একজন যোদ্ধা, জালিয়াত, খুনী ও ব্যাংক ডাকাত- যাকে শুধুমাত্র তার মা’ই প্রাণভরে ভালোবাসতে পারে। তার নাম জেসি জেমস। রবার্ট ও জেরেল্ডা জেমস এর দ্বিতীয় সন্তান। জন্ম সেপ্টেম্বর ৫, ১৮৪৭ সালে, মিসৌরির ক্লে কাউন্টিতে। একজন মা হিসেবে জেরেল্ডার হাত পূর্ণ ছিল জেসি, তার বড় ভাই ফ্রাঙ্ক ও অন্যান্য সন্তানদের নিয়ে। গল্পটি একজন মা’কে ঘিরে, তার ভালোবাসাকে ঘিরে, যে বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে মা চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন কবরে।
১৮৬১ সালে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন গৃহযুদ্ধের দামাম বেজে উঠে, তখন জেসি তার বড় ভাই ফ্র্যাঙ্ক কে গৃহযুদ্ধে যোগ দিতে দেখতে পান। ১৮৬৪ সালে, কিশোর বয়সে, জেসি নিজেই কনফেডারেট গেরিলাদের সাথে যোগদানের জন্য যাত্রা করেন।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, জেসি ও ফ্রাঙ্ক আধুনিক যুগের-রবিন হুড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ট্রেন, ব্যাংক এবং স্টেজ কোচ লুট করা শুরু করে এবং ধীরে ধীরে তারা অপরাধের অন্ধকার জগতে হারিয়ে যান। কথায় রয়েছে,- ’পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না।’ ঠিক এমন কিছুই লেখা ছিল জামস ভাইদের ভাগ্যেও। জেমস ভাইদের অপরাধের কর্মফল শোধ করে তাদের প্রিয় মা, জেরেল্ডা। কোন এক দল অজ্ঞাতের হাতে তিনি ‘পা’ ও ‘হাতে’ আঘাত প্রাপ্ত হন। ফলাফল আক্ষরিক অর্থে জেরেল্ডার এক ’হাত’ ও এক ‘পা’ প্রায় অকেজো হয়ে যায়।
হাত হারিয়ে জেমস ভাইদের অপকর্মের মূল্য দিলেন প্রিয় ‘মা’
ওয়াইল্ড ওয়েস্ট বাউন্টি হান্টার (মানব শিকারি), পিঙ্কার্টন ডিটেকটিভ এজেন্সি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ট্রেন ডাকাতির দায়ে অভিযুক্ত রেণো গ্যাং এ অনুপ্রবেশ ও বুচ ক্যাসিডিকে ধাওয়া করে বিখ্যাত হয়েছিলো। কিন্তু ১৮৭০-এর দশকে তাদেরকে জেসি ও ফ্রাঙ্ককে খোঁজার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। আর শুরু হয় পিঙ্কারটন এজেন্সীর দূর্ভাগ্য- কারণ এই ধর পাকড় এমন ঘটনার জন্ম দেয় যে পিঙ্কারটন এজেন্সি র কর্ম পন্থা জনমনে ক্ষোভের জন্ম দেয়।
১৮৭৫ সালে এই জেমস ভাইদের বিপরীতে পিঙ্কার্টন এজেন্সির মানব শিকার অভিযান মারাত্মক পরিণতি বরণ করে। পিঙ্কার্টন এজেন্সি জেমস ভাইদের সন্ধানে জেরেল্ডা জেমস এর ‘ক্লে কাউন্টি হোমে অভিযান চালায়। পূর্বেই পিঙ্কার্টন এজেন্সির অভিযানের খবর জেমস ভাইদের কাছে পূর্বেই পৌঁছে যায়। জেমস ভাইরা পালিয়ে গেলেও পিছনে রয়ে যান জেরেল্ডা। পিঙ্কার্টন এজেন্সির এবং জেরেল্ডা জেমস এর মাঝে হয় মুখোমুখি সংঘাত। চলে তীব্র গুলি বিনিময় , পরক্ষনেই একটি দাহ্য বস্তু নিক্ষেপ করা হয় জেমস ভাইয়ের আবাসস্থলে। মুহূর্তে বিস্ফোরণে ধ্বসে পরে বাড়ির একাংশ। এই ঘটনায় জেমস ভাইদের প্রিয় মা’র একটি হাত মারাত্মক ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয়। পরবর্তীতে জেরেল্ডা জেমস এর জীবন রক্ষার্থে হাতটি কেটে ফেলতে হয়। একই ঘটনায় জেমস ভ্রাতৃদ্বয়ের ছোট ভাইও নিহত হয়।
জনসমর্থন দ্রুত পিঙ্কার্টন এজেন্সির বিপক্ষে অবস্থান নেয়। ফলশ্রুতিতে জেমস গ্যাং এর বিরুদ্ধে ঘোষিত যুদ্ধ তড়িঘড়ি স্থগিত করা হয়।
ভালোবাসার স্মৃতিতে
পরবর্তী সময়ে জেসি জেমস আরও সাত বছর কর্তৃপক্ষের চোখে ধূলো দিয়ে পালিয়ে বেড়ান। অবশেষে ১৮৮২ সালে জেসি জেমস আততায়ীর হাতে নিহত হন। কিন্তু,জেসি ও ফ্রাঙ্ক যেমন তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে ও সম্পদ অর্জনে লুণ্ঠন ও চুরির মতো অপরাধের আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের মৃত্যুর পর তাদের মা’ও জানতেন তাদের নামে কীভাবে দ্রুত টাকা আয় করা যায়।
জেসির কবর দেয়ার পরই, জেরেল্ডা তাদের বাড়ি দর্শনার্থীদের উন্মুক্ত করে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে।দর্শনার্থীরা টিকিট কেটে শুরু জেমস ভাইদের জন্মস্থান দেখানো হতো, এমনকি স্যুভেনির বিক্রিরও বন্দবস্ত ছিল। ২৫ সেন্টের বিনিময়ে, দর্শকরা সামনে বাগানে জেসির কবর থেকে একটি নুড়ি পাথর স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে কিনতে পারতো। যখন নুড়ি পাথরের সংখ্যা কমে যেতো, তখন জেরেল্ডা কাছাকাছি ক্রিক (ছোট লেক) থেকে নুড়ি পাথর পুনরায় এনে বিছিয়ে দিতেন।
জেসি জেমসের সমাধি ফলকে খোদাই করা লাইন সমূহ :
” আমার প্রিয় পুত্রের ভালোবাসা ও স্মৃতির প্রতি, যাকে একজন বিশ্বাসঘাতক
এবং কাপুরুষের হাতে খুন করানো হয়- যার নাম উচ্চারণ যোগ্য নয়।”
আদি বাসস্থানে অবস্থিত কবরে জেসি জেমসের দেহাবশেষ এর অস্তিত্ব এখন আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ বহু পূর্বেই জেসি জেমসের দেহাবশেষ ১৯০২ সালে মিসৌরির কেয়ার্ন এর মাউন্ট অলিভেট সেমেটারিতে স্থানান্তর করা হয়। কিন্ত আজও ক্লে কাউন্টি কর্তৃপক্ষ জেমস পরিবারের পারিবারিক বাড়িটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রেখেছে। এখনো দর্শনার্থীরা চাইলে $ ৬.৫০ ডলারের বিনিময়ে জেসি জেমসের খামার ও তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে সংরক্ষিত যাদুঘর ঘুরে দেখতে পারেন। চাইলে আজও স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে কিনতে ২৫ সেন্টের বিনিময়ে একটি নুড়ি পাথর।
আজ এই পর্যন্তই খুব দ্রুতই আবার আমরা ফিরবো পশ্চিমের রুক্ষ মরু প্রান্তরে ভেসে বেড়ানো অন্য কোন সত্য ঘটনা নিয়ে, ততদিন ‘প্রিয়লেখার’ সাথেই থাকুন।