প্রতিটি বাবা-মায়ের চাওয়া, তাদের প্রান, তাদের মুখের হাসি, তাদের পৃথিবী শুধু একটি শব্দে লুকিয়ে তাদের সন্তান। তাঁরা তাঁদের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করেন সন্তানের সুখের জন্য। সন্তানের মুখের এক চিলতে হাসি তাদের সব কষ্টকে মুহূর্তে নিঃশেষ করে দেয়। সন্তানের সুখ, শান্তি আর সুস্থতাই তাদের একমাত্র কাম্য।প্রতিটি বাবা-মা চান তাদের সন্তান যেন সুস্থ ও স্বভাবিক হয়। আর একটি শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে তার উপযোগী করে তোলার দায়িত্ব বাবা-মা সহ পরিবারের সকল সদস্যের। কেননা একটি শিশু যখন বড় হয় পরিবেশের প্রভাবটা তাকে খুব বেশি প্রভাবিত করে। একটি শিশুর আশেপাশের পরিবেশের প্রতিফলন ঘটে তার ব্যক্তিত্বে। তাই একটি শিশুর সামগ্রিক বিকাশের সাথে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কিত।
মায়ের গর্ভে যখন আরেকটি প্রানের আবির্ভাব ঘটে তখন তার অনুভূতি শুধু একটি মা ই জানেন। সেই অনুভূতিকে স্বর্গীয় অনুভূতির সাথে তুলনা করা যায়। সেই ছোট্ট প্রানটিকে একটু একটু করে মমতা আর ভালবাসা দিয়ে একজন মা বড় করে তুলেন তা সেই মা ছাড়া কেউ উপলব্ধি করতে পারেন না।। তার বেড়ে উঠার প্রত্যেকটা মুহূর্তে তার খেয়াল রাখা প্রয়োজন।এবং এই সময়টার যত্নটাই তার পরবর্তী জীবন গড়ার জন্য সহায়ক হবে।
নয় মাস দশ দিন(ক্ষেত্র বিশেষে বিভিন্ন হয়) পর যখন মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয় তখন শিশুটি অনেক অসহায় থাকে। সময়ের সাথে সেই ছোট মানুষটি বড় হতে থাকে। এসময় একটি শিশুর মানসিক ও দৈহিক বৃদ্ধি হয় যার উপর পরিবেশ এবং পরিবারের খুব বেশি প্রভাব থাকে।
শিশুর বিকাশের ধারাটাকে যদি আমরা কয়েকটি ভাগে ভাগ করতে পারি তাহলে বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক ধারনা পাওয়া যাবে তবে ক্ষেত্র বিশেষে এর তারতম্য ঘটে।
শরীর ও মনের বিকাশটি তিনভাবে হতে পারে –
১. দৈহিক ও ভাষাগত।
২. আবেগগত।
৩. সামাজিক।
একটি শিশুর বিকাশের এই ৩টি বিষয়কে যদি আমরা বয়স আর সময়ের সাথে একটি সময়পুঞ্জি আকারে দেখাই তাহলে কেমন হয় আসুন দেখি-
জন্ম থেকে এক মাস
সদ্য জন্মানো একটি শিশু ৫ থেকে ৮বার মায়ের দুধ খায়। প্রায় ২০ঘন্টা ঘুমায়। এসময় তার আবেগ অনুভূতিগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে। দর্শনেন্দ্রিয়, শ্রবণেন্দ্রিয়, ঘ্রাণেন্দ্রিয় সচল হলেও সক্রিয় নয়।কান্না ছাড়া অন্য কোন আবেগ প্রকাশ করতে পারে না।
দুই থেকে তিন মাস
আলো এবং রঙের তফাৎ কিছুটা বুঝতে পারে। মাথা , ঘাড় কিছুটা শক্ত হয় তাই আলো এবং শব্দের দিকে দেখার ও শুনার চেষ্টা করে। এসময়ে এসে হাসতে চায় ,কান্নার সময় শব্দ করতে চায়। এবং মানুষ চিনতে চেষ্টা করে। কোলে নিয়ে দোলালে শান্ত হয়ে যায়। আদর বুঝতে পারে।
চার থেকে ছয় মাস
এই সময়টায় সে অ অ্যা উ উ এই সব শব্দ করে থাকে এবং মা কে চিনে ফেলে। শব্দ করে হাসে এবং আদর ও কোল চিনে। অচেনা মানুষের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে চিনতে চেষ্টা করে। ঘুম তুলনামূলক কমে যায়।
সাত থেকে নয় মাস
এই সময় তার পুরো শরীর তার নিয়ন্ত্রণে আসে সে বসতে শিখে এবং হামাগুড়ি দিয়ে সামনে যেতে চেষ্টা করে। অনেক শব্দ আধো উচ্চারণ করে। মা কে খুব বেশি চিনে ফেলে। জোরে শব্দ করে হাসে এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করা হলে আপত্তি জানায় এবং কান্না করে। খেলতে শিখে যায়।
নয় মাস থেকে এক বছর
এই সময় তার পা এর উপর নিয়ন্ত্রণ চলে আসে প্রথমে কোন কিছুকে অবলম্বন এবং পরে নিজে নিজে হাটি হাটি পা পা করে এগুতে থাকে। কিছু কিছু শব্দ স্পষ্ট উচ্চারণ করতে পারে। অন্যকে অনুকরণ করে । নাম ধরে ডাকলে সারা দেয়। রাগ, ভালোবাসা প্রকাশ করে এবং অচেনা মানুষ দেখে ভয় পায়।
এক বছর থেকে দেড় বছর
সে ভারসাম্য বজায় রেখে হাটতে শিখে যায় এবং স্পষ্ট শব্দ উচ্চারণ করতে পারে। নিজ হাতে খেতে চায়। লজ্জ্বা, ভয় প্রকাশ করে। খেলনা নিয়ে খেলা শুরু করে।
দেড় বছর থেকে দুই বছর
দৌড়াতে শিখে যায় এমনকি বলে লাথি মারে। খেলার সঙ্গী পেলে অনেক খুশি হয়। আবেগগুলো ভালভাবে প্রকাশ করে এবং নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে।
তিন বছর থেকে পাঁচ বছর
এই সময়টায় তার উপর পরিবেশের বিশেষ প্রভাব পরতে শুরু করে সে আশেপাশের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। পড়তে , লিখতে ও অনর্গল কথা বলে। সামাজিকতা শিখে। মানুষভেদে আচরণের পরিবর্তন করে। ভাল খারাপ সব প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এই সময়টা জীবন গড়ার ভিত্তি।
শিশুর বিকাশকালীন সময়টাতে তাকে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে তার মানসিক, শারীরিক বিকাশে সহায়তা করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যত তাই তার সুন্দর শৈশব নিশ্চিত করতে হবে।
আপনার শিশুর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সকল তথ্য জানতে প্রিয়লেখার সাথে থাকুন , দুঃশ্চিন্তাকে দূরে রাখুন।