শুরু হয়ে গেছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের নতুন মৌসুম। মৌসুম শুরুর আগেই দলবদলের বাজারে নতুন রেকর্ড দেখেছে ফুটবল বিশ্ব। তবে শুধু মাঠের বাইরে নয়, এই মৌসুমে মাঠের কীর্তিতেও ভাঙার সম্ভাবনা আছে বেশ কিছু রেকর্ডের। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন থেকে রায়ান গিগস, থিয়েরি অরি থেকে পাওলো মালদিনি, এই মৌসুমে ভাঙ্গতে যাচ্ছে বেশ কয়েকটি বড় রেকর্ড। সেগুলতেই একবার চোখ বুলিয়ে নিন।
প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকার রেকর্ড:
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে যথারীতি বিদায় নিয়েছেন শেষ আটের আগে, লিগের আশাও শেষ হয়ে গিয়েছিল অনেকটা আগেভাগেই। গত মৌসুমে তাই অনেকবারই ‘ওয়েঙ্গার হটাও’ স্লোগান উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তা হয়নি, বরং আরও দুই মৌসুমের জন্য চুক্তি নবায়ন করেছেন এই ফ্রেঞ্চ ম্যান।
আর্সেনালের শিরোপার অপেক্ষা ঘুচবে কিনা তা মৌসুম শেষে বলা যাবে, তবে খুব অপ্রত্যাশিত কিছু না ঘটলে এই মৌসুমে একটা রেকর্ড ভাঙ্গতে যাচ্ছেন ওয়েঙ্গার। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনকে পেছনে ফেলে প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করা কোচ হবেন ওয়েঙ্গার। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ৮১০ ম্যাচে ডাগআউটে দাঁড়িয়ে রেকর্ডটি এখনো স্যার ফার্গির। লেস্টার সিটির বিপক্ষে জয় দিয়ে মৌসুম শুরু করা আর্সেনাল কোচের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি এখন ৭৯১। অপ্রত্যাশিত কিছু না ঘটলে এই মৌসুমেই তাই ফার্গিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন ওয়েঙ্গার।
প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড:
একজনের প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা ১৩ টি, আরেকজনের ১ টি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি রায়ান গিগসের সাথে গ্যারেথ ব্যারির কোন তুলনাই চলে না।
কিন্তু সেই ব্যারিই এই মৌসুমে ভেঙ্গে দিতে চলেছেন গিগসের রেকর্ড। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ৬৩২ বাড় প্রিমিয়ার লিগে মাঠে নেমেছেন গিগস, প্রিমিয়ার লিগে যা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড। অ্যাস্টন ভিলা, ম্যানচেস্টার সিটি ঘুরে এখন এভারটনে খেলা ব্যারি পৌঁছে গেছেন সেই রেকর্ডের খুব কাছাকাছি। ১৮ বছর ধরে প্রিমিয়ার লিগে খেলা ব্যারির ২০১৭-১৮ মৌসুমে মাঠে নামার আগে মোট ম্যাচ সংখ্যা ৬২৮। আর মাত্র ৫ টি ম্যাচে মাঠে নামলেই রেকর্ডটি নিজের করে নেবেন ব্যারি।
প্রিমিয়ার লিগের এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড:
হ্যারি কেইন দাবি করতে পারেন, ইনজুরির কারণে ৮ ম্যাচ বাইরে বসে না থাকতে হলে গত মৌসুমেই হয়তো রেকর্ডটা ভেঙ্গে দিতে পারতেন ইংলিশ স্ট্রাইকার। মাত্র ৩০ ম্যাচেই ২৯ গোল করে অ্যান্ডি কোল (১৯৯৩-৯৪) ও অ্যালান শিয়ারারের (১৯৯৪-৯৫) ৩৪ গোলের রেকর্ডের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। কোল ও শিয়ারারের সময় আবার লিগ হত ৪২ ম্যাচের।
৩৮ ম্যাচের লিগে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড এরও খুব কাছে চলে এসেছিলেন কেইন গত মৌসুমে। ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে ৩৮ ম্যাচের লিগে ৩১ গোল করেছিলেন শিয়ারার, পরে ২০০৭-০৮ মৌসুমে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও ২০১৩-১৪ মৌসুমে লুইস সুয়ারেজও করেন ৩১ গোল।
এই মৌসুমেও কেইনের আগের মৌসুমের মত বিধ্বংসী রূপে দেখা দেয়ার ভালো সম্ভাবনা আছে। সেক্ষেত্রে শিয়ারারের দুটি রেকর্ডের যেকোনো একটি অন্তত কেইন ভেঙ্গে দিতেই পারেন। কেইন ছাড়াও এই রেকর্ডে ভাগ বসাতে পারেন এমন স্ট্রাইকারও অবশ্য আছেন প্রিমিয়ার লিগে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নতুন সাইনিং রোমেলু লুকাকু গত মৌসুমে এভারটনের হয়ে করেছেন ২৫ গোল। চেলসির নতুন তারকা আলভারো মোরাতা প্রিমিয়ার লিগের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারলে তিনিও চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন শিয়ারারকে। এছাড়া লিগের প্রথম ম্যাচে দুই মিনিটের মধ্যেই গোলের দেখা পাওয়া আর্সেনালের আলেক্সান্দ্রে লাকাজাত্তের দিকেও চোখ রাখতে হবে। প্রথম ম্যাচেই জোড়া গোল করে জেমি ভার্ডিও নিজের দাবি জানিয়ে রেখেছেন।
প্রিমিয়ার লিগের এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্টের রেকর্ড:
প্রিমিয়ার লিগের এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্টের রেকর্ডের মালিকের নাম জানলে হয়তো কিছুটা অবাক হতে পারেন আপনি। তাঁর মূল কাজ ছিল গোল করা। সেটা করার পাশাপাশি সতীর্থদের গোলে সহায়তা করার কাজটাও ঠিকঠাক ভাবেই করতেন থিয়েরি অরি। যার প্রমাণ, ২০০২-০৩ মৌসুমে একাই ২০ অ্যাসিস্ট করেছিলেন অরি। প্রিমিয়ার লিগের এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্টের রেকর্ড হিসেবে যা এখনো টিকে আছে। গত কয়েক মৌসুমে কেভিন ডি ব্রুইন, সেস্ক ফ্যাব্রিগাস, মেসুত ওজিলরা রেকর্ড ভাঙার কাছাকাছি গেলেও ভাঙ্গতে পারেননি কেউ।
গত মৌসুমে সিটিকে ৩য় স্থানে নেয়ার পাশাপাশি ৩৬ ম্যাচে ১৮ অ্যাসিস্ট করেছিলেন সিটির বেলজিয়ান রিক্রুট ডি ব্রুইন। এবার আরও শক্ত দল গড়েছেন পেপ গার্দিওলা, ডি ব্রুইন তাই রেকর্ড ভাঙার আশা করতেই পারেন।
তবে অরিকে ছোঁওয়ার সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছিলেন মেসুত ওজিল, ২০১৫-১৬ মৌসুমে। জার্মান এই সৃষ্টিশীল ফুটবলার সেবার করেছিলেন ১৯ অ্যাসিস্ট। ওজিল ছাড়াও এবার চোখ রাখতে হবে টটেনহাম হটস্পারের ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের দিকেও।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড:
রাউল গঞ্জালেজকে ছাড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন বহু আগেই। তারপরেও অবশ্য ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো একটা জায়গায় এখনো রাউলের পেছনেই আছেন। রোনালদোর ১০৬ গোলের ৫৫ টি এসেছে নকআউট পর্বে, আর ৫১ টি গ্রুপ পর্বে। অপরদিকে রাউলের ৭১ গোলের ৫৩ টিই এসেছে গ্রুপ পর্বে। এই মৌসুমে গ্রুপ পর্বে আর মাত্র ৩ টি গোল করতে পারলেই গ্রুপ পর্বের সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনটাও রাউলের থেকে ছিনিয়ে নেবেন রোনালদো।
ইতালিয়ান লিগে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড:
আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, এই মৌসুমই হবে তাঁর শেষ মৌসুম। অবসরে যাওয়ার আগে শেষ মৌসুমেও অবশ্য বড় একটি রেকর্ড করেই বিদায় নেবেন কিংবদন্তি জিয়ানলুইজি বুফন। সিরি আ এর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডটি এসি মিলান কিংবদন্তি পাওলো মালদিনির অধিকারে। রেকর্ড ৬৪৭ ম্যাচে মাঠে নেমেছেন তিনি। বুফন নেমেছেন ৬১৯ ম্যাচে। এই মৌসুমে ২৯ ম্যাচ খেলতে পারলেই রেকর্ডটা নিজের করে নেবেন বুফন।
লা লিগায় এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি দলীয় গোলের রেকর্ড:
২০১১-১২ মৌসুমে হোসে মরিনহোর শিরোপা জয়ী মাদ্রিদ দল পুরো লা লিগায় ১২১ গোল করেছিল, লা লিগার এক মৌসুমে যা সর্বোচ্চ দলীয় গোলের রেকর্ড। এরপর থেকে প্রতি মৌসুমে গোলের সেঞ্চুরি করাটাকে একপ্রকার অভ্যাসই বানিয়ে ফেলেছে মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা।
গত মৌসুমেই যেমন জিদানের মাদ্রিদ গোল করেছে ১০৬ টি, ২য় স্থানে থাকা বার্সা করেছে ১১৬ টি। রোনালদো ও মেসি যদি এবারো তাদের বিধ্বংসী ফর্ম ধরে রাখতে পারেন, কে জানে এবার হয়তো গোলের রেকর্ডটা ভেঙ্গেই যাবে!
সবচেয়ে বেশি মেজর ট্রফি:
ক্লাব ফুটবলে কোন একজন ফুটবলারের সবচেয়ে বেশি মেজর ট্রফি জয়ের রেকর্ড ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার ম্যাক্সওয়েলের দখলে। পিএসজি, বার্সেলোনা, ইন্টার, আয়াক্স ও ক্রুজেইরোর হয়ে খেলা ম্যাক্সওয়েল মোট মেজর ট্রফি জিতেছেন ৩৭ টি।
এই মৌসুমেই সেই রেকর্ডে ভাগ বসাতে পারেন পিএসজির ব্রাজিলিয়ান রাইটব্যাক দানি আলভেজ। পিএসজিতে এসেই একটি শিরোপা জেতা আলভেজের জেতা মেজর ট্রফির সংখ্যা ৩৬ টি, আরেকটি জিতলেই ছুঁয়ে ফেলবেন ম্যাক্সওয়েলকে।
ফ্রেঞ্চ লিগে টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয়ের রেকর্ড:
গত মৌসুমে লিগ জয়ের পথে শেষ ১২ টি ম্যাচ টানা জিতেছিল মোনাকো। নতুন মৌসুমেও টুলুজকে ৩-২ গোলে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছে লিওনার্দো জার্দিমের দল। সামনের ম্যাচে দিজনকে হারাতে পারলে ফ্রেঞ্চ লিগে বোর্দোর টানা ১৪ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবে মোনাকো। আর পরের ম্যাচে মেটজকে হারাতে পারলে রেকর্ডটা নতুন করে নিজেদের নামে লিখবে মোনাকো।
তথ্য ও ছবি সূত্র- গোল ডট কম