সত্যি-মিথ্যার লড়াইয়ে সত্যের জয় সবসময় হবেই। কিন্তু মিথ্যার বিরুদ্ধে লড়তে গেলে আগে তো জানতে হবে কোন কথাটা মিথ্যা ছিল!আপনার সামনে বসে একজন অবলীলায় মিথ্যে বলে যাচ্ছে আর আপনি টেরও পাচ্ছেন না, কিন্তু যখন বুঝতে পারলেন আপনাকে কিভাবে ঠকানো হল নিজের উপর খুব রাগ লাগে তখন। এমনটা কম-বেশি আমাদের সবার সাথেই হয়ে থাকে।
যদি এমন উপায় থাকতো যাতে ঝট করে ধরা পড়ে যাবে আরেকজনের মিথ্যে, তাহলে কি মজাই না হত! ভাবছেন এজন্য পলিগ্রাফ নামের লাই ডিটেক্টর মেশিন বা মিথ্যে ধরার যন্ত্র তো আছেই, কিন্তু আপনি কি জানেন এর উপর খুব বেশি নির্ভরশীল হওয়ার সাহস খোদ আবিষ্কারকরাই পান না!
তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাক মিথ্যা ধরার আসল কিছু উপায়।
মাইক্রো এক্সপ্রেশন বা ছোট মুখভঙ্গির বিষয়টাই হল এরকম যে তা মাত্র কয়েক ন্যানো সেকেন্ডের জন্য যে মিথ্যে বলছে তার মুখে ভেসে উঠবে। যত প্রফেশনাল মিথ্যেবাদীই হোক না কেন, এই ধরণের ছোটখাটো এক্সপ্রেসনগুলো এড়িয়ে যাওয়া আসলেই খুব দুরূহ ব্যাপার!
এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে আপনিও যাকে মিথ্যেবাদী হিসেবে সন্দেহ করছেন তার প্রতিটি এক্সপ্রেসনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করুন। মিথ্যে বলার সময় তার মুখে এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্য হলেও দুশ্চিন্তার ছাপ, ভ্রুর ওঠানামা, কপালের সূক্ষ্ম ভাঁজ এ ধরণের কোন না কোন আবেগের চিহ্ন তার মুখে ফুটে উঠতে বাধ্য। সতর্কতার সাথে বিষয়টি লক্ষ্য করুন।
মিথ্যে বলার সময় মানুষ বেশি বেশি নাকে হাত দেয়। বানিয়ে কথা বলতে গেলে ক্যাপিলারিতে অ্যাড্রেনালিন রাশের জন্য নাকে এক ধরণের চুলকানির সৃষ্টি হয়। এজন্যই তাদের মাঝে বার বার নাকে হাত দেয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
অনেকে আবার মিথ্যে বলার সময় মুখে হাত দিয়ে আড়াল করে রাখতে চান। তারা হয়তো ভাবেন হাত দিএ মুখ আড়াল করে রাখলে বুঝি সত্যিটাও আড়াল হয়েই থাকবে! মুখ বা ঠোঁটের মুখভঙ্গিতে দুশ্চিন্তার রেখা দেখতে পেলে বুঝবেন তিনি যা বলছেন তা হয়তো সাজিয়ে গুছিয়ে নিজের মতো করে বলছেন।
“চোখ যে মনের কথা বলে” জ্ঞানের লাইনগুলো কিন্তু এমনি এমনি আসেনি! তাই নিজের মনের মধ্যে কাউকে নিয়ে কোন সন্দেহ থাকলে কথা বলার সময় তার চোখের দিকে লক্ষ্য রাখুন।
চোখের পাপড়ির দিকে তাকান। যখন কেউ চিন্তা ভাবনা করে বানিয়ে কোন কথা বলে তখন চোখের পলক ফেলার সময় সাধারণ পলক ফেলার তুলনায় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। হাত দিয়ে বা আঙুল দিয়ে চোখ ঢেকে রাখার প্রবণতাও আপনার জন্য একটি ইশারা হতে পারে। তবে চট করে একদিনের দেখায় কাউকে বিচার না করে ২-৩ দিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে বিবেচনায় আসা ভালো।
সাধারণত যারা মিথ্যে বলে তারা সরাসরি যেকোনো ধরণের আই কন্টাক্ট বা চোখে চোখে ভাব বিনিময়ের ব্যাপারটা এড়িয়ে চলে। তারা ভয় পায় পাছে না তার চোখ থেকে সামনে বসে থাকা ব্যক্তিটি পড়ে ফেলে যে সে মিথ্যে বলছে! তবে মনে রাখতে হবে সবার জন্য এক পদ্ধতি প্রযোজ্য নয়।
আবার কখনও কখনও এমনও হতে পারে মিথ্যে বলার সময় ব্যক্তি আপনার সাথে একটু বেশিই আই কন্টাক্ট করছে। হয়তো আপনার চোখ থেকে সে পড়ে ফেলার চেষ্টা করছে আপনি কতটুকু বুঝতে পারলেন! এভাবে বারবার তাকিয়ে সে বুঝাতে চাইতে পারে যে দেখ আমি কিন্তু সত্যি কথা বলছি। কিন্তু তার চোখের ভাষা থেকে আপনাকে বুঝে নিতে হবে এই সত্যের ভিত্তি কতটুকু।
আপনার যা জানতে ইচ্ছে করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিটিকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করে মোটামুটি একটি ধারণা পেয়ে যেতে পারেন যে সে কতটুকু সত্যি বলছে। অহেতুক কাউকে দোষ দিয়ে সম্পর্ক তেতো না করে নিজের পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা বাড়িয়ে নিন।
তথ্যসূত্রঃ https://www.psychologytoday.com http://www.wikihow.com