খবরটি শুনলে আপনার মাথা একটু ঘুরে যেতে পারে। ভূতে পাওয়া মানুষকে নিরাময় করবার জন্য রোমান ক্যাথোলিক চার্চের কর্তাব্যক্তিরা ১ সপ্তাহের একটি কোর্স চালু করেছেন। সারাবিশ্বের ক্যাথোলিক প্রিস্টরা ছুটে যাচ্ছেন রোমে, যাতে করে কীভাবে শয়তান তাড়াতে হয় তার ওপর মূল্যবান টিপস এবং কৌশল গ্রহণ করতে পারেন।
‘এক্সরসিজম এন্ড প্রেয়ার অব লিবারেশন’ শীর্ষক এই কোর্সটি চালু করেছে পন্টিফিকাল অ্যাথেনিয়াম রেজিনা অ্যাপোস্টোলোরাম নামক একটি ক্যাথোলিক এডুকেশনাল ইন্সটিটিউট। কোর্সটি চালু হবার পর এটি ত্রয়োদশ বছরে পড়ল। এটির সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা করছে গ্রুপ ফর সোশিও-রিলিজিয়াস রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (GRIS)। রয়টার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী ক্যাথোলিক প্রিস্ট বা যাজকসহ মোট ২০০ জন মানুষ এখানে অংশগ্রহণ করেছেন।
গত এপ্রিলের ১৬ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত এক্সরসিস্টদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এসম্পর্কে। কারো বাড়িতে ডেমোনিক পজেশন (শইয়তানের উপদ্রব) হলে কিংবা নানাধরনের সমস্যার কারণে মানসিক কোনো সমস্যা দেখা দিলে কী করণীয় হবে, তা সম্পর্কে নানা ধরনের টোটকা দেয়া হয়েছে এই সেমিনারে। এছাড়াও কোর্সের আউটলাইনে একজন এক্সরসিস্ট আইনত কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন, তা সম্পর্কেও বিস্তারিত বলা আছে।
চলচ্চিত্র কিংবা বইতে আমরা সাধারণত পড়েছি যে কোনো বাড়িতে এধরনের উপদ্রব হলে হোলি ওয়াটার ছিটানো হয়ে থাকে, পবিত্র বাইবেল থেকে কিছু চরণ উদ্ধৃত করা হয়ে থাকে। তবে এই সেমিনারে নতুন একটি অস্ত্রের কথা বলা হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর এক্সরসিস্টরা দূরে থাকবেন, তা কী করে সম্ভব? নতুন এই অস্ত্রের নাম হচ্ছে সেলফোন। সেলফোনের সাহায্যে এবার বাড়ি থেকে কিংবা অন্যান্য সমস্যার সমাধান হিসেবে ভূত তাড়ানো হবে। রয়টার্সের জানানো তথ্যমতে জানা গিয়েছে যে কোর্সের প্রথম দিকেই কার্ডিনাল আর্নেস্ট সিমোনি লাতিন ভাষায় এক্সরসিজমের কিছু চরণ পড়ে শোনান এবং বলেন যে, “তারা আমাদের ফোন করে সমস্যার কথা বলে এবং সে অনুযায়ীই আমরা কাজ করি।” সিমোনি এসেছেন আলবেনিয়া থেকে।
শয়তান তাড়াবার এই যান্ত্রিক প্রযুক্তি একবিংশ শতাব্দীর একটি নতুন সংযোজন এবং এটি চালু করা হয়েছে গত বছর। ভ্যাটিকান সিটির অনুমতিক্রমে দ্য ইউনাইটেড স্টেটস কনফারেন্স অফ ক্যাথোলিক বিশপস লাতিন ভাষায় এক্সরসিজম করার যে চরণগুলো ছিল, সেগুলো ইংরেজীতে অনুবাদ করেছেন। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে ক্যাথোলিক হেরাল্ড নামক একটি বার্তা সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয় যে এবার ক্যাথোলিক এক্সরসিস্টদের জন্য একজন প্রিস্ট খুঁজে পাওয়া কোনো সমস্যা হবার কথা নয়। কারণ, সকলেই এই যুগে ইংরেজী জানেন এবং সে অনুযায়ী কাজে সাহায্য করতে পারবেন।
ফাদার অ্যান্ড্রু মেনকে বলেন, “বর্তমানে মানুষের উপকার করবার যে দুয়ারটি রয়েছে, তার সাথে সাথে আরও কিছু দুয়ার খুলে গেল। ভাষার সাথে সাথে মানুষের সমস্যাও এখন হয়ে গিয়েছে বৈশ্বিক এবং সে অনুযায়ী আমরা এখন আরও বেশি সাহায্য সহযোগিতা পাব।” ফাদার মেনকে সেক্রেটারিয়েট অব ডিভাইন ওরশীপের একজন এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর।
অন্যান্য সেশনে যেসব কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তা হলো- দ্য অক্সিলিয়ারি এক্সরসিস্টঃ রিকুয়ারমেন্ট অ্যান্ড টাস্কস (প্রয়োজনীয় এবং সমাধানের জন্য কর্ম); সিম্বোলিজম ইন ম্যাজিকাল-অকালিস্ট অ্যান্ড স্যাটানিক রিচুয়ালস; ডিসসার্নিং দ্য এক্সট্রাঅর্ডিনারি অ্যাকশনস অব দ্য ডেভিল। সেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় মিনিস্ট্রি অব এক্সরসিজমের একটি গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে।
শুধুমাত্র ইতালিতেই প্রতি বছর প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ এক্সরসিজমের সাহায্য কামনা করে থাকে। বিবিসির একটি সূত্রমতে জানা যায় যে বর্তমান পৃথিবীতে এক্সরসিজমের প্রয়োজনীয়তা দিনকে দিন বাড়ছেই। তবে মানসিক সমস্যা এবং শারীরিক অবনতির কারণে বিচিত্র ধরনের ব্যবহারকেও অনেকে ডেমোনিক পজেশনের সাথে মিলিয়ে ফেলেন। ২০১৪ সালের একটি জার্নালে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী এটি পাওয়া যায়।
তবে কেবলমাত্র কোর্স করলেই যে আপনি শয়তানের বিরুদ্ধে লড়তে পারবেন, তা কিন্তু একেবারেই নয়। এই সেশনে যারা অংশ নিয়েছেন, তারা সার্টিফিকেট অবশ্যই পাবেন কিন্তু তারমানে এই নয় যে বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকেই ফোন এলে তারা ছুটে যেতে পারবেন ভূত তাড়ানোর কাজে। লাইসেন্সধারী প্রিস্ট এবং বিশপের কাছ থেকে যারা বিশেষ অনুমতি পেয়েছেন, কেবলমাত্র তারাই এই কাজটি করতে পারবেন। রয়টার্সকে তথ্যটি দিয়েছেন কোর্স অর্গানাইজার এবং গ্রিজ লিডার গুইসেপ ফেরারি।
একইসাথে সিমোনি এও যোগ করেন যে এক্সরসিজম কেবলমাত্র তখনই করা যাবে যখন মেডিকেলবিদ্যানুযায়ী ডাক্তার রোগীর কোনো চিকিৎসা করতে পারবেন না বা রোগীর মানসিক সমস্যার সাথে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার যদি কোনো ধরনের সুরাহা না পাওয়া যায়, কেবলমাত্র তখনই এক্সরসিজম করা যাবে।
(তথ্যসূত্রঃ লাইভ সাইন্স)