ভারতীয় ক্রিকেট দলের জন্য এ যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া। একে তো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে হেরে খোঁয়াতে হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা, তার সাথে যোগ হয়েছে লজ্জার আরেকটি রেকর্ড। কোনো আইসিসি ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনালে রানের দিক থেকে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের নিজেদের লজ্জাজনক রেকর্ডটি নতুন করে লিখেছে বিরাট কোহলির ভারত।
নিজেদের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শিরোপা জয়ের পথে ভারতকে ১৮০ রানে বিধ্বস্ত করেছে পাকিস্তান। কোন আইসিসি ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনালে রানের দিক থেকে এটিই সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের রেকর্ড। লজ্জার এই রেকর্ডটি এর আগেও ভারতের দখলেই ছিল, ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে জোহানেসবার্গে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১২৫ রানের হারটাই ছিল এতদিন আইসিসি ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনালে সবচেয়ে বেশি রানে হারার রেকর্ড।
আরও আশ্চর্যের বিষয় হল, যেকোনো ওয়ানডে ফাইনালে সবচেয়ে বেশি রানের হারার রেকর্ডটিও ভারতের দখলেই! ২০০০ সালে কোকাকোলা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে ২৪৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল ভারত।
শারজার ফাইনালে সনাথ জয়াসুরিয়ার ১৮৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংসের পরেও বাকি ব্যাটসম্যানদের যোগ্য সংগতের অভাবে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ আটকে গিয়েছিল ২৯৯ রানেই। কিন্তু সে রানটাকেই এভারেস্টসম বানিয়ে দেন চামিন্ডা ভাস ও মুত্তিয়া মুরালিধরণ। দুজনের তোপে ভারত অলআউট হয় মাত্র ৫৪ রানে, দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পেরেছিলেন মাত্র একজন ব্যাটসম্যান! ভাস নিয়েছিলেন ৫ উইকেট, আর মুরালি ৩ টি, তাতেই ভারতের কপালে জোটে ২৪৫ রানে হারের লজ্জা।
আইসিসি ওয়ানডে ইভেন্টের ফাইনালে সবচেয়ে বেশি রানে পরাজয়ের প্রথম দুটি রেকর্ডে ভারতের নাম থাকলেও পরের তিনটি রেকর্ডে নাম আছে যথাক্রমে ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের নাম। তবে এদের কেউই ১০০ কিংবা তার চেয়ে বেশি রানের ব্যবধানে হারেনি। আইসিসি ওয়ানডে ইভেন্টের ফাইনালে শতাধিক রানে হারার রেকর্ড তাই কেবল ভারতেরই আছে।
দল | ব্যবধান | প্রতিপক্ষ | বছর |
ভারত | ১৮০ রান | পাকিস্তান | ২০১৭ |
ভারত | ১২৫ রান | অস্ট্রেলিয়া | ২০০৩ |
ইংল্যান্ড | ৯২ রান | ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ১৯৭৯ |
শ্রীলঙ্কা | ৫৩ রান | অস্ট্রেলিয়া | ২০০৭ |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ৪৩ রান | ভারত | ১৯৮৩ |
তালিকার ৩য় স্থানে আছে ইংল্যান্ডের নাম। ১৯৭৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে তখনকার প্রবল পরাক্রমশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৯২ রানে হেরেছিল ইংলিশরা। স্যার ভিভ রিচার্ডসের ১৩৮ রানের ইনিংসে ভর করে ৬০ ওভারে ২৮৬ তুলেছিল ক্যারিবীয়রা (তখনকার ওয়ানডে ম্যাচ হত ৬০ ওভারে)। জবাব দিতে নেমে জোয়েল গার্নার-কলিন ক্রফট- মাইকেল হোল্ডিংয়ের বিধ্বংসী পেস বোলিংয়ের মুখ পরে ১৯৪ রানেই অলআউট হয় ইংল্যান্ড। গার্নার ৫ টি, ক্রফট ৩ টি ও হোল্ডিং ২ টি উইকেট নিয়েছিলেন।
চতুর্থ স্থানে আছে ব্রিজটাউনে ২০০৭ বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে শ্রীলঙ্কার ৫৩ রানে হারের ঘটনা। বিশ্বকাপ ফাইনালে সর্বকালের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলা অ্যাডাম গিলক্রিস্টের কাছেই সেদিন হারতে হয়েছিল লঙ্কানদের । গিলির ১৪৯ রানের টর্নেডো ইনিংসের উপর দাঁড়িয়ে মাত্র ৩৮ ওভারে ২৮১ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় অজিরা । জবাবে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২১৫ পর্যন্ত যেতে পারে লঙ্কানরা ।
আর তালিকার পাঁচে আছে ১৯৮৩ বিশ্বকাপে লর্ডসে ভারতের কাছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৪৩ রানে হেরে যাওয়া ম্যাচটি । টানা ৩য় বারের মত বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মানা হচ্ছিল ফেভারিট । কিন্তু বোলারদের অসাধারণ পারফরম্যান্সে মাত্র ১৮৩ রান করেও ক্যারিবীয়দের ১৪০ রানে বেঁধে ফেলে ভারত , জিতে নেয় নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা ।
.