যখন যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে, প্রিয়জনদের কাছ থেকে রণসাজে প্রস্তুত হয় সৈনিক, তখন একটাই চাওয়া থাকে- ভালোয় ভালোয় সে যেন বাড়ি ফিরে আসে। তারপরও যেটা চাইবার না, সেটাই ঘটে যায় মানুষের জীবনে। যুদ্ধক্ষেত্রে কেউ আহত হলে সকলের মনে একটাই চিন্তা থাকে। আর তা হচ্ছে, কত তাড়াতাড়ি মানুষটি সুস্থ হয়ে ফিরতে পারে কিংবা কত তাড়াতাড়ি নিজের স্বাস্থ্য উদ্ধার করতে পারে। ডাক্তার কত জলদি আহতদের সেবা দিতে পারেন সেটাও দেখবার বিষয়। কারণ, জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে যুঝতে থাকা মানুষগুলোর সাথে খারাপ কিছু ঘটে গেলে তা কারোই কাম্য নয়।
বিজ্ঞানীরা এটাই এখন চেষ্টা করে দেখছেন যে আক্রান্ত আহত এই সৈনিকদের যুদ্ধক্ষেত্রে কিছুটা অতিরিক্ত সময় কীভাবে দেয়া যায়। তবে এই প্রক্রিয়াটি তারা মেডিকেল টিমের কোনো সাহায্যে নয়, বরং অন্য কোনো উপায়ে করা যায় কি না,বিশেষ করে কোনো নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা নিয়ে ভাবছেন। এই লক্ষ্যে তারা সাহায্য নিচ্ছেন “টারডিগ্রেড” নামক একটি ছোট্ট জীবের।
ডিফেন্স এডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি (সংক্ষেপে –ডারপা) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সেনাসংস্থার লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটি অবস্থানে আসা যার মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈনিকদের জৈবরাসায়নিক যত বিক্রিয়া রয়েছে, সেগুলোকে আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় বা শ্লথ করে দেয়া। কোনো কারণে যদি সাহায্যের জন্য মেডিকেল টিম আসতে দেরি হয়, তাহলে দেখা যায় যে সৈনিকদের প্রাণ বিপন্ন হয়ে পড়ে। সেটি রোধ করবার জন্যই নতুন একটি পরিকল্পনা সাজিয়েছে ডারপা। এক কথায় বলতে গেলে, “জীবন বাঁচাতে জীবনের গতি শ্লথ”- এই মূলমন্ত্র নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ডারপা। এই প্রোগ্রামটির নাম তারা দিয়েছে বায়োস্ট্যাটিস।
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মনে হলেও ঘটনাটি আসলেও সত্য। পৃথিবীতে এমন অনেক মাইক্রো অর্গ্যানিজম রয়েছে যেগুলো প্রতিকূল পরিবেশে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে টারডিগ্রেডের কথা। আণুবীক্ষণিক এই জীবাণুরা ‘জলের ভল্লুক’ বা ওয়াটার বিয়ার হিসেবে পরিচিত। ঠান্ডায় জমে যাওয়া, পানিশূন্যতা, প্রখর সৌরতাপ কিংবা বেগুনিরশ্মি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। ‘ক্রিপ্টোবায়োসিস’ নামক এমন একটি অবস্থায় তারা নিজেদের নিয়ে যেতে পারে যেখানে তাদের শরীরের মেটাবলিজম প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু কোষের কার্যাবলী চালু থাকে।
‘প্রকৃতি হচ্ছে প্রেরণার উৎস’- এটিই হচ্ছে এই প্রজেক্টের মূলতন্ত্র। বায়োস্ট্যাটিস প্রোগ্রামের ম্যানেজার ট্রিস্টান ম্যাক্লার বেগলি তার দেয়া একটি বক্তব্যে এই কথা বলেন।
“আণবিক স্তর থেকে চিন্তা করতে গেলে জীবন হচ্ছে চলমান জৈবরাসায়নিক বিক্রিয়”- এটিও সংযুক্ত করেন তিনি তার বক্তব্যে।
তবে মেডিকেল ব্যবস্থাকে টেক্কা দিতে হলে এই কাজ করবার জন্য বিজ্ঞানকে যেতে হবে আরো বহুদূর। প্রথমে বিজ্ঞানীদের এটি পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে তারা যা চাইছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে আসলেই এটি করা সম্ভব হয়ে উঠবে কি না। আর যদি সম্ভব হয়ে ওঠে, তাহলে এটি কতটকু সময়ের মাঝে করতে হবে। যদি সৈনিকের অবস্থা গুরুতর থাকে এবং সময়মতো যদি প্রযুক্তির সাহায্য নেয়া না যায়, তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই বিপন্ন হয়ে উঠতে পারে তার প্রাণ। সেক্ষেত্রে হিতে হয়তোবা বিপরীতই ঘটে যেতে পারে। বিজ্ঞানীদের চিন্তায় আরো একটি নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে। আর তা হচ্ছে, রক্তকণিকাগুলোর মাঝে যদি কোনো কারণে অসামঞ্জস্য ঘটে যায় কিংবা যদি কোনো কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে সেক্ষেত্রেও হয়ত এই প্রযুক্তির সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
এখন দেখাই যাক, অদূর ভবিষ্যতে ঠিক কী ধরনের অগ্রগতি নিয়ে আসতে পারে এই নতুন প্রযুক্তি !