হাইগ্রাউন্ড হচ্ছে এমন একটি ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম, যেটির কাজ হচ্ছে কর্মীদের নিয়োগ ও তাদেরকে কাজের মাঝে নিয়োজিত করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা। এছাড়াও এটি বিভিন্ন ধরণের সফটওয়্যার সল্যুশন দেয়া যার মাধ্যমে কর্মীরা কেমন করে আরো নিজেদেরকে দক্ষ করে তুলতে পারে, তার সমাধান দিয়ে থাকে।
হাইগ্রাউন্ডের সিইও বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হচ্ছেন অ্যান্ডি হ্যারিস। কর্মীদের কেমন করে আরো দক্ষ করে গড়ে তোলা যায় এবং তাদের মাঝে নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায়, তা নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। নিচে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলোঃ
টেকনিউজওয়ার্ল্ডঃ হাইগ্রাউন্ডের মিশন সম্পর্কে কিছু বলুন।
অ্যান্ডি হ্যারিসঃ আমাদের মিশন হচ্ছে কাজের প্রতি কর্মীদের আরো নিয়োজিত করা এবং সেরাটা বের করে আনা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাজের সাথে ভালোভাবে পরিচিত করে তোলা এবং তারা যাতে কর্মক্ষেত্রে সন্তুষ্ট থাকে, তা নিশ্চিত করা।
টেকনিউজঃ হিউম্যান ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট বলতে কী বোঝাচ্ছেন? এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
অ্যান্ডিঃ হিউম্যান ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট হচ্ছে এমন একটি ভাবনা, যার মাধ্যমে মানুষকে আমরা এক ধরণের পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করছি। তাদেরকে বোঝাচ্ছি যে সুপ্ত প্রতিভাগুলোকে কেমন করে বিকশিত করা যায়, কাজের মাধ্যমে কীভাবে আরো পরিশীলিত করা যায়। মানব সম্পদের যে ধরণের ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনা রয়েছে, তা নিয়েই আমাদের কাজ।
টেকনিউজঃ হিউম্যান ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে আপনার আগ্রহ কীভাবে সৃষ্টি হলো?
অ্যান্ডিঃ প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে আপনি অনেক ঘন্টা ব্যয় করছেন কিন্তু নিজের সেরাটা বের করে আনতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রে এটা খুবই লজ্জাজনক এবং হতাশার। বর্তমানের প্রেক্ষাপটে আমরা কর্মীদের থেকে সেরা কাজটিই চাই। এমন একটা পরিবেশ তারা আশা করে যেখানে কাজ করে মজা এবং কাজের প্রতি আরো ভালোভাবে নিয়োজিতও থাকা যায়। কার জন্য কাজ করছেন সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি আপনার কাজের তদারকি কে করছেন সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। এই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
টেকনিউজঃ হিউম্যান ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট এবং প্রযুক্তির মাঝে মেলবন্ধনটা কোথায়?
অ্যান্ডিঃ সামাজিক পরিচয় প্রাপ্তিটাই হচ্ছে আমাদের প্রধান লক্ষ্য। প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষকে আপনি শুভেচ্ছা জানাতে পারবেন, কার্ড প্রেরণ করতে পারবেন। দ্বিতীয় দিকটা হচ্ছে, সবকিছুই মূলত শেখানো হয়ে থাকে হাতেকলমে, পরীক্ষণের মাধ্যমে। মানুষকে মতামত জানানো এবং ভুলত্রুটিগুলো শুধরে দিয়ে ভালোভাবে শেখানোও যেতে পারে।
টেকনিউজঃ হিউম্যান ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টে ডাটা সাইন্সের ভূমিকাটা কোথায়?
অ্যান্ডিঃ ডাটা হচ্ছে মূলত সংখ্যা, যা কখনো আপনি এড়িয়ে যেতে পারবেন না। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ, যেখানে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজাররা বুঝতে পারবেন কোথাও কোনো গলদ হচ্ছে কিনা এবং দক্ষতা কীভাবে আরো বেশি করে বৃদ্ধি করা যায়।
টেকনিউজঃ এই খাতের পরিবর্তন কীভাবে হচ্ছে? এর ভবিষ্যত কী?
অ্যান্ডিঃ আমার তো মনে হয় এটা অনেক মানুষের ওপর চোখ রাখতে সাহায্য করছে। মানব সম্পদের যে আদিম ধ্যান ধারণা তা সম্পর্কে আরো গঠনমূলক আকৃতি প্রদান করছে এটি। বিভিন্ন অ্যাপের সাহায্যে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করছে। তাদের ভোক্তা জীবন ও কাজের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করছে।
আমাদের অর্থনীতির খাতটা বেশ বড়। প্রযুক্তির সাহায্যে অনেক মানুষকে একত্রিত করতে পারছি। তারা কী চিন্তা করছে, কোন লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে সবকিছুই এখন চোখের সামনে। কর্মক্ষেত্র কেমন করে এগোচ্ছে, পরিবেশ কীভাবে পরিবর্তন হচ্ছে, তা বুঝতে হলে মেলবন্ধনটা খুব জরুরী।
টেকনিউজঃ প্রযুক্তি খাতে একজন নারী হবার কারণে কোন ধরনের বাঁধা পাচ্ছেন?
অ্যান্ডিঃ মাইক্রো-অ্যাগ্রেশন হচ্ছে সবচেয়ে বড় সমস্যা। এটা নিয়ে মানুষ কথা বলতে চায় না। যেহেতু আপনি একজন নারী, তাই তারা ধারণাই করে বসে যে প্রযুক্তি সম্পর্কে কোনো ধারণা নারীদের নেই। তারা প্রযুক্তিগত দিক থেকে দুর্বল, ধারণাহীন, ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা কম, এসবকিছু ভেবে নিয়েই এই খাতগুলো চলছে। পুরুষশাসিত একটা সমাজ হলে যা হয় আর কী!
টেকনিউজঃ নারীদের জন্য নিরাপদ ও আরামদায়ক পরিবেশ কী করে গড়ে উঠতে পারে? যৌন নিপীরণমূলক নানা কর্মকান্ড নতুন নতুন আঙ্গিকে এই প্রযুক্তিগত খাতে দেখা যাচ্ছে। সেগুলো কেমন করে মোকাবিলা করা যায়?
অ্যান্ডিঃ প্রশিক্ষণ খুব বড় একটা অংশ, তবে আচার আচরণ পরিবর্তন হওয়াটা খুব বেশি জরুরী। যা ঘটছে, তা কী করে ঠিক করা যায়, সে সম্পর্কিত জ্ঞানও থাকতে হবে। হাইগ্রাউন্ড মূলত প্রশিক্ষণ প্রদানকারী নেতাদের দিকেই বেশি মনোযোগ প্রদান করে, যার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায় যে আমরা মানুষের ভালো ফিডব্যাক পাচ্ছি।
এমন একটা পরিবেশ তৈরি করবার চেষ্টা করছি যেটি বিভিন্ন আঙ্গিকে গঠিত। আমাদের নারী প্রকৌশলী রয়েছে। ভিন্ন মাত্রার নেতার অধীনে যাতে কাজ করতে হয়, সেটি নিশ্চিত করি আমরা। নানা ধরণের সমস্যা হলে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা এবং কীভাবে তার সমাধান করা যায়, সেগুলো নিয়েও আলোচনা করি আমরা।
টেকনিউজঃ প্রযুক্তি খাতে যেসব নারীরা কাজ করতে আসছেন, তাদের সম্পর্কে আপনার পরামর্শ কী হবে?
অ্যান্ডিঃ প্রযুক্তি খাতে আসতে হলে এ সম্পর্কিত জ্ঞানই থাকতে হবে, মানুষ এমনটাই ভেবে নেয়। প্রযুক্তির নানা বিষয়ে জ্ঞান না থাকার কারণে নারীরা এখানে আসতে লজ্জা পায়। তাদেরকে বুঝতে হবে যে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তিগত কাজ ছাড়াও আরো নানা ধরণের কাজ রয়েছে। অন্যদিক হচ্ছে, এমন একটি দল খুঁজে বার করতে হবে যেটির মাঝে একজন নারী সদস্য রয়েছেন এবং দলটি বিভিন্ন মাত্রিক। একজন পরামর্শদাতা খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ যিনি নানা দিক নিয়ে আপনাকে সাহায্য করতে পারবেন।
নারী হিসেবে আমাদের কেউ ভালো পরামর্শ দেয় না কর্মক্ষেত্রের বিচারে। কোন ধরণের মানুষকে আপনি চান, তারা কী করতে পারে, সক্ষমতা কী, এসব বিচার করেই সবকিছু দেখতে হবে। যোগাযোগের মাধ্যমে প্রশমিত করবার ব্যাপারটাও বেশ জরুরী। মানুষকে ধরে নেই যে তারা মন পড়তে জানে। আদতেই ব্যাপারটা তা নয়।
(সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছে টেকনিউজওয়ার্ল্ড)