আচ্ছা, আপনারা কেমন ধরণের খাবার পছন্দ করেন? বাড়ির তৈরি সুস্বাদু খাবার নাকি রেস্তোরাঁর খাবার? অনেকে আবার বিভিন্ন কাজে তাদের সারাদিন বাইরে বাইরে কাটে বলে বিভিন্ন ধরণের রেস্তোরাঁর খাবার খেতে পছন্দ করে। আমাদের দেশের খাবার ভিত্তিক জনপ্রিয় সব গ্রুপ কিংবা পেজগুলোতে গিয়ে ঢুঁ মারলে তাজ্জব হয়ে যেতে হয়। এর কারণ হচ্ছে, সবসময়ই সেখানে ভোজনরসিকদের আনাগোনা থাকে এবং তারা বিভিন্ন ধরণের খাবার, তাদের মান এবং স্বাদে কেমন, তা নিয়ে কথাবার্তা বলতে থাকেন। খাবার নিয়েও যে এক ধরণের হাইপ তৈরি করা যায়, তা আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন দেশের খাবার বিষয়ক অনুষ্ঠানগুলোতে।
এবার আসা যাক একটু ভিন্নধর্মী খাবারগুলোতে। রাস্তার পাশের খাবার কি কখনো খেয়েছেন বা হরহামেশাই খাওয়া পড়ে? কেউ কেউ এগুলো অস্বাস্থ্যকর বলে এড়িয়ে যান আবার কেউ কেউ একদম পছন্দ করেন না বলেই সেখানে ঘেঁষতে চান না। কিন্তু তবুও দেখা যায় যে, ভ্যানগাড়িতে বিশাল উনুনে সেঁকা হচ্ছে ছোট ছোট লুচি সদৃশ বস্তু এবং গরুর ভুঁড়ি কিংবা মগজের বস্তু। খাদ্যমানের দিক থেকে এগুলো কেমন তা বলাই বাহুল্য কিন্তু কাউকে কাউকে দেখা যায় তা-ই বেশ আয়েশ করে খেয়ে নেন।
ঝালমুড়ি, বিভিন্ন ধরণের আচার, ছোলামাখা ইত্যাদি নানা ধরণের খাবারকে আমাদের দেশে স্ট্রিট ফুডের আওতায় আনা যেতে পারে। আসুন আজ আমরা জেনে নেই বিশ্বের কয়েকটি দেশের নামকরা কিছু স্ট্রিটফুডের উদাহরণ। মানুন কিংবা নাই মানুন, নানা দেশ থেকে পর্যটকরা আসেন এই স্ট্রিটফুডগুলো চেখে দেখতে।
১) জামাইকার জার্ক চিকেনঃ
স্বাদের দিক থেকে ধরতে গেলে জামাইকার এই চিকেনের পদটি অত্যন্ত সুস্বাদু। এই চিকেন তৈরি করার রেসিপি কি, তা এর রাঁধুনিরা বলতে চান না। স্কচ বনেট চিলি, আদা, পেঁয়াজ, ম্যারিনেড ইত্যাদি সহকারে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে জার্ক চিকেন। কোন কোন সময় রাঁধুনিরা সারারাত এর স্বাদ ভালোমত মিশে যাবার জন্য পিমেন্টো কাঠে গ্রিল করে থাকেন। জামাইকার রাস্তার পাশে বেশ কম খরচে সহজেই সুস্বাদু এই স্ট্রিট ফুডের খোঁজ পাওয়া যাবে।
২) সিঙ্গাপুরের চিলি কাঁকড়াঃ
১৯৫০ এর দশকে চের ইয়াম তিয়ান নামক এক ভদ্রলোক ছোট গাড়িতে করে মজাদার এই পদটি বিক্রি করতেন। সিঙ্গাপুরের রাস্তায় ছোট ছোট দোকানে খুঁজে পাওয়া যাবে সুস্বাদু এই ডিশের। এটি তৈরি করা হয় যব, টমেটোর তৈরি এক ধরণের সস, ডিম এবং অবশ্যই, চিলির সাহায্যে। কাঁকড়ার মজাদার এই ডিশটি সিঙ্গাপুরের অধিবাসীরা বেশ মজা করে খেয়ে থাকে।
৩) কলাম্বিয়ার অ্যারেপাসঃ
অ্যারেপাস হচ্ছে ভুট্টার তৈরি এক ধরণের গোলাকার কেক। এই কেকের স্বাদ ও গন্ধে ভোজনরসিক খুঁজে পায় কলাম্বিয়ার গ্রামের এক চিরচেনা আস্বাদন। এই কেকের টপিং করা হয় পনিরের সাহায্যে। মোড়কে পেঁচিয়ে দেবার আগমুহুর্তে এটিকে গ্রিলড করা হয়ে থাকে। কলাম্বিয়ার রাজধানী বোগোতার অধিবাসীরা অ্যারেপাসের সাহায্যে তাদের সকালের নাস্তাটি সেরে থাকেন।
৪) ফিলিপাইনের মজাদার খাবার হালো-হালোঃ
ফিলিপাইনের প্রখর তীব্র রোদে হালো-হালো আপনাকে দিতে পারে একটি শীতল মজাদার স্বাদ। এটি শুনেই বুঝতে পারছেন হালো-হালো হচ্ছে এক ধরণের আইসক্রিম। ঠিক তাই, এটি মূলত এক ধরণের সান্ডি। নানা ধরণের ফল, নারকেল, বিন, রং ও সিরাপের সাথে তৈরি করা হয়ে থাকে হালো-হালো। এর মানে হচ্ছে “মিশ্র-মিশ্র”। আক্ষরিক অর্থেই হালো-হালো হচ্ছে শীতল একটি স্বাদের বিস্ফোরণ। দুধ ও বরফের কুচির সাহায্যে পরিবেশন করা হয় হালো-হালো।
৫) দক্ষিণ আফ্রিকার বানিচাউঃ
“বানি” নাম শুনে ভয় পাবার কিছু নেই। কারণ, এই খাবারের মাঝে খরগোসের কোন মাংস নেই। খাবারটি তৈরি করা হয়ে থাকে একটি বড়সড় পাউরুটির ওপরে এবং মুরগি থেকে শুরু করে নানা ধরণের মাংস দ্বারা এই খাবারটি তৈরি করা হয়ে থাকে। সাধারণত বানি চাউ নামক খাবারটি কারির সাহায্যে প্রস্তুত করা হয়। খাবারটি মূলত ভারতীয়দের তৈরি তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে এটি একটি অন্যতম প্রিয় খাদ্য।
সবশেষে একটি কথা।
এই খাবারগুলো স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে স্ট্রিট ফুডগুলো যেমন অস্বাস্থ্যকর ও অসুস্থ পরিবেশে তৈরি করা হয়ে থাকে, ওপরে বর্ণিত এই দেশগুলোতে খাবার তেমনভাবে তৈরি করা হয় না। সারা বিশ্বে তাই ছড়িয়ে পড়েছে এসব খাবারের সুনাম ও যশ। তাই আসুন আজ থেকে খাবার খাই স্বাস্থ্যসম্মত ও রুচিশীল।
প্রিয়লেখার সাথেই থাকুন, সকলের প্রিয় হয়ে থাকুন।