সময় কত দ্রুতই না পাল্টে যায়! এই তো গত অক্টোবরের কথা। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়ার পরেও যখন দলের সাথে বাংলাদেশ সফরে এলেন না ইংলিশ ওয়ানডে অধিনায়ক এইউন মরগান, বাংলাদেশ জুড়ে তখন মরগানের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বইছে। অধিনায়ক হয়ে যেখানে কিনা তার সামনে থেকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার কথা, সেখানে তিনি দল থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়ে আদর্শ অধিনায়কের মত কাজ করলেন কিনা, কথা হয়েছে সেটা নিয়ে। এরপর আরেক দফা সমালোচনা হয়েছে যখন মরগান এপ্রিলে ভারতে আইপিএল খেলতে এলেন। যেই নিরাপত্তার ভয়ে তিনি বাংলাদেশে খেলতে আসতে পারেন না, সেই একই নিরাপত্তা সংক্রান্ত জটিলতা থাকার পরেও তিনি কিভাবে আইপিএল খেলতে আসতে পারেন, সেটা নিয়েও কম কথা হয়নি বাংলাদেশি সমর্থকদের মধ্যে।
আর বেন স্টোকসের সাথে বাংলাদেশিদের ‘বিবাদের’ কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। সেই গত অক্টোবরের পর থেকেই স্টোকস যেন বাংলাদেশি সমর্থকদের চোখের কাঁটা হয়ে উঠেছিলেন। ব্যাটে বলে স্টোকসের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি কেউই, কিন্তু মাঠে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের সাথে তার আচরণ নিয়ে আপত্তি ছিল কমবেশি সব বাংলাদেশি সমর্থকদেরই। মিরপুরে ২য় ওয়ানডে চলাকালীন সময়ে জস বাটলারের আউটের পর মাঠেই একদফা বচসা হয় দুদলের ক্রিকেটারদের মধ্যে। সেটার রেশ ধরে রেখে ম্যাচের পরেও তামিম ইকবালের সাথে বাদানুবাদে জড়িয়ে পরেন স্টোকস, এমনকি তামিমকে ধাক্কাও দেন।
এছাড়া সফর শুরুর আগে প্রস্তুতি ম্যাচে স্বাগতিক দলের আবদুল মজিদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছিলেন স্টোকস। মজিদ স্টোকসের সাথে হাত মেলাতে চাইলে অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ দেখিয়ে হাত বাড়াননি স্টোকস!
এছাড়া অযথা স্লেজিং করে ব্যাটসম্যানদের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটানোর মত কাজ করেন বলেও সমালোচনা আছে স্টোকসের নামে। এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ১ম ম্যাচেও তামিম ইকবালের মনঃসংযোগে চিড় ধরানোর জন্য অযথাই তার সাথে তর্কে জড়িয়ে পরেন স্টোকস। গত অক্টোবরে ঢাকা টেস্টে স্টোকসকে আউট করার পর সাকিবের সেই ‘স্যালুট’ উদযাপন তো এদেশের ক্রিকেট রূপকথারই অংশ হয়ে গেছে!
আলোচিত-সমালোচিত সেই মরগান-স্টোকস জুটিই কিনা এতদিন পর এসে উদ্ধার করলেন বাংলাদেশকে! উদ্ধার করলেন বললে অবশ্য বাংলাদেশের কৃতিত্বকে খাটো করা হতে পারে, কিন্তু এক অর্থে তো বাংলাদেশের পরম বন্ধু হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছেন দুজন! নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর ইংল্যান্ডের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না বাংলাদেশ দলের। ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়াকে জিততে না দিলেই প্রথমবারের মত আইসিসির কোন ইভেন্টে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলা নিশ্চিত, সমীকরণ ছিল এমনটাই।
সেই সমীকরণ সহজে মেলানোর কাজটা করেছেন মরগান-স্টোকস জুটি। মার্ক উড ও আদিল রশিদের অসাধারণ বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার স্কোরটাকে হাতের নাগালেই রেখেছিল ইংলিশরা। কিন্তু মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজলউডের তোপের মুখে পড়ে সেই স্কোরটাকেই পাহাড়সম লাগছিল এক সময়। মাত্র ৩৫ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশি সমর্থকদের দুশ্চিন্তাতেই ফেলে দিয়েছিল ইংল্যান্ড। তাদের দুশ্চিন্তামুক্ত করার ভারটা নিজেদের কাঁধে তুলে নিলেন ইংল্যান্ড মিডল অর্ডারের সেরা এই দুই ব্যাটসম্যান। মাত্র ২৬ ওভারে ১৫৯ রানের অসাধারণ এক জুটি গড়ে ইংল্যান্ডের জয় অনেকটাই নিশ্চিত করেছে, সাথে দুশ্চিন্তামুক্ত করেছেন বাংলাদেশকেও।
আগের দিন যেমন সাকিব-মাহমুদউল্লাহর অনবদ্য জুটির কাছে হার মেনে বাড়ির পথ ধরতে হয়েছে নিউজিল্যান্ডকে, এদিন একইভাবে স্টোকস-মরগান জুটির কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হল অস্ট্রেলিয়াকে। বাংলাদেশও সেই সুযোগে উঠে গেছে সেমিফাইনালে। আর তাতে বড় একটা অবদানই রেখেছেন একসময়ের সমালোচিত দুই ব্যাটসম্যান মরগান ও স্টোকস!