মানুষ মাত্রই আবেগী। তার আবেগ প্রকাশ পায় তার ব্যবহারে, তার কাজে। কিন্তু বাস্তব জীবনে এই আবেগ অনেক সময়ই হয়ে দাঁড়ায় ক্ষতির কারণ। বিশেষ করে যখন আপনি মাত্র পা রেখেছেন ক্যারিয়ারের দোরগোড়ায় তখন কিন্তু হতে হয় খানিকটা কৌশলী। আর সফলতা হোক তা ব্যাক্তি জীবনে বা ক্যারিয়ারে, আপনাকে কৌশলী করে তোলে আপনার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা। জীবনে বিরূপ পরিস্থিতির শিকার আপনি হতেই থাকবেন। সইতে হবে সমালোচনা কম বেশী সবার কাছেই। জীবনের সবচেয়ে কঠিন আবেগঘন মুহূর্তেও তর্কের সৃষ্টি হবেই। আপনি হয়তো তর্ক করতে মোটেও ভালোবাসেন না, কিন্তু আপনাকে তর্ক করতে হচ্ছে। এতে দ্বন্দ্ব, উদ্বেগ এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা।অস্বস্তির বিষয় আপনি যতই বিরোধিতা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন না কেন, অন্যরা কিন্তু মুহূর্তের নোটিশে তর্ক করার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে। আপনি তর্ক করতে পছন্দ করেন না, তবে প্রয়োজনে তা করার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত। তবে বৃথা তর্ক করা কোন কাজের কথা নয়, জেতা উচিত যুক্তির বলে। যুক্তিতে যারা প্রমান করতে চান আপন যোগ্যতা, নিচের টিপস গুলো ঠিক তাদের জন্যঃ-
তথ্যে সমৃদ্ধ করুন নিজেকেঃ
জীবনের অপর নাম চ্যালেঞ্জ। এমন তো হতেই পারে কেউ আপনার মতামতের সরাসরি বিরোধীতা করল।নিজেকে আত্মগর্বে বলীয়ান না করে খুব শান্তভাবে ভাবে সমালোচনা শুনুন ও তার পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করুন। চুপ থাকা যেমন খারাপ ঠিক তেমনি নির্ভুল তথ্য ছাড়া কথা বলা নির্বুদ্ধিতা, তাই তথ্য সব লিখিত রাখুন। আপনি সবসময় নিজের ও নিজের কাজের প্রতি যদি আত্মনিবেদিত হন, তবে সুনিশ্চিত ভাবেই কেউ আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। তাই হতাশ না হয়ে নিজেকে আপন কাজে ব্যস্ত রাখুন।
অন্যের মতামতকে সমান গুরুত্ব দিয়ে বুঝার চেষ্টা করুনঃ
আপনি যদি আগে থেকেই কাউকে প্রতিপক্ষ হিসেবে গোণ্য করেন তবে তার সঙ্গে কখনোই একমত হতে পারবেন না। যাইহোক, যদি আপনি একটি ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে চান, তবে আপনাকে প্রতিপক্ষের দৃষ্টি ভঙ্গি বুঝতে সক্ষম হতে হবে। আপনি যাদের সাথে তর্ক করছেন তাদের মানসিক অবস্থান বুঝে আপনার কথা তাদের উপর কী প্রভাব ফেলবে তা নির্ধারণ করতে হবে। আপনার প্রকাশভঙ্গী কারো জন্য হুমকি, উদ্বেগজনক, বা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ভেবে নিন সম্ভবত তারা এমন কিছু জানে বা করে যা সম্পর্কে আপনার ধারণা নেই। সে ক্ষেত্রে, সহানুভূতির সহায়তা নিন। আপনার সহানুভূতি কিন্তু ভুল বোঝাবুঝি, বিতর্কের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং আপনাকে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে সমঝোতায় আসতে সহায়তা করে।
মন খোলা ভাব বজায় রাখুন:
সর্বদা আত্মরক্ষামূলক মনোবৃত্তি বজায় রাখা সাফল্য পাবার পথে বিশেষ অন্তরায়। যদি আপনি অন্য পক্ষের অবস্থান বুঝে একটি চিন্তাশীল মতামত প্রকাশ করেন , তাহলে আপনি প্রস্তাব অবশ্যই গৃহীত হবে।সবাই আপনাকে বুদ্ধিমান ও প্রফেশনাল বলে মেনে নিবে। উপরন্তু, আপনার প্রতিপক্ষের আপনার পক্ষে কথা বলবে ও আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে। এভাবে কিন্তু যে কোন সমস্যার সুন্দর সমাধান করা সম্ভব।
আপনার আবেগকে নিয়ন্ত্রনে রাখুনঃ
পরিস্থিতি আপনি কিভাবে পরিচালনা করেন তার উপর নির্ভর করে সমঝোতা কিংবা সংঘাত। আপনি যদি আপনার আবেগ বা রাগ নিয়ন্ত্রন করতে না পারেন, তবে আপনি কেবল আপনার প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করার চেষ্টা করবেন,যা তার রাগ আরও বাড়িয়ে দেবে, এবং প্রতিক্রিয়া কেবল বাড়তেই থাকবে। আপনি যদি মধ্যস্থতা করার লক্ষ্যে শান্ত ভাব বজায় রাখেন তা কিন্তু আপনার দূর্বলতার পরিচয় বহন করে না। এটি আপনার আত্ম নিয়ন্ত্রণ এর প্রয়াস মাত্র। কে জানে, তর্কে্র পর্যায় শেষ হয়ে হয়তো আপনাদের মাঝে বন্ধুত্ব গড়ে উঠবে, যদি আপনারা উভয়েই যুক্তিযুক্ত দৃষ্টিকোণ বজায় রাখেন তা সাফল্যের মাত্রাকেই বাড়াবে।
আশাবাদী মনোভাব বজায় রাখুনঃ
তর্ক বা মতভেদ, সংজ্ঞা দ্বারা প্রথম যে ভাবনা মস্তিষ্কে ও মননে খেলা করে তা নেতিবাচক আবেগের সাথে সম্পর্কিত। চিৎকার করে নিজেকে জাহির করার মধ্যে , মনে হতেই পারে আপনার আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে কিন্তু মনকে খানিকটা পরিবর্তন করে নিজেকে অপর পক্ষের অবস্থানে রেখে বিচার করুন। তাহলে আর যাই হোক নিজের ভদ্রতা ও মানবিক অনুভূতি বজায় রাখতে পারবেন। আশাবাদ অনুভূতি আকাঙ্ক্ষা আপনাকে প্রেরণা দিবে আরও স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে, আপনি যৌক্তিক বিবেচনায় যে কোন সমস্যা সমাধানের হাজারো সম্ভাব্য পথ খুঁজে পাবেন। পাশাপাশি আপনার মাঝে ফুটে উঠবে নেতৃত্বের গুনাবলী। খানিকটা ভিন্নতর চিন্তা করার সময সাধারণ সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও অসামান্য সুযোগ বের হয়ে আসে, বিশ্বাস না হলে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করেই দেখুন, ঠকবেন না নিশ্চিত।
আপনার প্রতিপক্ষকে যোগ্য সম্মান দিন:
অনেক বিতর্ক বা মতভেদেই কোন স্পষ্ট বিজয়ীর দেখা পাওয়া যায় না। কখনো আপনি জিতে যান কখনো বা আপনার প্রতিপক্ষ , কিন্তু আপনাদের এই গুমোট যুদ্ধংদেহী সম্পর্কের প্রভাব যেমন আপনার সহকর্মীদের উপর পড়ে, ঠিক তেমনি কাজের পরিবেশ নষ্ট করে। পেশা ভিত্তিক জীবনে এই পরিস্থিতি সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ । যে কোন সম্পর্কে যদি টানাপোড়েন নাই চললো তবে কিভাবে কেউ নিজের ভুল শুধরে পরিবর্তিত হবে? কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমনের সুযোগ দিবেন না। কারণ হয়তো আপনারা উভয়েই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের লক্ষ্যে জান প্রাণ বাজী রেখে লড়ছেন।পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখলে উভয়ই যেমন প্রশংসিত হবেন, ঠিক তেমনি ক্যারিয়ারে সাফল্য আসবেই।
মতভেদ বা বিতর্ককে সাধারন বার্তালাপ হিসেবে ভাবতে শিখুনঃ
যুদ্ধে আপনার সম্পূর্ণ শক্তি যদি হয় কোন একগুঁয়ে যুক্তির যার মাধ্যমে আপনাকে জিততে হবে তবে দুঃখিত, বলতে বাধ্য হচ্ছি আপনি আপনার বিবেক কে কাজে লাগাচ্ছেন না। মতভেদ কে ভাবুনশুধুমাত্র একটি কথোপকথন বা পরামর্শ। তাহলে দেখবেন সংঘাত এড়িয়ে কাজের গতির পাশাপাশি সম্পর্কের গতিতেও আন্তরিকতার জোয়ার বইছে।
সবসময় প্রফেশনাল হতে চেষ্টা করুন তবে ভদ্রতা ও শিষ্টাচার বজায় রেখে:
কাজের ব্যাপারে বিরোধ ঘটা, ব্যক্তিগত সম্পর্কে মতভেদ স্বাভাবিক ব্যাপার। হাতের পাঁচ আঙ্গুল তো আর সমান নয়। তাই বলে তর্কে কখনোই ভুলে যাবেন না সামনে আপনার প্রতিপক্ষ কে, কারণ আপনি যে ব্যবহার করবে সে তার জবাব কিভাবে দিবে আপনি জানেন না। তাই আবেগের বশবর্তী হয়ে আরেকজঙ্কে অন্তত ব্যক্তিগত আক্রমন করতে যাবেন না। মতভেদের সময়, নিজেকে বিক্রেতা ভাবতে শিখুন তাতে অন্যের আবেগ এর পাশাপাশি নিজের আবেগের রাশ ও টেনে ধরে রাখতে পারবেন।
শেষ করছি ইংরেজ কথা সাহিত্যিক টি.এস.এলিয়ট এর একটি উদ্ধৃতি দিয়ে, “একজন আদর্শ বিক্রেতা, একজন জনপ্রিয় বক্তা, এবং গুণী শিক্ষকরা জানেন যে বাস্তব ঘটনা পরিপ্রেক্ষিতে কাউকে বোঝানো যায় না, কাউকে বোঝাতে, পথ দেখাতে হৃদয়বৃত্তিক আবেগের ও প্রয়োজন থাকে,”।
কোন ব্যক্তির হৃদয়ের তারে সাড়া দিতে টানতে, শিল্পীর তুলিতে চিত্র আঁকাতে তাদের আন্তরিকতা ও অনুপ্রেরণাকে জাগরূক করতে হয়।
আজ এই পর্যন্তই। আশা করছি প্রিয়লেখা আপনাদের প্রিয়মুখে ফুটিয়ে তুলবে হাসি। প্রিয়লেখার সাথেই থাকুন।