নেভার, এভার, গিভ আপ!- জলপ্রপাতের ওপর একটি ব্রিজে চারদিকে ঘিরে রেখেছে শত্রুরা, হাতে উদ্যত অস্ত্র। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এমন সময় প্রচন্ড হুংকার ছাড়লেন অজয় কুমার (ভিভেগাম ছবিতে আজিথ কুমারের চরিত্রটির নাম)। মুখে তার স্মিত হাসি। দক্ষিণের কোন হলে গিয়ে আমি ছবিটি দেখি নি, তবে নিশ্চিত করেই বলতে পারি, প্রচন্ড উল্লাসে চিৎকার করে উঠেছেন দর্শকেরা। হলে বেজেছে চুটকি আর থালা আজিথের বন্দনা।
বলছিলাম কিছুদিন আগে মুক্তি পাওয়া আজিথ কুমারের ‘ভিভেগাম’-এর কথা। সিভা আর আজিথের তৃতীয় ছবিতে কতটুকু প্রত্যাশা মেটাতে পারলেন “এ কে”, সে কথা বলার আগে কিছু কথা বলে নিতে হয়।
সিভা এক সাক্ষাৎকারে বলেন আজিথ তার সাথে “ভিরাম” (২০১৪), “ভেদালাম” (২০১৫) করবার পর আরো ছবি করতে উন্মুখ হয়ে ছিলেন। তবে সিভা চেয়েছিলেন আজিথের জন্য আরো ভাল একটি স্ক্রিপ্ট উপহার দিতে। তাই, বিদেশের পটভূমিতে অ্যাকশন প্যাকড একটি স্ক্রিপ্ট যখন হাতে পেয়েছেন, লুফে নিতে তার দেরি হয় নি।
“তিনি (আজিথ) আমার ওপর সম্পূর্ণ ভরসা করেছেন। একজন পরিচালক কিংবা স্ক্রিপ্টরাইটার হিসেবে তার কাছে আমি যা ডিমান্ড করেছি, তার সবটুকুই তিনি আমাকে দিয়েছেন। ভিরাম ছবির জন্য তিনি যেমন আটপৌরে ধুতি পরেছেন, ঠিক তেমনি ভেদালামের জন্য নিয়েছেন একদম মানানসই লুক। আমার উপর তার বিশ্বাস আমাকে আরো প্রণোদিত করেছে ভিভেগামের সময়।”
যারা যারা ভিভেগাম দেখেছেন কিংবা দেখবেন, তাদের জন্য নিশ্চিত করেই বলা যায় থালা আজিথ এখানে তার সর্বোচ্চটি দিয়েছেন। প্রচন্ড খাটুনি, হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর কাজের প্রতি নিবেদন- এই তিনে মিলে কলিউডেরভিনেতা অভিনেত্রীদের জন্য অনেক সুনাম রয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে। তবে থালা আজিথ যেন এবার সবকিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন।
প্রতিকূল আবহাওয়ায় করেছেন স্টান্ট, তৈরি করেছেন সিক্স প্যাক, দৃষ্টিনন্দন ধাওয়া দৃশ্যে কোন ধরণের বডি ডাবলের সাহায্য তিনি নেন নি। হলিউডের অ্যাকশন ডিরেক্টর ও কোরিওগ্রাফার জোরিয়ান পোনোমারেফ ২০১৬ সালের শেষের দিকে থালা আজিথের পরিশ্রম ও কাজের প্রতি ডেডিকেশন দেখে সামাজিক ওয়েবসাইটে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, অবশ্যই থালা আজিথের আকুণ্ঠন প্রশংসা করে। জোরিয়ান হলিউডের মিশন ইম্পসিবলের মত জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজের কোরিওগ্রাফার ছিলেন।
“আজিথ স্যার বাইকের চাবিটা নিলেন। একটা ডোনাট পারফর্ম করলেন, একটু মোচড় আর সাথে ড্রিফট। আমি দেখে অবাক হয়ে গেলাম। আমি এর আগেও নায়কদের সাথে কাজ করেছি, বাইকারদের সাথে কাজ করেছি। তবে একই সাথে এই দুটির মিশেল কেউ দেখাতে পারে, এই প্রথম তা দেখলাম। এটা আমার জীবনের স্মরণীয় বাইক চেজ দৃশ্য হয়ে থাকবে।” বলেন কোরিওগ্রাফার।
ভিভেগামের যে জিনিসটি খুব ভালো লেগেছে, তা হচ্ছে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর। অনিরুধ রাভিচান্দারের গায়কী প্রতিভা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে এ ছবিতে প্রয়োজনীয় দৃশ্যে তিনি যেমন গেয়েছেন, তা যেন রক্ত টগবগ করে ফুটতে সাহায্য করেছে। প্রতিকূল পরিবেশে আজিথের শারীরিক চর্চার দৃশ্যে, মারামারি কিংবা প্রেয়সীর সাথে ভালবাসাবাসির দৃশ্যে- সবকিছুকেই চমৎকার একটি প্লেটে সাজিয়ে পরিবেশন করেছেন অনিরুধ। তার গাওয়া ‘সারভাইভা’ গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং প্রায় ৬ কোটি বারের বেশি শোনা হয়ে গিয়েছে ইউটিউবে। এছাড়াও থালাই ভিদুথালাই গানটিও বেশ এনার্জেটিক ও চমৎকার হয়েছে।
এবার আসি অন্যান্য কলাকুশলীদের কথায়। বিবেক ওবেরয়, কাজল আগারওয়াল, ডেব্যুট্যান্ট আকসারা হাসান, এমিলা তারখিমেইক নিজ নিজ স্থানে যথাযোগ্য পারফর্ম করেছেন। তবে বিবেকের চরিত্রটি আমার কাছে মনে হয়েছে থালা আজিথের কাছে অনেকটাই ম্লান হয়ে গিয়েছে। দর্শক অনেকদিন মনে রাখবে এমন কোন খল চরিত্রে তিনি হয়ত অভিনয় করেন নি, তবে স্ক্রিপ্টের প্রয়োজনে তিনি তার সাধ্যমত উজার করতে চেষ্টা করেছেন। স্ত্রীর চরিত্রে কাজল আগারওয়াল যথেষ্ট ভালই করেছেন। স্বামী আজিথের সাথে মোর্স কোডের সাহায্যে ভাব বিনিময় করার দৃশ্যে কিংবা স্বামী মিশনে যাচ্ছেন, এমন অবস্থায় হাসিমুখে তার ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছেন- এমন দৃশ্যে কাজল একেবারে পারফেক্ট অভিনয়টিই করেছেন। তবে ঘুরেফিরে একই কথাই আবার বলতে হয়। ভিভেগাম একটি ওয়ান ম্যান আর্মি ছবি। থালা আজিথ পুরো ছবিটি তার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন বিনা সংকোচে, নিজেকে উজাড় করে।
তবে হিন্দুস্তান টাইমসের মতে বেশ কিছু লুপহোল রয়েছে। যারা এ ছবিটি দেখবেন, তারাও এটি স্বীকার করবেন।
১) প্রথমত, এই ছবিটিকে রক্ষা করেছে অ্যাকশন সিকুয়েন্সগুলো। কলিউডের দর্শকরা এর আগে দেখেন নি, এমন কিছু নজরকাড়া অ্যাকশন দৃশ্যের সমাহার এই ছবিতে ঘটিয়েছেন সিভা। তবে এটি ছাড়া এই ছবির কাহিনী অনেকটাই অনুমান নির্ভর।
২) নির্দ্বিধায় বলে দেয়া যায়, এই ছবির সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য হচ্ছে হ্যাকার আকসারা হাসানের পরিচয় ফাঁস হয়ে যাবার দৃশ্যটি। সার্বিয়ার রাস্তায় ধাওয়া করার এই দৃশ্যটি খুব বেশি একটা মন টানতে পারে নি। তবে থালা আজিথের নিপুণ অভিনয় আর চেষ্টা মোটামুটি উতরে গিয়েছে।
৩) একটি অ্যাকশন থ্রিলার ছবির অন্যতম সেরা উপাদান হচ্ছে ছবির ভিলেন। সেখানে বিবেক ওবেরয়কে শুধু ক্লিশেই লাগে নি, তাকে হাস্যকর একটা ম্যাটেরিয়ালে উপস্থিত করেছে সিভার স্ক্রিপ্ট। একই ডায়লগ একাধিকবার করে বলা, পরম শত্রুর প্রশংসা করে যাওয়া দর্শক মনে প্রশ্ন যোগায়। তিনি কি হারার আগেই হেরে বসে ছিলেন?
তবে এই ছবিটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শককে টেনে রেখেছে থালা আজিথের পারফরম্যান্স, এটা বলে দেয়াই যায়। ছবিতে তার চরিত্র যতটুকু ডিমান্ড করে, তার পুরোটাই দর্শককে দেবার চেষ্টা করেছেন তিনি। তাছাড়া প্রযুক্তির সাথে বুদ্ধির ব্যবহারও এই ছবির অন্যতম উপাদান। আশা করছি, “ভিভেগাম” কলিউড ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়ে যাবে আরো নতুন এক উচ্চতায়। থালা আজিথের জন্য একরাশ শুভকামনা।
এক লহমায় ভিভেগামের প্রেক্ষাপটঃ
কাউন্টার টেরোরিজম স্কোয়াডের প্রধান ছয় মাস পর মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। তাকে ফিরে পাবার খবরে উল্লসিত বন্ধুরা। তবে পৃথিবীর অন্যতম সেরা এজেন্ট অজয় কুমারের জীবনে এই ছয় মাসে কি ঘটে গিয়েছে এবং কি কারণে ঘটেছে, তা জানতে হলে আপনাকে দেখতেই হবে ভিভেগাম।