পৃথিবীতে বর্তমানে এখন দেশের সংখ্যা কতটি জানেন? জাতিসংঘের মতানুসারে এখন পৃথিবীতে ১৯৫টি দেশ রয়েছে। তবে জানলে অবাক হবেন, পৃথিবীতে আরো অনেক দেশ ছিল যেগুলো কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। এমনও রয়েছে যে দেশগুলোর টিকে থাকার মেয়াদ ছিল মাত্র এক বছর কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে কয়েক মাস মাত্র। ভাবা যায়? আসুন, আজ প্রিয়লেখার পাতায় এমনই একটি দেশের সম্পর্কে জেনে আসা যাক। দেশটির নাম ছিল দ্য আইল্যান্ড অব এযো, বর্তমানে যেটিকে আমরা হোক্কাইডো নামে চিনি।
১৮৬৮ সালে সংঘটিত বশিন যুদ্ধের পর দ্য তোকুগাওয়া শোগুনাতে (জাপানের সর্বশেষ সামন্ততান্ত্রিক সামরিক সরকার) পরাজিত হয়। কিছু সংখ্যক সেনাবাহিনী সদস্য নতি স্বীকার করতে নারাজ হয় এবং তারা আজকের হোক্কাইডো তথা দ্য আইল্যান্ড অব এযোতে পালিয়ে যায়। পূর্বের ধারণা অনুযায়ী, সেখানে যেসব সামুরাই ছিল, তারা ঐ অঞ্চলের অধিবাসীদের প্রভাবিত করতে সমর্থ হয়। তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল সরকারের প্রতি, দ্য আইল্যান্ড অব এযোকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। ঐ অঞ্চলের অধিবাসীরাও তাদের এই চিন্তাধারাকে স্বাগত জানায়। সেখানে তারা তারকা আকৃতির একটি দূর্গ গড়ে তোলে, যেটির নাম ছিল গোরিওকাকু বা ‘দ্য পেন্টাগন’।
ব্রিটেন এবং ফ্রান্স এই নব্য দেশটিকে কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমর্থন জানিয়েছিল। দেশটির সামরিক শক্তি ছিল বেশ দৃঢ় এবং এই শক্তির ওপর ভিত্তি করে দেশটি গঠিত হয়েছিল। তবে জাপানের মেইজি সরকারের হাতে তারা পরাজিত হয়েছিল। এই যুদ্ধে কিছু ফ্রেঞ্চ কমান্ডার তাদের অবস্থান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে এবং সামুরাইদের সাহায্য করেন। (সামুরাইদের সম্পর্কে আরো কিছু জানতে যেতে পারেন এই লিংকে)
রাজার অকুতোভয় ও ভয়ংকর যোদ্ধারা নির্বিচারে কচুকাটা করতে থাকে এই সামুরাই ও যুদ্ধে অংশ নেয়া সৈনিকদের। কিছু কিছু খণ্ডযুদ্ধ অবশ্য সংঘটিত হয়েছিল তবে তা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেবার মত তেমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিল না। যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ‘কোতেতসু’। এটি একটি যুদ্ধজাহাজ যা তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্র জাপানকে ভেট হিসেবে দিয়েছিল। এই যুদ্ধজাহাজের ক্রমাগত গোলাবর্ষণের কারণে দ্য আইল্যান্ড অব এযোর পরাজয় অনেকটাই সুনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
এই যুদ্ধে বীর বিক্রমে লড়াই করেন এনোমোতো তাকেয়াকি। তিনি ছিলেন বিদ্রোহীদের নেতা। তার লড়াই ও রণনৈপুণ্য তৎকালীন জাপানের রাজাকে এতোটাই মুগ্ধ করে যে, হত্যার বদলে মাত্র চার বছর তাকে কারাবাসের আদেশ দেয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি মেইজি সরকারের সাথে যোগদান করেন এবং জাপান সরকারের হয়ে বেশ কিছু পদে যোগদান করেন। এদের মাঝে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকেও বেশ কিছুকাল সাহায্য করেছিলেন তিনি।
এখন নিশ্চয়ই আপনাদের জানতে ইচ্ছে করছে দ্য আইল্যান্ড অব এযোর মেয়াদ কতদিন ছিল? মাত্র পাঁচ মাস! জানুয়ারীর ২৭ তারিখ থেকে জুনের ২৭ তারিখ পর্যন্ত। সালটা ছিল ১৮৬৯ সাল।
যুদ্ধে এযোবাসী মেইজি সরকারের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারলে পৃথিবীর মানচিত্রে হয়ত নতুন আরেকটি দেশ যুক্ত হলেও হতে পারত!
(ফিচারটি তৈরি করতে সাহায্য নেয়া হয়েছে এই সাইটের)