যান্ত্রিক এই শহরে সামান্য একটু ফুরসত পেলেই আমরা লোকালয় ছেড়ে একটু শান্তির সুবাতাসের জন্য বেরিয়ে যাই। পাহাড়, জঙ্গল, সমুদ্র চুম্বকের মতো যেন আমাদের টানতে শুরু করে। ব্যাকপ্যাকটা গুছিয়ে নিয়েই যেন চম্পট দিতে শুরু করি। কখনো একা, কখনো বা দলবেঁধে বেরিয়ে পড়ি নতুনের পথে। চারপাশে থাকে নতুন মানুষ, থাকে অচেনা সংস্কৃতি, থাকে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা। এছাড়াও যে নতুন খাবার দেখা হয় না, তা কিন্তু একেবারেই না। মোটকথায়, ভ্রমণ একপশলা আনন্দই নিয়ে আসে আমাদের জন্য। কিন্তু এই ভ্রমণে যারা পথিকৃৎ, যাদের হাত ধরে ঘুরে বেরানো চিনতে শুরু করেছি তাদের সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? সামাজিক বিজ্ঞানের পাতায় কিংবা দু তিনপাতা ইতিহাসেই যেন তাদেরকে ভালোভাবে চেনা যায় না। আসুন, প্রিয়লেখার পাতায় আজ জেনে নেয়া যাক ভুবনবিখ্যাত কিছু ভ্রমণকারীদের সম্পর্কেঃ
১) মার্কো পোলোঃ
মার্কো পোলোকে বোধ করি পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত পরিব্রাজক হিসেবে ধরা হয়। তার পিতা ছিলেন একজন বিত্তশালী ব্যবসায়ী ও বণিক। চারটে ভাষা জানতেন মার্কো। ১২৭০ সনের দিকে বাবা ও চাচার সাথে অভিযানে যান তিনি। পারস্য, আফগানিস্তান, মঙ্গোলিয়া ও বর্তমান চীনের কিছু অংশ ভ্রমণ করেন তারা। বিপদসংকুল অনেক বড় পথ পাড়ি দিতে হয় তাদের। ভারত, মায়ানমার ও চীনের কিছু অংশে তারা ঘুরে বেড়ান। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা জমা হয় তার ঝুলিতে। ভেনিসে ফেরত যাবার পর তাকে আটক করা হয় এবং একজন লেখক তার সমস্ত অভিজ্ঞতা লিখে রাখেন। পূর্ব এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত এসব এলাকায় তিনি যে ভ্রমণগুলো করেন, তা ভবিষ্যতের বিখ্যাত সব পরিব্রাজকদের পাথেয় হিসেবে কাজ করে। ক্রিস্টোফার কলম্বাস তাদের মাঝে অন্যতম। বাড়ি পৌঁছোবার পর তাকে বন্দী করা হয় এবং জেলে এক আসামীর সাথে বন্ধুত্ব হয়। ভ্রমণের দিনগুলোতে তার যেসব অভিজ্ঞতা হয়, তা একটি বই হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়। এর নাম “দ্য ট্রাভেলস অব মার্কো পোলো’।
২) জুয়ান ঝ্যাংঃ
বিখ্যাত চৈনিক সাধু, পণ্ডিত, অনুবাদক জুয়ান ঝ্যাং দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস পৃথিবীর চক্ষের সামনে তুলে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এছাড়াও ভারত ও চীনের মাঝে যে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন রয়েছে, সেটির উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। দীর্ঘ ১৭ বছরের ভারত ভ্রমণে নানা বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। দস্যু, পিপাসা, বরফের চাইয়ের আক্রমণ ইত্যাদি নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাকে। ‘দ্য গ্রেট ট্যাং রেকর্ডস অন দ্য ওয়েস্টার্ন রিজিওনস’ নামক বিখ্যাত বইটিতে জুয়ান দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের নৈসর্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
৩) ক্রিস্টোফার কলম্বাসঃ
ইতিহাসের পরিব্রাজকদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছে বোধ করি তাকে নিয়েই। ‘আমেরিকা খুঁজে পাওয়া’ এই পরিব্রাজক ছিলেন একজন ইতালীয়। অনুসন্ধানকারী, দিক নির্দেশনাকারী এবং উপনিবেশিক এই পরিব্রাজকের বাড়ি ছিল জেনোয়াতে। ১৪৯২ সালে তার সমুদ্র ভ্রমণটি সারা পৃথিবীকে চমকে দেয়। কোন দিকে যাচ্ছেন, তা সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকায় তিনি ভেবেছিলেন হয়তো ভারতবর্ষে এসে পৌঁছেছেন। নানা দিক ঘুরে তিনি সিফিলিসে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এই পরিব্রাজক যুগে যুগে কালে কালে অসংখ্য পরিব্রাজকদের প্রেরণা যুগিয়ে এসেছেন।
৪) ইবনে বতুতাঃ
ইবনে বতুতা মুসলিমদের সাড়া বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সন্দেহাতীতভাবে এটি প্রমাণিত যে তিনি সমগ্র জীবনে পরিভ্রমণ করেছেন ১ লক্ষ ২০ হাজার কিলোমিটারেরও অধিক। আজকের যুগে যদি এটিকে হিসাব করা হয়, তাহলে দেখা যায় মোট ৪৪টি দেশের সমান জায়গা অতিক্রম করেছেন তিনি। ইবনে বতুতা মরক্কোর অধিবাসী এবং মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ স্থানই তিনি ভ্রমণ করেছেন। ১৪ শতকে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করবার ফলে অভিজ্ঞতার ঝুলি তার একেবারে ভরপুর।
(ফিচারটি লেখা হয়েছে এই সাইটের সাহায্যে)