পর্যাপ্ত সময়, নিখুঁত পরিকল্পনা, চরিত্রের বিন্যাস ও বিশ্লেষণ ও গল্পের গাঁথুনি- এই উপাদানগুলো থাকলে যে কোন একটি নির্মাণ দর্শকরা সমাদরে গ্রহণ করে (করতে বাধ্য), তা দেখিয়ে দিল সিডব্লিউ নেটওয়ার্ক।
বলছিলাম ক্রাইসিস অন আর্থ এক্সের প্লট নিয়ে। গল্পটার শুরু হয়েছিল সুপারগার্ল কারার এপিসোড থেকে। এরপর অ্যারো, ফ্ল্যাশ এবং লেজেন্ডস অব টুমরোতে এসে মধুরেন সমাপয়েত ঘটল একটি অল্টারনেট দুনিয়ার হালহকিকতের। অনেকেই বলছেন ওয়ার্নার ব্রাদার্সের জাস্টিস লীগ যা করে দেখাতে পারে নি, চারটি ক্রস ইভেন্ট এপিসোডের মাধ্যমে ছোট পর্দার নায়কেরা তাই করে দেখালো। জাস্টিস লীগ ও ক্রাইসিস অন আর্থ এক্স ফ্র্যাঞ্চাইজের গল্প মোটামুটি একই ধাঁচের, তবে ছোটপর্দায় বিন্যাসটি বোধহয় আরো একটু পরিণত করে দেখানো হয়েছে। তবে সময় বোধহয় এখনো শেষ হয়ে যায় নি। ওয়ার্নার ব্রাদার্সের উচিত তাদের সুপারহিরোদের নিয়ে গল্পে আরো একটু মনোযোগী হওয়া।
ডিসি কমিকের সাথে প্লটের মিল রেখে তাদের চরিত্রগুলোকেও আরো একটু পোক্ত করছে সিডব্লিউ। অ্যারো আরো পরিণত হয়েছে, ফ্ল্যাশের মাল্টিভার্স দুনিয়ার গল্পগুলো আরো একটু সুবিন্যস্তভাবে সাজানো হয়েছে, সাথে সাথে ছোটখাট চরিত্রগুলোকেও দর্শকের সামনে এনে তুলে ধরা হয়েছে। তো, বলছিলাম আমাদের দেখার বাইরেও আরো একটি পৃথিবীর কথা। যেখানে নাৎসি বাহিনীর প্রধান হিসেবে থাকে একজন অল্টারনেট অ্যারো, সুপারগার্ল, ফ্ল্যাশের চিরশত্রু রিভার্স ফ্ল্যাশ এবং প্রমিথিউস।
ফ্ল্যাশ, লেজেন্ডস অব টুমরো, সুপারগার্ল- এই এপিসোডগুলোতে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া গিয়েছে। প্রায় ৪৩ মিনিটের রানটাইমে কাহিনীর বিন্যাসটিও ভালোভাবেই দেখানো হয়েছে। ক্রাইসিস আসলে কি নিয়ে, উত্তোরণের উপায় কি, কেমন করে নিজেদের দুনিয়ায় আমাদের পরিচিত সুপারহিরোরাই টিকে থাকবে, তা খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তাছাড়া অনেক দর্শকের কাছেই বিরক্তির উদ্রেক করে এমন কিছু চরিত্র যেমন সিসকো র্যামন (ভাইব), আইরিস ওয়েস্ট, কিলার ফ্রস্ট- এই চরিত্রগুলোকে আরো একটু বিস্তৃত করে সাজানো হয়েছে। একটি ক্রসওভার ইভেন্টের সার্থকতাটাই যে এখানে! চরিত্রগুলোকে বিকশিত হতে দেবার জন্য পর্যাপ্ত সময়। তা অন্তত করতে পেরেছে সিডব্লিউ নেটওয়ার্ক। প্রতি বছরই এমন একটি ক্রসওভার ইভেন্ট করা হয়, যার মাধ্যমে ব্যবসায়িক একটা মুনাফার অংশ ও রেটিং পয়েন্টও বেড়ে যায় তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়া সুপারহিরো সিরিজগুলোর।
পৃথিবী ধ্বংসের মুখে, রক্ষা করতে পারে আমাদের চিরচেনা সুপারহিরোরাই। এমন একটি কাহিনী সাজাতে হলে অবশ্যই কিছু কিছু জিনিস দৃষ্টিকটু লাগবে, অপ্রয়োজনীয় বোধ হবে, বিরক্তিরও উদ্রেক করবে। তবে এখানে বোধহয় মানবিক কিছু জিনিসও তুলে ধরা হয়েছে। ফায়ারস্টর্ম চরিত্রটির মার্টিন স্টেইনের সাথে মানবিক যে দ্বন্দ্ব সেটি দেখানো হয়েছে, অলিভার কুইনের সাথে ফেলিসিটির সম্পর্কের রসায়নটিকে আরো একধাপ সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সুপারগার্ল কারাকেও দেয়া হয়েছে একটি মানসিক শান্তির সন্ধান। অর্থাৎ, শুধুমাত্র পৃথিবীকে বাঁচাতেই যে তারা ব্যস্ত ছিল এমনটা নয়, সাথে সাথে নিজেদের ভেতরকার সমস্যাগুলোরও সমাধান দেয়া হয়েছে এই চারটি এপিসোডের মাধ্যমে।
ব্যারি অ্যালেন এবং কারার মাঝে দৌড় প্রতিযোগিতা কেবলমাত্র যে একটি নিছক প্রতিযোগিতা, তা কিন্তু নয়। ফাস্টেস্ট ম্যান এলাইভ এবং ভিনগ্রহের রূপসী সুপারগার্লের মাঝে বন্ধুত্ব, একে অপরের মাঝে বিশ্বাস ও বন্ধন- সেটিও তুলে ধরতে পেরেছেন পরিচলকরা। অনেকে বলছেন জাস্টিস লীগের সুপারম্যান ও ফ্ল্যাশের মাঝে প্রতিযোগিতার দৃশ্যটির চাইতেও নিখুঁত করতে পেরেছে সিডব্লিউ নেটওয়ার্ক। বড় পর্দার চাইতে ছোট পর্দার চরিত্রগুলো হচ্ছে আস্তে আস্তে পরিপক্ব, বাস্তবসম্মত ও সমঝোতাপূর্ণ। ঠিক এই নিয়মটিই মেনে চলতে হবে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের পরবর্তী আসন্ন সুপারহিরো ছবিগুলোয়।
ক্রাইসিস অন আর্থ এক্সের যেসব ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছেঃ
১) প্রত্যেকটি এপিসোডে সুপারহিরোদের মাঝে সময় সমভাবে বণ্টন করা হয়েছে।
২) একটির সাথে অপর চরিত্রটি দ্বান্দ্বিক বিষয়টি কম।
৩) কাহিনীবিন্যাস সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।
৪) সবচেয়ে বড় কথা, দর্শকের তুষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ অর্জন করতে পেরেছে ছোট পর্দার সুপারহিরোরা।
আপনিও চাইলে দেখে ফেলতে পারেন ছোট পর্দার সুপারহিরোদের পৃথিবী উদ্ধারের এই লড়াই। কথা দিচ্ছি, হতাশ করবে না ওরা।