সম্পর্কে ‘ পারফেক্ট রিলেশনশিপ ’ বলতে আসলে দুনিয়ায় কোন কিছু নেই। প্রতিটি সম্পর্কে’ই কোন না কোন খুঁত থাকবেই। কোন সম্পর্কই স্বর্গ থেকে নেমে আসে না, দুজন মানুষকে মিলেই নিজেদের মত করে সেই সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়। আর সেই সম্পর্ক গড়ে তুলতে গিয়ে নানা রকম ভুলচুক করেন অনেকেই। তবে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইলে কিছু জিনিস আপনাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। তেমনই কিছু টিপস আজ থাকছে প্রিয়লেখার পাতায়।
গোপন করবেন না ; সঙ্গীর মন পড়তে যাবেন না
অনেক কথা থাকে যা বাইরের সবার সাথে শেয়ার করা সম্ভব হয় না। কিন্তু নিজের সঙ্গীকে বাইরের লোকেদের সাথে গুলিয়ে ফেলার ভুল করতে যাবেন না। সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করার অন্যতম সূত্র সঙ্গীর কাছে মনের বাঁধন খুলে দেয়া। অন্যদের কাছে যা বলতে পারবেন না, তা নির্দ্বিধায় বলে ফেলুন সঙ্গীর কাছে। সম্পর্কে কোন সমস্যা হলে ভেতরে চেপে রাখবেন না, সঙ্গীর সাথে খোলা মনে আলোচনা করুন, তারপর দুজনে মিলে সেটা মিটিয়ে ফেলুন।
তবে স্বভাবগতভাবেই অনেকে আছেন যারা একটু চুপচাপ থাকতে পছন্দ করেন, কিংবা সব কথা শেয়ার করতে চান না। সে ক্ষেত্রে সঙ্গী আগ বাড়িয়ে ‘মাইন্ড রিড’ করতে গেলে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। আপনার সঙ্গীকে বোঝান, তাকে উৎসাহিত করুন নিজের মনের কথা খুলে বলতে।
সঙ্গীকে নিজের সর্বস্ব বানিয়ে ফেলবেন না
দুজন দুজনকে অবশ্যই ভালোবাসবেন, কিন্তু সেই ভালোবাসা যেন পাগলামির পর্যায়ে না চলে যায়। নিজের ব্যক্তিত্ব আর স্বাতন্ত্র্যতা কখনোই হারিয়ে ফেলবেন না। সঙ্গীর পছন্দকে গুরুত্ব দিন, কিন্তু তাই বলে নিজের মতামত প্রকাশের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবেন না। যেটা আপনার পছন্দ, কিংবা পছন্দ না, সেটা সঙ্গীকে বলার মত ব্যক্তিত্ব বজায় রাখুন। নিজের মূল্যবোধ জলাঞ্জলি দেবেন না। আপনার জীবন যেন একজন ব্যক্তিকেন্দ্রিক না হয়ে পরে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
জেতার জন্য মরিয়া হবেন না
সঙ্গীর পছন্দ অপছন্দকে সম্মান করুন, গুরুত্ব দিন। নিজের মতামতকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে জোর খাটাবেন না। আপোষ করতে শিখুন। কখনো আপনি আপোষ করবেন, কখনো বা আপনার সঙ্গী- এভাবেই গড়ে উঠবে সুস্থ সুন্দর সম্পর্ক।
চেষ্টা করা থামিয়ে দেবেন না
অ্যারেঞ্জড ম্যারেজে অনেক সময় শুরুতে দুজনের খাপ খাইয়ে নিতে সমস্যা হয়, বনিবনা হয়না। সেক্ষেত্রে কিছুদিন চেষ্টা করার পর হাল ছেড়ে দেবেন না। চেষ্টা করুন সঙ্গীকে বুঝতে, নিজেকে বুঝাতে। তার পছন্দ অপছন্দ জানতে চেষ্টা করুন, এক্ষেত্রে সঙ্গীর বন্ধু-বান্ধবীদের সাহায্য নিতে পারেন। তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন, সঙ্গীর ভালো লাগার জিনিসগুলো জেনে নিন। সঙ্গীর ছোট ভাই বোনের থেকেও অনেক সাহায্য পেতে পারেন চেষ্টা করলে।
সঙ্গীর প্রাপ্য সময় কাজকে দিয়ে দেবেন না
এই সমস্যায় ভুগতে দেখা যায় বেশিরভাগ দম্পতিদেরই। সম্পর্ক একটু পুরনো হলেই যেন সঙ্গীর জন্য সময় কমতে থাকে, আর কাজের জন্য সময় বাড়তে থাকে। এই ভুল করবেন না। কাজের যতই চাপ থাকুক, সঙ্গীর প্রাপ্য সময় থেকে তাকে বঞ্চিত করবেন না। বেশি চাপ থাকলে সঙ্গীকে বোঝান আপনার অবস্থা, তারপর চাপ কমলে সঙ্গীকে একটু বেশি সময় দিন। একটা সন্ধ্যা বাইরে একসাথে কাটানো, ছোট কিছু উপহার, সঙ্গীর পছন্দের কোন সিনেমা একসাথে দেখা- এসব ছোটখাট জিনিসেও খুশি হতে পারেন আপনার সঙ্গী।
সঙ্গীকে কখনোই অন্যের সাথে তুলনা করবেন না
‘অমুকের স্বামী তো আমাকে এইটা এনে দিয়েছে, তুমি দিচ্ছ না কেন’, ‘তমুকের স্ত্রী এত ভালো রান্না করে তুমি পারো না কেন’- সাংসারিক জীবনে এসব অভিযোগ বিরল নয়। অন্যের সাথে নিজের সঙ্গীকে তুলনা করার এই ভুল অনেকেই করে থাকেন, তাৎক্ষণিক কোন প্রভাব না ফেললেও যা দীর্ঘ মেয়াদে সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারে। মনে রাখবেন প্রতিটি মানুষই আলাদা, ভুলেও তাই অন্যের সাথে নিজের সঙ্গীর তুলনা করতে যাবেন না। এতে সঙ্গীকে ছোট করা হয়, আপনার প্রতি তার সম্মানবোধও কমে আসে। সঙ্গীকে তুলনা না করে বরং উৎসাহিত করুন, দেখবেন আপনা আপনিই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।
প্রতারণা করবেন না
নিজের মানুষের থেকে প্রতারণা সহ্য করা অনেক কঠিন। অনেকেই তা সহ্য করতে না পেরে সম্পর্কে ছেদ টেনে দেন। সঙ্গীকে কখনোই ঠকাবেন না, তাকে মিথ্যা বলবেন না। প্রতারণা থেকে দূরে থাকুন, সুস্থ সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলুন।