তোকে কত বলেছিলাম পড়তে। আমার কথা শুনলি না। এবার হলো তো?
আরো বেশি করে মোবাইল নিয়ে পরে থাক এখন।
তোকে দিয়ে কিছুই হবে না।
এত কষ্ট করে তোকে পড়ালাম! কি লাভ হল?
সব আমার কপাল!
পাশের বাসার মেয়েকে দেখ! রাত দিন পড়ে এখন তার ফল ঠিকই পেয়েছে।
গতকাল থেকে এই ধরণের আরো হাজারো কথা ইতোমধ্যেই শোনা হয়ে গিয়েছে অনেকের। হ্যা, যাদের কথা বলছি তাদের গতকাল এইচ এস সি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। অনেকের পরীক্ষার ফলই আশানুরূপ হয় নি। তাই বলে ভেঙে পড়লে চলবে না। আমাদের বাবা মায়ের প্রত্যাশা আমাদের কাছে অনেক বেশি থাকে, থাকবে এবং এটাই স্বাভাবিক। বিপত্তিটা তখনই বাঁধে যখন আমরা তাদের আশার অনুরুপ কিছু দিতে পারি না। পরীক্ষার ফলাফল অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তবে এর সাথে এটিও মনে রাখতে হবে যে পরীক্ষার ফলাফল শুধু সময়ের সাথে আসা একটি পালক মাত্র। পাশের বাড়ির ওপরের তলার ভাবীর মেয়ে পরীক্ষায় ভালো করেছে, তাই বলে নিজের ঘরে যেমন অশান্তি আসে; ঠিক তেমনি একটি “জিপিএ ফাইভ” বাবা মায়ের কানে মধু বর্ষণ করে নিশ্চিতভাবেই।
কিছু কথা বলি। জিপিএ ফাইভ কিংবা এ প্লাস কতটুকু মূল্যায়ন করতে পারে একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত মেধার, সেটি যেমন প্রশ্নবিদ্ধ, ঠিক তেমনি একটি ধাপের পর আরেকটি ধাপ আরো কঠিনতর হবে এটিও অনুমেয়। এস এস সি, এইচ এস সি এর পরপরই আসে মহাযুদ্ধ। একে বলা হয় ভর্তিযুদ্ধ। এই মহাযুদ্ধে যারা টিকে থাকতে পারবে, বিজয়মাল্য তাদের গলাতেই উঠবে। একইসাথে আজকের এই পরীক্ষার ফলাফল কারো কাছে কেউ জিজ্ঞাসাও করবে না। কারণ, মানুষ সর্বদা চায় একটি ভালো প্রতিষ্ঠান এবং ভালো ভবিষ্যতের বুনিয়াদ। পরীক্ষার ফলাফল অবশ্যই এখানে একটি ভিত্তি তবে একমাত্র ভিত্তি নয়।
হ্যা, ভর্তি পরীক্ষার কথাই বলছি। এই পরীক্ষাতে যারা ভালো করবে, তারাই দেশের নামীদামী প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাবে। তাই হতোদ্যম না হয়ে আসন্ন দিনগুলোর জন্য প্রস্তুতি নেয়াটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। অনেকে নানা ধরণের মোটিভেশনাল কথা বলবে। যেমন ড্রপ আউটদের কথা, বিজ্ঞানীদের কথা, বিখ্যাত সব মানুষদের কথা।
কে এফ সির প্রতিষ্ঠাতা জীবনের ৬৫ বছর বয়সে গিয়ে সফলতা পান, যার ফলশ্রুতিতে আমরা আজ কে এফ সির সুস্বাদুর চিকেনের স্বাদ পাচ্ছি। আমার কথাটিও ঠিক এ জায়গাটিতেই। জীবন এখানেই শেষ হয়ে যায় নি। সামনে সুযোগ রয়েছে, নিজেকে আরেকবার প্রমাণ করার প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। নিজেকে হতাশ ভাবার কারণ নেই এবং এটিকেই শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
বাবা মা এই সময়টায় একটু বকাঝকা করবেনই। এটিকে মনে পুষে রেখে যদি আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় আশানুরূপ প্রস্তুতি গ্রহণ করা না হয়, তাহলে বিপর্যয় ঘটতে পারে। অনেক প্রেক্ষাপটই মাথায় নিতে হবে। এটি স্বাভাবিক কেউ কেউ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা দেবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তাদের কেউ কেউ হয়ত হতাশ হয়ে যেতে পারেন ফলাফলের কারণে। “আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না” – এই ধরণের মনোভাব নিয়ে অনেকে প্রকট ডিপ্রেশনে পরে যান। আখেরে এটি কোন ভালো কিছু বয়ে আনবে না। আর শুধুমাত্র নিজের দিক চিন্তা না করে আশেপাশের দিকে তাকানোটাও একটু ভালো হবে। পার্থক্য করতে হবে, কার ফলাফল ভালো হল, আশেপাশের ফলাফলের পরিস্থিতি কি- সেটি নিয়েও চিন্তা করতে হবে। এ বছর দেশে এইচ এস সি পরীক্ষার্থীদের ফলাফল সকলেরই খুব বেশি ভালো হয় নি। তাই নিজের অবস্থানের সাথে অন্যের অবস্থান তুলনা করে একটা কম্পেয়ারিং গ্রাউন্ড তৈরি করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা ভালো হবে।
রীতিমত প্রস্তুতি এখনই শুরু করে দেয়া প্রয়োজন কারণ, সময় খুব বেশি একটা নেই। এখনই ডিসিশন নিয়ে বুদ্ধিমানের মত কাজ করা উচিত। মোটিভেশন এক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করতে পারে। এর আগে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন বা পরিচিত যারা এই সময়টা পার করেছেন, তাদের কাছ থেকে কিছু পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে, মানুষের কথাকে আমলে না নেয়া। অনেকে অনেক কথা বলবে এসময়। এসব কথা যদি কানে নিয়ে গোঁজ ধরে বসে থাকা হয়, তাহলে ‘আমও গেল, ছালাও গেল’ ধরণের বিপদে পরার সম্ভাবনা অনেক বেশি। নিজের শক্তিশালী অংশটি ও দূর্বল অংশটি যাচাই করে নিয়ে সে বিষয়ের ওপর প্রস্তুতি গ্রহণ করা সবচেয়ে ভালো হবে।
হতে পারেন আপনিও ভবিষ্যতের সব চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কিংবা নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে, মেডিকেলে, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছেন। তার জন্য চাই কঠোর প্রস্তুতি, এই সংকটময় পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার মানসিকতা ও উদ্যম।
অবশ্যই আপনাদের দিয়েই হবে। আপনারাই পারবেন।
আজ আর নয়। প্রিয়লেখার সাথেই থাকুন, সকলের প্রিয় হয়ে উঠুন।