বর্তমান সময়ে ফাস্ট ফুডের চাহিদা ব্যাপক। আর তাই পড়াশোনা শেষ করে অনেক তরুণই গতানুগতিক চাকরির পথে না হেঁটে নিজস্ব মূলধনে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করছেন, এবং সফলও হচ্ছেন। কিন্তু রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য কিছু বেসিক জিনিস জেনে রাখা জরুরী। বর্তমান সময়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় প্রতিযোগিতা এত প্রবল আকার ধারণ করেছে, বাকিদের থেকে নিজেকে এক ধাপ উপরে নিয়ে যেতে না পারলে আপনার সফলতার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে অনেকটাই। তাই নিজের রেস্টুরেন্টকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের জন্য কিছু কৌশল জানা থাকা দরকার। আজ আপনাদের জন্য থাকছে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় সফল হওয়ার তেমন কিছু টিপস।
বিশেষজ্ঞদের মতে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় নেমে সবচেয়ে বড় যে ভুলটা অনেকে করেন তা হল কোন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই হুট করে ব্যবসায় নেমে যাওয়া। তাই ব্যবসা শুরুর আগে নিজের পরিকল্পনামাফিক নিচের জিনিসগুলো সাজিয়ে নিন।
রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় নামার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আপনার টার্গেট কাস্টমার ঠিক করা। নানা বয়সী কিংবা নানা পেশার মানুষের জন্য রেস্টুরেন্টও ভিন্ন ভিন্ন মানের হয়। আপনার টার্গেট কাস্টমারের সম্ভাব্য রুচির কথা মাথায় রেখেই আপনার রেস্টুরেন্টকে সাজান।
শুরুতেই সব ধরনের খাবারের আইটেম চালু করার সিদ্ধান্ত অনেক সময়েই বুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে পারে। ফাস্ট ফুডের দোকান দেবেন, না চাইনিজ বা কন্টিনেন্টাল ফুডের, নাকি কোল্ড কফি জাতীয় সফট ড্রিঙ্কসের- তা আগে থেকেই ঠিক করে নিন। সবকিছু একসাথে চালু করতে গিয়ে লেজেগোবরে পাকিয়ে ফেলবেন না।
রেস্টুরেন্ট এর জায়গাটা মনমতো না হলে ভেস্তে যেতে পারে আপনার পুরো পরিকল্পনাই। এমন জায়গায় রেস্টুরেন্ট দিন যেখানে লোকের সমাগম বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনার টার্গেট কাস্টমারের কথা মাথায় রেখে রেস্টুরেন্টের জায়গা নির্বাচন করুন। যেমন আপনার টার্গেট কাস্টমার যদি হয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আশেপাশেই রেস্টুরেন্ট দেয়ার চেষ্টা করুন।
রেস্টুরেন্ট ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনার রেস্টুরেন্টের নামও আপনাকে ব্যবসায় এগিয়ে কিংবা পিছিয়ে দিতে পারে। এমন একটা নাম দেয়ার চেষ্টা করুন, যা বাকিদের থেকে ভিন্ন, একটু অন্যরকম। যাতে করে নাম দেখেই কাস্টমার আপনার রেস্টুরেন্টের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন।
নাম ঠিক করার পরের কাজ হল লোগো নির্ধারণ করা। এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, কেননা সুন্দর ও আকর্ষণীয় লোগো আপনার রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে পজিটিভ ধারণা তৈরি করতে পারে। লোগোর ডিজাইন ও কালার সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
অনেকে হয়তো এটিকে তেমন গুরুত্ব দেন না, কিন্তু লোগোর সঠিক ফন্ট বাছাই করা আসলেই গুরুত্বপূর্ণ। বেশি ছোট ফন্ট দিলে যেমন আপনার রেস্টুরেন্টের নাম কারোর চোখেই পড়বে না, তেমনি বেশি বড় ফন্ট দিলেও আবার বেখাপ্পা লাগার সম্ভাবনা আছে।
কাস্টমারেরা রেস্টুরেন্টে তাদের জাতীয়তাবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট জিনিস দেখতে পছন্দ করে। বিষয়টি মাথায় রেখে আপনার রেস্টুরেন্টের ইন্টেরিয়র ডিজাইন করতে পারেন। তবে আজকাল তরুণ প্রজন্মের কাস্টমারদের মধ্যে ইউরোপিয়ান ফুটবল বেশ জনপ্রিয়। চাইলে আপনি আপনার রেস্টুরেন্টকে ওরকম কোন ফুটবল দলের আদলেও সাজিয়ে তুলতে পারেন। এতে করে আপনার ইন্টেরিয়র ডিজাইন যেমন বাকিদের থেকে আলাদা হবে, তেমনি কাস্টমারও বেশি আকৃষ্ট হবে।
আপনার রেস্টুরেন্টের প্রাণ হল আপনার শেফেরা। ডিজাইন কিংবা সেবা যতই ভালো হোক, খাবারের মান ও স্বাদ ভালো না হলে নিশ্চিতভাবেই লোকসানের মুখে পরবেন আপনি। তাই দক্ষ ও উন্নত মানের শেফ নিয়োগের ব্যাপারে খেয়াল রাখুন।
খাবারের দাম কাস্টমারের নাগালের মধ্যে রেখে বাকি প্রতিদ্বন্দীদের থেকে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারেন আপনি। মাঝে মাঝে দাম কমিয়ে আকর্ষণীয় অফার দিয়ে কাস্টমারদের আকৃষ্ট করতে পারেন।
ওয়েটারদের উপরেও অনেকাংশে নির্ভর করে আপনার ব্যবসা কেমন চলবে। নম্র, ভদ্র ওয়েটারের ব্যবহারে মুগ্ধ হলে পুনরায় সেই কাস্টমার আপনার রেস্টুরেন্টে আসবেন। অপরদিকে ওয়েটারের ব্যবহার আশানুরূপ না হলে তা আপনার রেস্টুরেন্টের জন্যই বাজে অভিজ্ঞতা হবে।
বলা হয়ে থাকে যে ফার্স্ট ইম্প্রেশন দিয়েই কাস্টমার তৈরি করতে হয়। তাই উপস্থাপনা থেকে শুরু করে ডিজাইন, সবকিছুতেই সৃজনশীলতার ছাপ রাখার চেষ্টা করুন। আপনি যে বাকিদের থেকে ভিন্ন হতেই এসেছেন এই ব্যবসায়, তা বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করুন। যেমন গতানুগতিকতার বাইরে এসে মেন্যু কার্ডে কিছু বৈচিত্র্য আনতে পারেন, কাস্টমারদের বিনামূল্যে একটি ওয়েলকাম ড্রিঙ্কস অফার করতে পারেন। এতে করে আপনার রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে ভালো ধারণা তৈরি হবে।
এখনকার সময়ে এসে রেস্টুরেন্টগুলোর প্রচারণা মূলত ফেসবুকের মাধ্যমেই হয়। নিজের রেস্টুরেন্ট এর জন্য তাই একটি ফেসবুক পেজ খুলতে পারেন, এবং সেখানে প্রমোশনাল অফার দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে পারেন। একবার সফল হতে পারলে আপনার বাকি কাজটা কাস্টমারেরাই করে দেবেন।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শুরুতে খুব ভালো সার্ভিস দিলেও ব্যবসায় একটু গতি এসে গেলে আগের সেই মানটা ধরে রাখেন না অনেকেই। দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসায় সফল হতে চাইলে এই বদঅভ্যাস পরিহার করুন। সবার আগে কাস্টমার- এই নীতিতে অটল থাকুন, আপনার ব্যবসায় উন্নতি হবেই।