বর্তমানে আবহাওয়াটা কেমন যেন তাই না? দিনের বেলা সূর্যের অসহনীয় তাপদাহ আর রাত বাড়ার সাথে সাথে কেমন যেন আবহাওয়াটা ঠাণ্ডা হতে থাকে। ভোরবেলা সূর্যি মামাটার কুয়াশা ভেদ করে উঠতে বেশ কষ্টই হয় হেমন্তের সকালে। শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসছে আর সাথে আসছে নানা রকমের অসুস্থতা।
সারাদিন ক্লান্ত হয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে ঘরে ফিরে ইচ্ছা হয় ফ্রিজ থেকে পানি পান করতে। ঠাণ্ডা পানি পান করে অনেক শান্তি পাচ্ছেন তাই না? কিংবা জ্যামে দাঁড়িয়ে আছেন অনেকক্ষণ। তেষ্টায় বুক ফেটে যাচ্ছে? পাশের দোকানে সাজানো রয়েছে সারি সারি কোল্ড ড্রিংকস কিংবা বিভিন্ন আকারে আইসক্রিম। মাথার উপরে প্রচণ্ড রোদ আর আপনি খাচ্ছেন ঠাণ্ডা পানি, ড্রিংকস কিংবা আইসক্রিম, আহ! ভাবতেই শান্তি লাগে তাই না? কিন্তু এই গরমে ঠাণ্ডা যে আপনার কি বিপদ ডেকে আনছে তা আপনি ভাবতেও পারবেন না।
হয়ত আপনি রাতে সুস্থ অবস্থাতেই ঘুমাতে গেলেন কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখেন গলায় প্রচণ্ড ব্যথা কথা পর্যন্ত বের হচ্ছে না। ভাবছেন এই গরমে ঠাণ্ডা লাগে কি করে? আবার অনেকেই আমরা গলাব্যথা মানেই মনে করি টনসিলের সমস্যা, কিংবা গলা ফুলে গেলেই ধরে নেই টনিসিলাইটিস। তবে আসুন আজ প্রিয়লেখার পাতায় জেনে নেই টনসিলাইটিস কি? কেন হয়? লক্ষণ কি আর প্রতিকারটাই বা কি করে করতে হয়।
টনসিল কী?
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাদের চারটি অংশ রয়েছে।মুখের ভেতরের (লিঙ্গুয়াল, প্যালাটাইন, টিউবাল ও অ্যাডেনয়েড )এই চারটি অংশের যে কোন একটির প্রদাহ হলেই তাকে টনসিলাইটিস বলা যেতে পারে। তাই বলে সব গলা ব্যথা কিন্তু টনসিলের সমস্যা নয়। তবে একবার কারো টনসিলাইটিস হয়ে থাকলে বিভিন্ন কারণে বারবার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অনেকের ভ্রান্ত ধারনা যে শুধু শিশুরাই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে কিন্তু তা নয় যে কোন বয়সের মানুষই আক্রান্ত হতে পারেন।
টনসিলাইটিস হলে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায়-
- প্রথম লক্ষণ প্রচণ্ড গলা ব্যাথা। কঠিন খাবার গিলতে অসুবিধা হয়।
- গলার লিম্ফ গ্রন্থি বড় হয়ে গলা ফোলা মনে হয়।
- কানে ব্যাথা হতে পারে।
- গলায় ও মাড়িতে ব্যাথা হয়
- জ্বর হয়। জ্বরের সাথে কাঁপুনি হতে পারে।
- মাথাব্যাথাসহ শরীর ,হাত- পা ব্যাথা হয় অনেকের।
- মুখে দুর্গন্ধ হয়।
- টনসিল দেখতে লাল হয়ে যায় ও এর উপর সাদা সাদা বা হলুদ দাগ দেখা যায়
- টনসিল ফুলে শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে যায় ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
- গলার স্বর পরিবর্তিত হয়।
- গলা খুশ খুশ করে। কাশি হয়।
- গিলতে অসুবিধা হওয়ায় পানি না খেয়ে ডিহাইড্রেশন দেখা দিতে পারে।
- বাতজ্বর এমনকি রিউমেটিক হার্ট ডিজিজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- গলার অন্যান্য স্থানে পেরিটনসিলার এবসিস দেখা দিতে পারে।
আসুন তবে জেনে নেই রোগের প্রতিকার-
- টনসিলাইটিস হলে বেশি বেশি তরল খাবার ও গরম পানীয় পান করতে হবে। গরম স্যুপ, জাউ বা খিচুড়ি নরম করে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।
- আদা, এলাচ ও লবঙ্গ দিয়ে লবণ গরম পানি পান করলে আরাম পাওয়া যায়।
- গলায় ঠান্ডা লাগানো যাবে না।
- যেহেতু তীব্র ব্যথা থাকে এবং জ্বর থাকে,সে ক্ষেত্রে জ্বরের ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া যেতে পারে।
- যদি ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়, তাহলে রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে।
- ভাইরাসের জন্য হলে পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়। সে ক্ষেত্রে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে।
- চিকিৎসার পর উপসর্গ চলে গেলেও টনসিলের আকৃতি ছোট হতে কিছুটা সময় নেয়। কয়েক মাস পর্যন্ত টনসিল বাড়তি আকৃতিতেও থাকতে পারে।
- রোগীকে অবশ্যই পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে।
- সমস্যা খুব বেশি হলে অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে অস্ত্রোপচারও করতে হতে পারে।
ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টায় নিজের খেয়াল রাখুন। হয়ত আপনার একটু সাবধানতায় পারে আপনার সুস্থতা নিশ্চিত করতে। ভালো থাকুন, ভালো রাখুন আর প্রিয়লেখার সাথে থাকুন।
তথ্য ও ছবি সুত্রঃ ইন্টারনেট