ঘরের মাঠে হেক্সা হয়ের স্বপ্নে বিভোর ছিল গোটা ব্রাজিল। সেই স্বপ্ন দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে ব্রাজিলিয়ানদের চোখের সামনে শিরোপা উৎসব করেছিল জার্মানরা। সেই বিশ্বকাপের পর অনেকটা সময় ধরে খুঁজে পাওয়া যায়নি চিরচেনা সেই ব্রাজিলিয়ান ফুটবলকে। যেন হিমঘরে লুকায়িত ছিল সাম্বার ছন্দ! অবশেষে তিতের হাত ধরে আবারো চেনা রূপে ফিরেছে সেলেসাওরা, বাছাইপর্বে দুর্দান্ত দলীয় সমন্বয় দেখিয়ে জায়গা করে নিয়েছে রাশিয়া বিশ্বকাপে। আর তিতের এই সাফল্যের মূল কারিগর নেইমার, ব্রাজিলের নাম্বার টেন। জাতীয় দলের হয়ে সেরা ফর্মে থাকা ব্রাজিল অধিনায়ক ফিফার সাথে কথা বলেছেন জাতীয় দল নিয়ে। প্রিয়লেখার পাঠকদের উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করা হল।
ফিফা: বিশ্বকাপের ড্র’তে এমন কোন দল আছে যাদেরকে ব্রাজিল এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল?
নেইমার: না। ব্রাজিল যে কারোর মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। আমরা প্রশিক্ষণ করিই এজন্য, যাতে আমরা কাউকে ভয় না পাই। এটা বিশ্বকাপ, আর বিশ্বকাপে সেরা দলগুলোই খেলে। ভালোভাবে প্রস্তুত হয়েই তারা এই পর্যায়ে এসেছে। কোন দলের চেয়ে কোন দলকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই এখানে। বিশ্বকাপে গেলে আপনাকে সব দলের জন্যই প্রস্তুত থাকতে হবে।
ফিফা: বিশ্বকাপ ড্র এর মত অনুষ্ঠানগুলো দেখেন?
নেইমার: কার বিপক্ষে খেলবেন সেটা জানার একটা আগ্রহ তো থাকেই। কিন্তু আমার মনে হয় না এটার উপর খুব বেশি কিছু নির্ভর করে। তবে হ্যাঁ, এটা এমন একটা অনুষ্ঠান, যেটা মাইক্রোওয়েভে পপকর্ণ দিয়ে বন্ধু ও পরিবারের সাথে উপভোগ করা যায়।
ফিফা: আপনি বললেন ড্র খুব বেশি ম্যাটার করে না আপনার কাছে, কিন্তু একটি দলের বিশ্বকাপ জয়ের জন্য ভাগ্যের সহায়তা কতটুকু দরকার, সেটা একটু বলবেন?
নেইমার: ভাগ্য? খুবই সামান্য। আমি বিশ্বাস করি না কেবল ভাগ্য দিয়ে কোন দল বিশ্বকাপ জিতে নিতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে যারা কঠোর পরিশ্রম করে, গ্রুপ পর্বে কিংবা নকআউট পর্বে যেকোনো দলকে মোকাবেলা করার সাহস রাখে, সাফল্য তারাই পায়।
ফিফা: ২০১৪ বিশ্বকাপে যে সম্মান হারিয়েছিল ব্রাজিল, সেটা আবার তারা ফিরে পেয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। আপনি কি বলবেন?
নেইমার: আমারও তাই মনে হয়। বিশ্বকাপের পর আমরা যে সম্মানটা পেতাম, এখন তার চেয়ে অন্যরকম সম্মান পাই। লোকে আমাদের অন্য চোখে দেখে এখন। যে ব্রাজিলকে সবাই সম্মান করে, প্রশংসা করে, সেই ব্রাজিল ফিরে এসেছে। এই ব্রাজিল সুন্দর ফুটবল খেলতে উপভোগ করে, যা আমাদের সবাইকে আনন্দিত করে। দেশবাসী এখন আমাদের নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।
ফিফা: ২০১৪ তে আপনার বিশ্বকাপ অনাকাঙ্খিতভাবে শেষ হয়েছিল, কি মনে করেন, ২০১৮ বিশ্বকাপ আপনার ক্যারিয়ারে কিরকম প্রভাব ফেলবে?
নেইমার: আমি যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবে আগের বিশ্বকাপটা শেষ করতে পারিনি। অবশ্যই আমি শিরোপা জয়ের উৎসব করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু না আমি ওটা জিতেছি, না হেরেছি। বিশ্বকাপটা আমি শেষই করতে পারিনি। যে ইনজুরির জন্য আমার বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গিয়েছিল, তার দাম আমাকে চোকাতে হয়েছে।
ফিফা: ইনজুরির ওই সময়টা কেমন ছিল?
নেইমার: সপ্তাহটা আমার জন্য খুবই খারাপ কেটেছিল। অনেক কেঁদেছিলাম আমি, নিজেকে বারবার জিজ্ঞেস করছিলাম, কেন এমন হল আমার সাথে। কিন্তু দিনশেষে আমি বুঝেছিলাম, আমার সাথে যা কিছু হচ্ছে, তা আমাকে আরও শক্তিশালীই করছে। ভবিষ্যতের জন্য আরও ভালো প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করে এগুলো। আমি বিশ্বাস করি এই বিশ্বকাপ ব্রাজিলিয়ানদের জন্য দারুণ এক উপলক্ষ হতে যাচ্ছে। জেতার জন্য যা কিছু করা দরকার, আমি করব।
ফিফা: গোল তো করছেনই, গোলের পাশাপাশি একইভাবে অ্যাসিস্টও করে চলেছেন। দুটোর মধ্যে কোনটি করতে বেশি পছন্দ করেন?
নেইমার: দুটোই আমাকে খুব খুশি করে। পিএসজি হোক কিংবা ব্রাজিল, দলের সময় ভালো গেলে আমারও খুব ভালো লাগে। গোল করা সবসময়ই আমার লক্ষ্য থাকে, সাথে সতীর্থদের গোল করার জন্য বল বানিয়ে দিতে পারলেও খুব ভালো লাগে।
ফিফা: শেষ প্রশ্ন, বাক্যটা শেষ করুন। ২০১৮ সালে নেইমার…
নেইমার: (হাসতে হাসতে) ২০১৮ সালে নেইমার বিশ্বকাপে খুব সুখী থাকবে।
ফিফা অবলম্বনে