রুদ্রর কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড মন খারাপ। কিছুতেই তার মন ভালো করা যাচ্ছে না। সবাই নানা ধরণের চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিল। ডাক্তারদের কাছে গেলে কেবলই তাকে বলা হয় মনকে প্রফুল্ল রাখতে, কিন্তু কিছুতেই হচ্ছে না।
একদিন ডাক্তার তাকে নীল রং-এর একটি ঔষধ দিল। সাথে তাকে বলে দিল, ঔষধ খাবার কিছুদিনের মাঝে রুদ্রের মন ভালো হয়ে যাবে, সব কিছুতে আনন্দ ফিরে পাবে। যেই বলা সেই কাজ! কিছুদিনের মাঝে রুদ্রর আকাশ ভালো লাগে, পাখি ভালো লাগে, টুং টুং করে বেজে চলা রিকশার বেলের আওয়াজ- এগুলো সবই রুদ্রর ভালো লাগে। রুদ্র কেমন করে সবকিছুতে আবার নিজেকে ফিরে পেল? কি আছে এই ঔষধে যা তার মন ভালো করে দিল? ডাক্তারকে ধরল এবার সবাই। ডাক্তার বলল,
“ঔষধে তেমন কিছুই নেই। সাধারণ একটা নীল রং-এর বড়ি খেতে দিয়েছি কেবল। আর বলেছি এতেই মন ভালো হয়ে যাবে। ব্যস, তা বিশ্বাস করেই রুদ্রর মন ভালো হয়ে গেল!”
চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই ঘটনাটিকে বলা হয় প্লাসিবো ইফেক্ট। আবার কেউ কেউ এটিকে প্লাসিবো রেসপন্সও বলে থাকেন। মোদ্দা কথায়, প্লাসিবো ইফেক্ট হচ্ছে একজন রোগী ডাক্তারের পরামর্শে এমন একটি ঔষধ গ্রহণ করল, যা আদৌ ঐ রোগের ঔষধ না। রোগের সঠিক ঔষধ গ্রহণ করা ছাড়াই ডাক্তারের দেয়া একধরণের “প্রতীকী ঔষধ” (প্রতীকী হিসেবে বলা হচ্ছে একধরণের সান্ত্বনামূলক ঔষধ) সেবন করে সুস্থ বোধ করতে লাগল। সেই সাথে ডাক্তারের অভয়বাণীতে তার রোগ আস্তে আস্তে ভালো হতে থাকে। এটি একটি সাধারণ ঘটনা কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর কোন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।
যেমন, কোন একজন রোগী যদি ডাক্তারের কাছে যান আর ডাক্তার তাকে বলেন,
“সর্বনাশ! আপনার আয়ু তো আর বেশিদিন নেই। অপেক্ষা করতে থাকুন।” ভাবা যায় ঐ রোগীর অবস্থাটি কেমন হবে? ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হতে হতে তার আয়ু তো বলতে গেলে অর্ধেকই শেষ। কিন্তু কোন ডাক্তার যদি বলে,
“আপনার একদম কিচ্ছু হয় নি। আপনি দিনকয়েকের মধ্যেই আবার আগের মত হাঁটাচলা করতে পারবেন। এখানে কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি। নিয়ম করে খাবেন। এতেই কাজ হবে।”
রোগী কিন্তু ভক্তি সহকারেই ডাক্তারের হাত থেকে ঔষধ গ্রহণ করবে। এটা হচ্ছে এক ধরণের বিশ্বাস। ইতিবাচক চিন্তা যে একধরণের শক্তি, এটা বর্তমান যুগে বলাই বাহুল্য। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন ইত্যাদির মাধ্যমে নানাভাবে নিজের মাঝে কেউ আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে পারে।
হ্যা, আমি পারব- এই শক্তিটি যার মাঝে আছে, সে কোন কিছু নিয়ে ভয় পায় না। কিন্তু প্রশ্ন যখন শরীরের সুস্থতা নিয়ে, প্লাসিবো ইফেক্ট কি করে রোগীকে সারিয়ে তুলতে পারে, তা চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাছে একটি বিস্ময়। কেউ কেউ বলে থাকেন, একজন ব্যক্তি যদি বিশ্বাস করে থাকে যে সে যা গ্রহণ করছে তা তাকে সুস্থ করে তুলবে, তাহলে তার মাঝে একধরণের শক্তি চলে আসে। শক্তিটা বেঁচে থাকার, শক্তিটা টিকে থাকার। এইজন্য অনেক ডাক্তার রোগীর জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে তাকে প্লাসিবো ইফেক্টের মাধ্যমে সাহস যোগানোর চেষ্টা করেন। বিস্ময়কর হলেও সত্য, মৃত্যুর দুয়ার থেকে রোগী বেঁচে ফিরে আসে ডাক্তারের দেয়া ঔষধ থেকে। প্রাচীন র্যাবাইদের “দ্য ট্যালমুড” নামক একধরণের শাস্ত্র থেকে এই প্লাসিবো ইফেক্টের উত্থান দেখতে পাই আজকের এই আধুনিক যুগে।
শরীরের সাথে মনের একটি সরাসরি যোগাযোগ আছে বলেই ডাক্তাররা আজকাল প্লাসিবো পদ্ধতিতে চিকিৎসা করে থাকেন। তবে এটি সবক্ষেত্রে কাজ করে না। নেতিবাচক কিছু পর্যায়ও দেখা যায়। একে বলা হয় “নোসিবো ইফেক্ট” ।
প্লাসিবো ইফেক্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি অমীমাংসিত অধ্যায়। এটি নিয়ে নানা তর্ক রয়েছে, বিতর্ক রয়েছে। তবে এর কার্যকারীতা নিয়ে চিকিৎসকরা এখনো বিস্ময় প্রকাশ করেন।