অপারেশন জ্যাকপট: মুক্তিযুদ্ধের দুর্ধর্ষ এক আত্মঘাতী মিশন – Creative IT Blog
Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611
Home / মুক্তিযুদ্ধ / অপারেশন জ্যাকপট: মুক্তিযুদ্ধের দুর্ধর্ষ এক আত্মঘাতী মিশন

অপারেশন জ্যাকপট: মুক্তিযুদ্ধের দুর্ধর্ষ এক আত্মঘাতী মিশন

অপারেশন জ্যাকপট নামটি কম-বেশি আমাদের সবারই পরিচিত। অপারেশন জ্যাকপট হল একটি নৌ গেরিলা অপারেশন। এটি ছিল ১০ নম্বর সেক্টর পরিচালিত আত্মঘাতী অপারেশন। ১০ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল নৌ-চলাচল, বন্দর ও উপকূলীয় এলাকা। ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে, অর্থাৎ ১৬ আগস্ট মংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এবং চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জে একইসঙ্গে এ অপারেশন পরিচালিত হয়। এ অপারেশনের মাধ্যমে পাকিস্তানিদের অনেক অস্ত্রবাহী জাহাজ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল।

অপারেশন জ্যাকপট পরিচালনার উদ্দেশ্যে গেরিলা আক্রমণের জন্য যোদ্ধাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রথম ব্যাচকে চার ভাগে ভাগ করে চারটি দলের চারজন কমান্ডার ঠিক করে দেওয়া হয়। এই অপারেশনে অংশ নেওয়া একজন কিশোরের মুখ থেকে জেনে নেয়া যাক পুরো ঘটনাটা।

১৪ আগস্ট ১৯৭১, রাত ১০টা। অপারেশন জ্যাকপট পরিচালনা করতে ৩৯ জনের একটি কমান্ডো দল লিমপেট মাইন নিয়ে কর্নফুলী নদীরতীরে জড়ো হয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে উপস্থিত কমান্ডোরা যার যার মাইন গামছা দিয়ে পেটের সঙ্গে বেঁধে নদীতে নেমে পড়বেন। এর আগে বিকেলে দুজন কমান্ডো জেলে সেজে মাছ ধরার ভান করে বন্দরে জাহাজের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে এসেছেন। ফিরে এসে তাঁরা অন্যদের ধারণা দিয়েছেন, সেখানে কয়টি জাহাজ আছে এবং সেগুলো বন্দরের কোন জায়গায় অবস্থান করছে। ওদিকে আজ সকালেই রেডিওতে গোপন সংকেতের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে অপারেশনের নির্দেশ। আগেই বলা হয়েছিল আকাশবাণী কলকাতা ‘খ’ কেন্দ্র থেকে ‘আমার পুতুল আজকে প্রথম যাবে শ্বশুরবাড়ি’ গানটি বাজানো হলে অপারেশনে নেমে পড়তে হবে। রেডিওতে সেই নির্দেশ পেয়ে আমরা এখানে হাজির হয়েছি।

রাত সাড়ে ১১টায় দলনেতা ওয়াহিদ চৌধুরী কমান্ডোদের তিনটি গ্রুপে ভাগ করলেন। একটি জাহাজে তিনটি করে মাইন লাগাতে হবে। কারণ অনেক জাহাজের ইঞ্জিন থাকে পেছনে, আবার অনেক জাহাজের সামনে। ইঞ্জিন বরাবর মাইন বিস্ফোরণ ঘটাতে পারলে জাহাজের ক্ষতি বেশি হয়। সে কারণে প্রতিটা জাহাজে তিনটি করে মাইন বিস্ফোরণ করতে তিনজন করে কমান্ডো নিয়োগ দেওয়া হলো। রাত সাড়ে ১২টায় আমরা ৩৯জন কমান্ডো যার যার মাইন নিয়ে তৈরি হয়ে দাঁড়ালাম। দলনেতা সবার উদ্দেশে বললেন, ‘শোনো কমান্ডোরা, বন্দরের দিক থেকে কর্ণফুলীর পানিতে মাঝে মধ্যেই সার্চলাইট ফেলে সতর্কতামূলক গুলি করা হয়। কারো শরীরে সেই গুলি লাগলে চিৎকার না করে সঙ্গে সঙ্গে পানিতে ডুবে যাবে। এখনো সময় আছে, কারো ভয় লাগলে অপারেশন থেকে সরে দাঁড়াও।’ দলনেতার কথা শুনে আটজন কমান্ডো সরে দাঁড়ালেন।

 

রাত গভীর হতে হতে ১৫ আগষ্ট চলে এলো। আট কমান্ডোকে রেখে আমরা বন্দর থেকে এক কিলোমিটার উজানে হেঁটে গেলাম। কারণ বন্দরের সোজাসুজি পানিতে নামলে স্রোত আমাদের ভাসিয়ে জাহাজ থেকে দূরে নিয়ে যাবে। নির্দিষ্ট স্থানে পৌছে এক লাইনে তিনজন করে কমান্ডো পানিতে নেমে পড়লাম। আগে থেকেই বলা ছিল, তিনজন হাত ধরাধরি করে স্রোতের সহায়তায় সাঁতরে জাহাজের কাছে যেতে হবে, যাতে একই জাহাজে তিনজন তিনটি মাইন স্থাপন করতে পারেন। পানিতে নামার সময় মায়ের মুখটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। মনে মনে ভাবছিলাম, আর হয়তো মায়ের সঙ্গে দেখা হবে না।

নদীর পানি ছিল খুবই ঠাণ্ডা। ৬০ থেকে ৭০ হাত যাওয়ার পরই আমাদের তিন জনের হাত ছুটে গেল। একা হয়ে গেলাম আমি। শব্দ না করে সাঁতরানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল বলে নিরাপদেই এগিয়ে যেতে লাগলাম। আরো কিছুক্ষণ সাঁতরানোর পর পায়ে মাটি ঠেকল, দাঁড়িয়ে গেলাম। উপরে তাকিয়ে জেটি দেখতে পেলাম। সেখান থেকে লোকজনের কথার শব্দ আসছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এদিক ওদিক তাকিয়ে কোনো জাহাজ দেখতে পেলাম না। সামনের দিকে এগোবো কি না ভাবছি, এমন সময় নদীর মধ্যে নোঙর করা একটা বড় বার্জ দেখতে পেলাম। প্রশিক্ষণের সময় আমাদের বলা হয়েছিল, যদি বন্দরের নদীর মধ্যে কোনো জাহাজ ডোবানো যায়, তাহলে বন্দরে জাহাজ চলাচলে অসুবিধে হবে। এমনকি বন্দরের নদীপথ বন্ধও হয়ে যেতে পারে। দেরি না করে আমি সোজা বার্জের কাছে চলে এলাম। আমি জানতাম,বার্জের ইঞ্জিন পেছনে থাকে। তাই পেছন দিকে লিমপেট মাইনটি লাগালাম। খুব শক্তিশালী বিস্ফোরক। দেখতে অনেকটা মাঝারি সাইজের গোল মিষ্টি কুমড়ার মতো। তবে কিছুটা চ্যাপ্টা। এটি তিন চার ইঞ্চি পুরু স্টিলের পাতে তিন-চার ফুট জুড়ে গর্ত করতে পারে।

আমার মাইনটি স্থাপন করার পরপরই বন্দরের দিকে একটি জাহাজে মাইন বিস্ফোরিত হলো। সঙ্গে সঙ্গে জেটির সার্চলাইট জ্বলে উঠল। সেই সঙ্গে শুরু হলো বৃষ্টির মতো গুলি। অন্ধকারে পানিতে ডুবে থাকার কারণে তারা আমাদের কাউকেই দেখতে পারছিল না বলে এলোমেলো গুলি ছুঁড়ছিল। সেই গুলির হাত থেকে বাঁচতে আমি ডুব দিয়ে বার্জের উল্টোদিকে এসে ভেসে রইলাম। হঠাৎ মনে পড়ল, আমার লাগানো মাইন বিস্ফোরণের সময় হয়ে এসেছে। দ্রুত সরে না পড়লে মাইন বিস্ফোরণে আমিও মারা যাব। অগত্যা ডুব দিয়ে দিয়ে তীরের দিকে সরে যেতে লাগলাম। যখনই মাথা পানির উপরে তুলি, দেখি বৃষ্টির মতো গুলি যাচ্ছে। পেছনে বার্জ থাকায় আমার সুবিধে হলো। আমি সেটাকে আড়াল করে তীরের দিকে এগোতে লাগলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে তীরে চলে এলাম। তারপর শুয়ে পড়লাম কাদার মধ্যে। দুইবার সার্চ লাইটের আলো আমার ওপর দিয়ে চলে গেল। কিন্তু শরিরে কাদা লেগে থাকায় ওরা আমাকে দেখতে পেল না। ওদিকে একটার পর একটা মাইন বিস্ফোরণের শব্দ আসছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে জেটি থেকে গুলির পরিমাণ।

ক্রলিং করে আমি যতটা সম্ভব এগিয়ে গেলাম। তারপর আবার শুয়ে বিশ্রাম নিলাম। বসতে সাহস হচ্ছে না। মাথার ওপর দিয়ে শাঁ শাঁ করে গুলি ছুটছে। আরো কিছুক্ষণ ক্রলিং করার পর একটা ছনের ঝাড়ের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। অপারেশনের পর যেখানে মেলার কথা, আস্তে আস্তে সেদিকে এগোতে লাগলাম। ছনের ধারাল পাতায় আমার মুখ ও বুকের অনেক জায়গায় কেটে গেল। রক্ত ঝরতে লাগল। ব্যথাও করছিল বেশ, কিন্তু জাহাজ ডোবানোর আনন্দে সেই ব্যথার কথা ভুলে গেলাম। মিনিট দশেক পর নির্দিষ্ট জায়গায় পৌছালাম। সেখানে এসে দেখি আমাদের গাইড এবং যারা শেষ মুহূর্তে অপারেশনে যায়নি,তারা মাটিতে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের দলনেতাসহ আরো সাত আটজন কমান্ডো ফিরে এলো। শুয়ে শুয়েই আমরা ঠিক করলাম, এখানে আর থাকা যাবে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তানি সেনারা মর্টার শেল নিক্ষেপ শুরু করবে। শেলের হাত থেকে বাঁচতে হলে আরো দূরে গ্রামের দিকে সরে পড়তে হবে।

তখনো আমাদের হাতে অব্যবহৃত কয়েকটি মাইন ছিল। যেহেতু মাইনগুলোর ওজন অনেক বেশি ছিল, সেগুলোকে নালার মধ্যে ফেলে দিলাম। তারপর সবাই হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে দিয়ে সরে পড়তে লাগলাম। মাইল দুয়েক যাওয়ার পর পা সোজা করে চলার সাহস হলো। আরো ঘণ্টা দেড়েক দৌড়ানোর পর একটা গ্রামে এসে উপস্থিত হলাম আমরা। গ্রামটা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। এবার হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। অপারেশন জ্যাকপট সফলভাবে সমাপ্ত করতে পেরেছি বলে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিলাম। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, পাকিস্তানিদের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিরোধের পরও অভিযানে অংশ নেওয়া সবাই অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছিলাম। আমরা যখন চট্টগ্রাম বন্দরে হামলা করছি, ঠিক একই সময়ে মংলা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, চাঁদপুরসহ আরো বেশ কয়েকটি জায়গায় নৌ-কমান্ডোরা একই ধরনের আক্রমণ পরিচালনা করে। ফলে দেশব্যাপী অসংখ্য জাহাজ ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া জাহাজগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিদেশি জাহাজ ছিল বলে অপারেশন জ্যাকপট সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।

পাকিস্তান সরকার অবরুদ্ধ বাংলাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে বলে বহির্বিশ্বে যে প্রচারণা চালায় নৌ-কমান্ডোদের সফল অভিযানের মাধ্যমে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের নৌ-অভিযানের খবর ফলাও করে প্রচারিত হয়। এরপর থেকে কোনো বিদেশি জাহাজ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আসতে রাজি হয় নি। অপারেশন জ্যাকপটের কারণে মুক্তিযুদ্ধ বহির্বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।

About farzana tasnim

Check Also

তারামন বিবি: ভালো নেই মুক্তিযুদ্ধের বীর যোদ্ধা

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি নাম তারামন বিবি৷ তারামন বিবি একটি বীরত্বপূর্ণ নাম৷ একই সাথে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *