বিজ্ঞানের দারুণ উৎকর্ষের এই যুগে নাকি সমাজ থেকে দূর হচ্ছে কুসংস্কার। কিসের কি, ক্রিকেট দুনিয়ায় এখনো বহাল তবিয়তে বিদ্যমান আছে অসংখ্য কুসংস্কার। সেরকম ক্রিকেটের বিখ্যাত কিছু কুসংস্কার এর মধ্য থেকে বিখ্যাত কিছু কুসংস্কারের কথা আজ থাকছে প্রিয়লেখার পাতায়।
ক্রিকেটের বিখ্যাত কিছু কুসংস্কার
- ক্রিকেট খেলা মোটামুটি দেখেছেন আর ডেভিড শেফার্ডকে চেনেন না, এমনটা বোধহয় সম্ভব না। তা শেফার্ডকে দেখে থাকলে আরও একটা জিনিস আপনার দেখে থাকার কথা। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় ১১১, ২২২, ৩৩৩ এরকম স্কোরকে বলা হয় নেলসন। যখনই কোন দলের স্কোর ১১১ বা ২২২ বা ৩৩৩ এরকম হত, আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করা শেফার্ড মাটি থেকে এক পা তুলে দাঁড়িয়ে থাকতেন কিছুক্ষণ! এরকমই এক মজার দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়া ও সাউথ আফ্রিকার মধ্যকার এক ম্যাচে। সেই ম্যাচে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করছিলেন শেফার্ড। তারিখটি ছিল নভেম্বরের ১১, সময় তখন সকাল ১১.১১। ম্যাচ জিততে সাউথ আফ্রিকার দরকার ১১১ রান। স্কোরবোর্ডের দৃশ্যটা তখন এরকম দেখাচ্ছিল- ১১.১১, ১১/১১/১১, ১১১ রান দরকার জয়ের জন্য!
- দিল্লীতে পাকিস্তানের বিপক্ষে অনিল কুম্বলের ইনিংসে ১০ উইকেট পাওয়ার ঘটনা সবাই জানেন। কিন্তু একটা জিনিস কি খেয়াল করেছিলেন খেলা দেখার সময়? সাধারণত বল করতে যাওয়ার আগে ক্যাপ ও সোয়েটার খুলে বোলার নিজে হাতে আম্পায়ারের কাছে দেন। কিন্তু ওই ইনিংসে কুম্বলের ক্যাপ ও সোয়েটার কখনো কখনো আম্পায়ারের কাছে পৌঁছে দিচ্ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। এবং আশ্চর্যজনকভাবে, যেই যেই ওভারে শচীন এই কাজ করেছেন, সেই সেই ওভারেই কুম্বলে উইকেট পেয়েছেন!
- ইংলিশ ব্যাটসম্যান মাইক আথারটন যদি কখনো দিনের খেলা শেষে অপরাজিত থাকতেন, তাহলে তিনি ওইদিন প্রেস কনফারেন্সেও আসতেন না, বা কোন সাক্ষাৎকারও দিতেন না। তার ‘বিশ্বাস’ ছিল, সাক্ষাৎকার দিলে তিনি পরের দিন দুর্ভাগ্যের শিকার হবেন!
- লাসিথ মালিঙ্গাকে প্রতি বলের আগে বলে চুমু খেতে তো নিশ্চয়ই দেখেছেন। মালিঙ্গার পূর্বসূরি রোশান মহানামা ছিলেন আরেক কাঠি উপরে। স্টান্স নিয়ে দাঁড়ানোর পর প্রতি বলের আগেই ব্যাট উঁচু করে ব্যাটের হাতলে চুমু খেতেন!
- অস্ট্রেলিয়ার সর্বজয়ী অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ তার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় পকেটে একটি গোলাপি রুমাল নিয়ে খেলতে নামতেন। রুমালটি তার দাদার দেয়া ছিল, এবং ওয়াহ এটিকে সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করতেন।
- নিল ম্যাকেঞ্জির কুসংস্কার ‘টাই বোধহয় সবচেয়ে অদ্ভুত। প্রতিবার ব্যাট করতে যাওয়ার আগে তিনি টয়লেটে যেতেন, তবে নিজে টয়লেট করার উদ্দেশ্যে না। টয়লেটে গিয়ে কমোডের ঢাকনা নিচে নামাতেন, তারপর ফ্লাশ করে বেরিয়ে আসতেন! ম্যাকেঞ্জির কুসংস্কারের মাত্রা এতটাই ছিল, তখন যদি বাথরুমে কেউ থাকত, তাকে জোর করে বাথরুম থেকে বের করে এই কাজ সম্পন্ন করে তারপর ব্যাট করতে নামতেন!
- আধুনিক ব্যাটিংয়ের শেষ কথা যিনি, সেই শচীন টেন্ডুলকারও তার ক্যারিয়ারজুড়েই একটা কুসংস্কার মেনে এসেছেন, প্যাড পরার সময় প্রতিবার বাম পায়ের প্যাডই আগে পরতেন তিনি। কখনোই এই নিয়মের ব্যত্যয় করেননি শচীন। আগে বাম পায়ের প্যাড পরাকে নিজের জন্য সৌভাগ্যজনক বলে মানতেন শচীন।
- বোলার প্রতিটি বল করতে আসার আগে নিজের হেলমেটটা একবার ঠিক করতেন সনাথ জয়াসুরিয়া, এরপর প্যাডে গ্লাভস দিয়ে একটা করে টোকাও দিতেন।
- শচীনের সাথে কিছুটা মিল আছে কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তেরও। তিনিও সবসময় বাম পায়ের প্যাড আগে পরতেন। তবে এর সাথে আরও কিছুও ছিল। প্যাড পরার সময় সবসময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকতেন তিনি। আর ব্যাট করতে নামার সময় সর্বদা তার ওপেনিং সঙ্গী সুনীল গাভাস্কারের ডান পাশে থাকতেন।
- যুবরাজ সিংয়ের জন্মদিন ১২ ডিসেম্বর, আর ১২ সংখ্যাটিকে নিজের জন্য সৌভাগ্যজনক মনে করেন যুবি। তাই জার্সি নম্বরও ১২ রাখেন তিনি। মহেন্দ্র সিং ধোনিও নিজের জন্মতারিখ ৭ জুলাই এর সাথে মিলিয়ে জার্সি নাম্বার রেখেছেন ৭।
- মাঠে নামার সময় সবসময় পকেটে নিজের গুরুদেবের ছবি রাখতেন কলকাতার মহারাজা সৌরভ গাঙ্গুলী । শুধু তাই নয়, সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে আংটি ও মালাও পরতেন দাদা।
- ব্যাট করতে নামার আগে সবসময় ডান পায়ের থাই প্যাডটা সবার আগে পরতেন রাহুল দ্রাবিড়। দ্রাবিড়ের আরও একটা নিয়ম ছিল, কোন সিরিজের আগে কখনোই তিনি নতুন কোন ব্যাট নিয়ে খেলতে নামতেন না।
আরো জানতে পড়ুন
যেই দিনে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি দেখেছিল ওয়ানডে ক্রিকেট