অল্প হলেও মুভি দেখেন, কিন্তু সেই অল্প মুভির লিস্টে টাইটানিক নামটা নেই, এমনটা একপ্রকার অসম্ভব। জেমস ক্যামেরনের কালজয়ী এই সৃষ্টির স্বাদ একবার হলেও নেননি এমন মুভি লাভার পাওয়া দুষ্কর। বারবার দেখতে দেখতে সব সংলাপ থেকে শুরু করে সিকোয়েন্স সবই হয়তো আপনার নখদর্পণে, কিন্তু পছন্দের এই মুভির কিছু ‘বিহাইন্ড দ্য সীন’ ঘটনার কথা হয়তো আপনি জানেন না। টাইটানিকের সেসকল ‘বিহাইন্ড দ্য সীন’ ঘটনাবলী নিয়েই আজকের আয়োজন।
- রোজের নগ্ন পোর্ট্রেইট আঁকার সময় জ্যাকের একটা সংলাপ ছিল এরকম, ‘Over on the bed.. the couch.’ আসলে অরিজিনাল স্ক্রিপ্টে সংলাপটা ঠিক এরকম ছিল না, মূল সংলাপটা ছিল এরকম, ‘Lie on that couch.’ কিন্তু লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও অরিজিনাল সংলাপ ভুলে গিয়ে এই সংলাপ ব্যবহার করে ফেলেন। পরে সংলাপটি পছন্দ হয়ে যাওয়ায় পরিচালক জেমস ক্যামেরন এটিই রেখে দেন সিনেমায়।
- রোজের চরিত্রটা পাওয়ার জন্য কেট উইন্সলেট এতটাই অধীর হয়ে উঠেছিলেন যে লন্ডন থেকে রোজ পরিচালক ক্যামেরনকে চিরকুট পাঠাতেন তিনি। এমনকি সশরীরে ছুটে গেছেন লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্তও। ফোন করে ক্যামেরনকে বোঝানোর চেষ্টা করতেন তিনি, কেন তিনিই একমাত্র এই চরিত্রের জন্য উপযুক্ত!
- কালজয়ী এই সিনেমাটির দৈর্ঘ্য ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। বাস্তবে টাইটানিক সম্পূর্ণ ডুবতেও সময় লেগেছিল ঠিক ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিটই! আবার বরফখন্ডের সাথে টাইটানিকের ধাক্কা খাওয়ার সময়কাল ছিল ৩৭ সেকেন্ড ব্যাপী, সিনেমাতেও ওই দৃশ্যটা রাখা হয়েছে ঠিক ৩৭ সেকেন্ড জুড়েই।
- এরিক ব্রেডেনের ফাইনাল সীনের জন্য প্রায় ১২০ টন পানি ব্যবহার করা হয়েছিল, যা পূর্বে ঠিক করে রাখা পানির প্রায় তিন গুণ! ব্রেডেন নিজেই পরে বলেছেন, জীবনে আর কখনো এত ভয় পাননি যতটা পেয়েছিলেন এই দৃশ্যের শুটিং করতে গিয়ে। কারণ এটা এমন একটা দৃশ্য, যেটার জন্য আগে থেকে রিহার্সাল দেয়ার কোন উপায় বা সুযোগ কোনটাই ছিলনা।
- জেমস ক্যামেরন যখন স্ক্রিপ্ট লিখছিলেন, তখনো পর্যন্ত তাঁর ধারণা ছিল রোজ ডিউইট বুকেটার ও জ্যাক ডসন চরিত্র দুটি সম্পূর্ণই কাল্পনিক। কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায়, টাইটানিকে সত্যিই ‘জে.ডসন’ নামের এক ব্যক্তি ছিল, যে জাহাজ ডুবিতে মারা গিয়েছিল। এই ডসনের পুরো নাম ছিল জোসেফ ডসন। ১৮৮৮ সালে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে জন্ম নেয়া ডসনের মরদেহ আরও অনেক নিহত ব্যক্তির সাথে ফেয়ারভিউ লন সিমেট্রিতে দাফন করা হয়। আজ তার কবর হয়ে উঠেছে বহু দর্শনার্থীর আগ্রহের জায়গা।
- টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পরের দৃশ্যগুলো ধারণের জন্য সাড়ে ৩ লাখ গ্যালনের আকৃতি সম্পন্ন একটি ট্যাঙ্ক ব্যবহার করেছিলেন ক্যামেরন। জমে যাওয়া লাশ ফুটিয়ে তোলার জন্য অভিনেতাদের গায়ে এক ধরণের বিশেষ পাউডার ব্যবহার করা হয়, যা পানির সংস্পর্শে এসে ক্রিস্টালাইজড হয়ে গিয়েছিল।
- টাইটানিক মুভির একটি বিখ্যাত সংলাপ হল জ্যাকের বলা ‘I’m the king of the world.’ ২০০৭ সালে সর্বকালের সেরা ১০০ সংলাপের মধ্যে ৪র্থ স্থান লাভ করেছিল এটি। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে সংলাপটি ক্যামেরনের অরিজিনাল স্ক্রিপ্টে ছিলই না! এবারও ডি ক্যাপ্রিও নিজে থেকেই সংলাপটি ব্যবহার করেছিলেন।
- একই চরিত্রের জন্য দুইবার অস্কার পাওয়া প্রথম চলচ্চিত্র টাইটানিক। যুবতী রোজের চরিত্রে অভিনয় করে সেরা অভিনেত্রীর পুরষ্কার জিতেছিলেন কেট উইন্সলেট, আর বৃদ্ধা রোজের চরিত্রে অভিনয় করে সেরা সহ-অভিনেত্রীর পুরষ্কার জিতেছিলেন গ্লোরিয়া স্টুয়ার্ট। এরকম ঘটনা পরবর্তীতে ঘটেছিল আইরিশ (২০০১) মুভিতে, এবং সেটিতেও ছিলেন কেট।
- মুভিতে জ্যাক ছিল একজন থার্ড ক্লাস প্যাসেঞ্জার যে আড়ালে ফার্স্ট ক্লাস প্যাসেঞ্জারদের জায়গায় ঢুকে পরে। বাস্তবের টাইটানিকেও এমন চরিত্র একজন ছিল। তার নাম হিলডা মারিয়া হেলস্ট্রম। আগ্রহের বশে থার্ড ক্লাস থেকে ফার্স্ট ক্লাসে এসে পড়েছিলেন তিনি, কিন্তু ধরা পরেননি। কিন্তু টাইটানিক যখন আইসবার্গে ধাক্কা খায় তখন তিনি থার্ড ক্লাসেই ছিলেন, এবং লাইফ বোটের সাহায্যে বেঁচেও গিয়েছিলেন!
- জাহাজের একদম কোণায় উঠে জ্যাক ও রোজের সেই হাত ছড়ানো দৃশ্যের সময় পেছনে যে সূর্যাস্তের আলো দেখা যাচ্ছিল, তা কোন কম্পিউটার ইফেক্ট দিয়ে করা হয়নি, বরং এটা সত্যিকারের সূর্যাস্তের আভা। স্বয়ং পরিচালকও জানতেন না দৃশ্যটা ধারণের সময় এত সুন্দর করে সূর্যাস্তের আলো পড়বে।
- ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল টাইটানিক ডুবির শতবর্ষ উপলক্ষে টাইটানিকের একটি থ্রিডি ভার্শন মুক্তি দেয়া হয়, যা থেকে বিশ্বজুড়ে আরও ৩৪৩ মিলিয়ন ডলার আয় হয়! এতে করে টাইটানিকের মোট আয় গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ২.১৮ বিলিয়ন ডলারে।
- জ্যাকের স্কেচবুকে রোজের নগ্ন পোর্ট্রেইট থেকে শুরু করে যত স্কেচ ছিল সেগুলো কার আঁকা জানেন? পরিচালক জেমস ক্যামেরনের! স্কেচ আঁকার সময় দর্শকেরা যে হাত দেখতে পেয়েছেন, সেটি ডি ক্যাপ্রিওর নয় বরং ক্যামেরনের। কিন্তু ক্যামেরন বাঁহাতি হওয়ায় দৃশ্যগুলো মিরর ইফেক্ট দিয়ে দেখাতে হয়েছে, যাতে করে ডান হাতি ডি ক্যাপ্রিওর সাথে খাপ খায়!
- পানির দৃশ্যগুলো ধারণের সময় কেট উইন্সলেট কোন ওয়েটস্যুট ব্যবহার করেননি। ফলে ঠাণ্ডা পানিতে নামার পরে তাঁর যে এক্সপ্রেশন ছিল, সেটা সত্যিকারেরই ছিল। এত ঠাণ্ডা পানিতে অভিনয় করার কারণে নিউমোনিয়াতেও ভুগতে হয়েছিল তাঁকে।
- লাইফবোটের দৃশ্যগুলো ধারণের সময় সকলের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা ছিল কেউ স্পট ছেড়ে উঠে আসতে পারবেনা, এমনকি বাথরুমে যাওয়ার জন্যেও না। বাধ্য হয়েই তাই অনেকে ওই পানির মধ্যেই মূত্রত্যাগ করেছেন, যাদের মধ্যে ছিলেন ছবির নায়িকাও!