সাজেক বাংলাদেশের লেটেষ্ট সেনসেশনাল ট্যুরিষ্ট স্পট, যারা একটু আরাম করে বন্ধু বান্ধব নিয়ে অথবা পরিবার-পরিজন নিয়ে দুটো দিন কাটাতে চান, আবার কিছুটা অ্যাডভেঞ্চার চান তাদের কাছে সাজেক দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাই তাদের জন্য দুইদিনের ট্যুর প্লানটা করা হলো।
ঢাকা থেকে রাতের বাসে খাগড়াছড়ি রওনা দিতে হবে, উইকেন্ডে গেলে চেষ্টা করবেন ৯ টার মধ্যে রওমা দিতে তাহলে ভোরেই পৌছে যাবেন খাগড়াছড়ী শহরে। নন এসি বাস ভাড়া নিবে ৫২০ টাকা, এস আলম, শ্যামলি গাড়ি ভাল। ইকোনরও সার্ভিসও ভাল। শান্তি পরিবহন এর গাড়িগুলো ভাল হলেও শান্তি পরিবহন তাদের জন্য যারা দীঘিনালা পর্যন্ত যাবেন। সাজেক যেতে হলে খাগড়াছড়িতে নামাই ভাল।
দিন ১:
খাগড়াছড়ীতে ভোরে নেমেই খেয়ে নিবেন, মনটানা হোটেল কাছেই আছে, খাবারের মান ভাল, খরচও তুলনামূলক কম। এখানে এসে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কি করবেন, কারন হাতে এখন অপশন দুইটি। সাধারনত যারা সাজেকে যান তারা সাজেকের সাথে আরও কিছু জায়গা ঘুরেন, যেগুলা হচ্ছে, ১। হাজাছড়া ঝর্না ২। রিসাং ঝর্না, ৩। আলুটিলা কেইভ।
এর মধ্যে পরের দুটো খাগড়াছড়ি শহর থেকে কাছেই অবস্থিত, তাই যদি প্রথম দিনেই যেতে চান তাহলে এক প্লান আর কেউ যদি ফেরার দিন খাগড়াছড়ি শহরে আগে ফিরে পরে রিসাং ঝর্না আর আলুটিলা কেইভে যেতে চান তাদের জন্য আরেক প্লান। এখানে আরেকটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে। অনাকাংখিত ঘটনার কারনে বাঘাইহাট থেকে এখন আর্মি এসকোর্ট ছাড়া সাজেক যাওয়া যায়না। আর এই এসকোর্ট পাওয়া যায় দুই সময়। সকাল ১০ টায় আর বিকাল ৩ টায়। তাই প্লান এমন ভাবে করতে হবে যেন এই দুইসময়ের যে কোন একসময়ে বাঘাইহাট এ থাকা যায়। তাই দুইভাবেই প্লান দেওয়া হলঃ
প্লান A
— সকালে খাওয়া দাওয়া সেরে নিয়েই একটা চান্দের গাড়ি ভাড়া করে নিন, শাপলা চত্বর বলে একটা জায়গা আছে, সেখানে গেলেই অনেক চান্দের গাড়ি পাবেন। তাদেরকে বলবেন, আজকে সাজেক নিয়ে যাবে, কালকে সাজেক থেকে নিয়ে আসবে, তারপর শহরে রিসাং, আলুটিলা ঘুরিয়ে নিয়ে বাস ষ্টেশন এ নামিয়ে দিবে, বাস ড্রাইভার আর হেল্পার এর খাওয়া দাওয়ার দায়িত্ব আপনাদের, তারা কত টাকা নিবে? এইখানে আপনারা ইচ্ছামত দর দাম করেন, ৭০০০-৯০০০ এর মধ্যেই পেয়ে যাবেন আশা করি। তারপর রওনা দেন, সাজেকের উদ্দেশ্যে, পথে হাজাছড়া ঝর্না পড়বে, হেল্পারকে বলবেন যেন সেখানে নামিয়ে দেয়।
দীঘিনলা পার হয়ে কিছুক্ষণ গেলেই এই সুন্দর ঝর্নাটির দেখা পাওয়া যাবে। মূল রাস্তা থেকে ১০-১৫ মিনিট হাটলেই এই ঝর্ণাটি চোখে পড়বে। ঝর্নায় কিছুক্ষন ভিজে ১০ টার আগেই চলে যান বাঘাইহাট এ। সেখান থেকে আর্মি এসকোর্ট নিয়ে সাজেকে। কম বেশি তিন ঘণ্টা লাগে খাগড়াছড়ী থেকে সাজেকে যেতে। যাওয়ার পথটা আসলেই অনেক সুন্দর, পুরোপুরি উপভোগ করার জন্য চান্দের গাড়ির ছাদ উপযুক্ত জায়গা। সাজেকে গিয়ে আগে থেকে বুকিং করা রিসোর্ট এ ঊঠে যান। আগে থেকে খাওয়ার অর্ডার দিতে হবে না হলে খাবার পাবেন না, খাওয়া দাওয়া করে রেষ্ট নিন। এরপর সাজেকে ঘুরে বাকি সময় কাটাতে হবে। সেখানে ঘুরা ঘুরি করতে পারেন, হ্যালি প্যাড এ, সূর্যাস্ত দেখতে পারেন সেখান থেকে, খুব ভাল লাগবে। এ ছাড়া সাজেকের রাস্তায় হেটে বেড়াতেও ভাল লাগবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। একটু আগে ঘুমিয়ে পড়বেন, কারন মনে রাখবেন, সাজেকের মেইন আকর্ষন হল সূর্য ওঠার আগে হ্যালিপ্যাড এ গিয়ে মেঘের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার মধ্যে।
দিন ২: সূর্য উঠার ঘন্টা আগে ঊঠেই চলে যান হ্যালিপ্যাড এ, গিয়ে উপভোগ করেন সাজেকের সৌন্দর্য। উপভোগ করুন সূর্যোদয়। সূর্য উঠে গেলে কিছুক্ষন পর রওনা দিন, কংকাল পাড়ার দিকে। বেশ কিছুক্ষন উচু নিচু পাহাড়ে হেটে পৌছে যাবেন কংলাক পাড়ায়, ভাল লাগবে, কংলাক পাড়া থেকে কটেজে ফিরে সব গুছিয়ে ১০ টার আগেই রেডি হয়ে যান রওনার জন্য কারন ১০ টার পর আবার ৩ টার আগে বের হতে পারবেন না। আর্মি এসকোর্ট করে আবার নিয়ে আসবে বাঘাই ঘাট। এরপর দুপুরের মধ্যে পৌছে যাবেন খাগড়াছড়ীতে। পৌছে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন, মনটানায় করতে পারেন অথবা খাগড়াছড়ী বিখ্যাত সিস্টেম রেস্টুরেন্ট এ। লাঞ্চ করেই চান্দের গাড়ি করে চলে যান আলুটিলায়, আলুটিলায় সময় কাটিয়ে চলে যান রিসাং ঝর্নায়। রিসাং ঝর্নার আরেক নাম প্যান্ট খেকো ঝর্না, কারন এইখানে গেলে ন্যাচারাল স্লিপার এ স্লিপ কাটতে গিয়ে সবার প্যান্ট ছিড়ে যায়, তাই এক্সট্রা কাপড় রাখবেন সাথে। রিসাং ঝর্না দেখে শহরে ফিরে এসে, বাসার জন্য কিছু কেনাকাটা করে নিন। মনে রাখবেন রাত ৯ টায় খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে সব গাড়ী ছেড়ে দেই, তাই এইসময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করে ঊঠে পরুন ঢাকার গাড়ী তে।
প্লান B– এই প্লান এ প্রথম দিন শহরের কাজগুলো সেরে নেওয়া যায়, অর্থাত সকালে নাস্তা করে গাড়ি ঠিক করেই আলুটিলা আর রিসাং এ চলে যান, মাথায় রাখবেন যে করেই হোক দুপুর তিন টায় বাঘাইহাট থাকতে হবে, আলুটিলা, রিসাং ঝর্নায় গিয়ে দেখা শেষ করে ৩ টার মধ্যে বাঘাইহাট থেকে আর্মি এসকোর্ট নিয়ে সাজেকে চলে যান। তারপর সাজেকে গিয়ে ঘুরাঘুরি করে আগে ভাগে ঘুমিয়ে যান যেহেতু সকালে উঠতে হবে।
দিন ২:
ভোর বেলায় ঊঠে আগের মত হ্যালিপ্যাড এ গিয়ে তারপর কংকাল পাড়ায় চলে যান, সেখান থেকে ফিরে আসেন, এরপর আরো সময় থাকবে, যেহেতু এই প্লেনে ব্যাক করবেন বিকাল ৩ টার এসকোর্ট এ। এই সময় স্থানীয় কোন গাইডকে সাথে নিয়ে চলে যেতে পারেন সিকাম তৈসা ঝর্নায়। ট্রেকিং করে যেতে হবে সেখানে। তারপর ৩ টার এসকোর্ট এ খাগড়াছড়ী ফিরে সদাই পাতি করে রাত ৯ টার গাড়িতে ঢাকার গাড়ীতে উঠে পড়েন। সংক্ষিপ্ত ভ্রমণের জন্য এর চেয়ে ভালো ট্যুর আর কোথাও হতে পারে না, এটুকু নিশ্চিত করে বলা যায়।
তথ্যসূত্রঃ ট্রাভেলার্স অফ বাংলাদেশ