কথায় বলে, তুমি যা খাও, তার ওপরই নির্ভর করছে যে মানুষ হিসেবে তুমি কেমন। কিন্তু শুধু খেলেই তো আমাদের দিন গুজরান হবে না, তাই না? খাবার সাথে চাই প্রচুর পরিমাণে পানি। স্বভাবতই তাহলে প্রশ্ন চলে আসতে পারে, আমাদের কতটুকু পানি পান করা প্রয়োজন?
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ রিপোর্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশই পানি দিয়ে তৈরি বা সেখানে পানির আধিক্য বেশি। এই অংশগুলোর মাঝে রয়েছে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, পেশী, চামড়া এবং হাড়ের ৩০ শতাংশ গঠনেও সাহায্য করে থাকে পানি। আমাদের খাদ্যাভাসের একটি বড় অংশ জুড়েই রয়েছে পানি। শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং পুষ্টি পরিবহনে পানি সাহায্য করে থাকে, বর্জ্য পদার্থ দূরীকরণে সাহায্য করে থাকে, লালা তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গঠনে এবং মাতৃ জঠরে শিশু নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে পানির কোন বিকল্প নেই।
মোদ্দাকথায়, সুস্থ সবল দেহ গড়তে পানির কোন বিকল্প নেই। তবুও বিজ্ঞানীদের মাঝে একটি প্রশ্ন নিয়ে মাঝেসাঝেই বিতর্কের সূত্রপাত হয়ে থাকে। কতটুকু পানি একজন ব্যক্তির পান করা উচিত? প্রতিদিন কতটুকু পানি খেলে একজন ব্যক্তি রোগমুক্ত স্বাভাবিক জীবন নির্বাহ করতে পারবে, তা নিয়ে প্রায়শই বিজ্ঞানীরা সভা সেমিনারের আয়োজন করে থাকেন।
প্রচলিত একটি মিথ বা ভুল ধারণা রয়েছে এটি নিয়ে। অনেকে মনে করেন ৮ আউন্স (২৩৭ মিলিলিটার) গ্লাস পানি প্রতিদিন পান করা উচিত। এটি হিসাব করলে দাঁড়ায় প্রায় ৬৪ আউন্স বা ১.৯ লিটার পানি পান করলে শরীরকে সুস্থ রাখা সম্ভব। এটি একেবারেই ভুল ধারণা। ২০০২ সালের একটি রিপোর্টের রিভিউ অনুযায়ী বলা হয় যে, আমাদের শরীরে যতটুকু পানি প্রয়োজন, এই অনুপাতটি তার চাইতে ঢের বেশি। অর্থাৎ, ১.৯ লিটার পানি শরীরের জন্য অনেক সময়ই বাড়তি হতে পারে। অনেক বিজ্ঞানী বলেন, কিভাবে আমরা পানি পান করি, তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে।
খাবার গলধঃকরণ করতে পানি পান করা হয়ে থাকে। আবার পানিজাতীয় কিছু ফল যেমন তরমুজ, নারকেল, স্ট্রবেরী, আনারস-এই ধরনের ফলগুলোর যে ভর হয়ে থাকে, তার ৯০ শতাংশই পূরণ হয় পানির মাধ্যমে। ২০০৪ সালের একটি বিজ্ঞানভিত্তিক রিপোর্টে বলা হয় যে গড়ে একজন দক্ষিণ আমেরিকার অধিবাসী শুধুমাত্র খাবারের মাধ্যমে (পানি পান না করে) শরীরের ২০ শতাংশ পানির চাহিদা মিটিয়ে থাকেন। এর কারণ হিসেবে দেখানো হয় প্রচুর পানি জাতীয় ফল খাদ্য তালিকায় থাকা। এছাড়াও গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, কফি পান করবার মাধ্যমে শরীরের পানির চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে। H2O বা যেটিকে আমরা পানির সাধারণ রূপ বলে জানি, কফি পান করার মাধ্যমে এটি গ্রহণ করবার চমৎকার একটি মাধ্যম (তবে মনে রাখতে হবে যে কফির মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরের ওপর বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি করে)।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, কতটুকু পানি আমাদের পান করা উচিত? গবেষকেরা দেখিয়েছেন যে একজন নারীর প্রতিদিন গড়ে ২.৭ লিটার ও পুরুষের ৩.৭ লিটার পানি পান করা উচিত। তবে তারা বলেছেন বিভিন্ন অঞ্চল, খাদ্যাভ্যাস, কর্মের পরিধি, কর্মের সময়, বয়স, ওজন ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে এই পানি পান করবার পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। কাজ করবার ফলে শরীর থেকে যে পরিমাণ ঘাম ও বর্জ্য পদার্থ পানির সাথে নির্গত হয়, তা যত দ্রুত সম্ভব পানি পান করবার মাধ্যমে পূরণ করতে পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গাঢ় হলুদ বা প্রায় কমলা বর্ণের প্রস্রাব নির্দেশ করে শরীরে মারাত্মক পানিশূন্যতার অভাব রয়েছে এবং রঙহীন এবং হালকা হলুদ বর্ণের প্রস্রাব নির্দেশ করে যে শরীরে পানির মাত্রা ঠিক রয়েছে।
সবশেষে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরাঃ
তেষ্টা পেলেই পানি পান করবেন, যত ঘামবেন তত পানি পান করবেন। আপনার শরীর প্রয়োজনীয় পানির অভাব এর থেকেই পূরণ করে নেবে।
(ফিচারটি তৈরি করতে সাহায্য করেছে এই সাইট)