অনার্স মাস্টার্স শেষ করেছেন, এখন নিশ্চিতভাবেই ঝাঁপাতে হবে চাকরির ময়দানে। আর চাকরির বাজারে নামার আগে প্রথম পূর্বশর্ত হল একটি ভালো ও মানসম্মত জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করা, সহজ কথায় যেটিকে আমরা বলি সিভি। সিভি হল চাকুরিদাতার কাছে একজন চাকরিপ্রার্থী হিসেবে নিজেকে প্রাথমিকভাবে উপস্থাপনের মাধ্যম। আপনার সিভি পছন্দ না হলে আপনি ইন্টারভিউ বোর্ড পর্যন্ত যাওয়ারই সুযোগ পাবেন না। ভালো চাকরি পেতে হলে তাই একটি ভালো সিভির বিকল্প নেই কোন। সিভির কোন আদর্শ ফরম্যাট নেই, তাও যথাসম্ভব আকর্ষণীয়ভাবে সিভিকে সাজানোই শ্রেয়। আজকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব ভালো একটি সিভি লেখার কিছু কৌশল।
সাধারণত সিভি খুব বেশি বড় না করার পরামর্শ দেয়া হয়। একদম নতুন চাকুরিপ্রার্থী থেকে শুরু করে ৮ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীদের ক্ষেত্রে দুই পাতার সিভিই যথেষ্ট। আর এর চেয়ে বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীদের সিভি বড়জোর ৩ পাতা পর্যন্ত যেতে পারে। দুই পাতার সিভিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো প্রথম পাতায় রাখবেন অবশ্যই।
আপনার সিভিতে বেশ কয়েকটি অংশ থাকবে। অংশগুলো একে একে আপনার জন্য তুলে ধরা হল।
সিভির শুরুতেই থাকবে আপনার পুরো নাম। কোনভাবেই নামের বানান ভুল করা যাবে না। শুধু অফিশিয়াল নাম লিখবেন, ডাক নাম লিখবেন না। বোল্ড করে দিতে পারেন, ফন্ট সাইজটাও একটু বড় করে দিন। নামের পর দিন পূর্ণ ও নির্ভুল ঠিকানা। স্থায়ী ঠিকানার চেয়ে এখানে বর্তমান ঠিকানা বেশি জরুরী, যেন আপনার ঠিকানায় চিঠি দিলে সেই চিঠি আপনি তৎক্ষণাৎ হাতে পান। এছাড়া মোবাইল নম্বর ও সক্রিয় ইমেইল অ্যাড্রেস ও দিন।
সদ্য পাশ করা ফ্রেশারদের জন্য এই অংশটি আসলেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত চাকরি ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু ফ্রেশারদের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার ঘরটা ফাঁকাই থাকে। ফ্রেশারদের ক্ষেত্রে তাই যে জিনিসটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হয় তা হল তার ক্যারিয়ার গোল বা লক্ষ্য। আপনি নিজের ক্যারিয়ারকে কিভাবে, কতটা গোছানোভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান, কিভাবে কোম্পানির সাথে সাথে নিজের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে চান, আপনার নিজের যোগ্যতা ও সামর্থ্যের উপর আস্থা ও আত্মবিশ্বাস- এসবই যথেষ্ট আপনার প্রতি চাকুরিদাতাকে আকৃষ্ট করতে।
আগে থেকেই যারা কর্মক্ষেত্রে আছেন, তাদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব অভিজ্ঞতা। আগের প্রতিষ্ঠানের নাম, সেখানে আপনার পদবী, সেখানে কি দায়িত্ব পালন করতেন, সেখানে আপনার উল্লেখযোগ্য কি সাফল্য রয়েছে, এগুলো হাইলাইট করুন।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, আপনার যদি একাধিক জায়গায় আগে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে সর্বশেষ যেখানে কাজ করেছেন সেটি সবার আগে দিন। এভাবে যেতে যেতে সবার প্রথমে যেখানে কাজ করেছেন সেটিকে সবার শেষ উল্লেখ করুন।
আপনার পাশকৃত পরীক্ষাগুলোর নাম, ফলাফল, পাশের সন, বিশ্ববিদ্যালয়/বোর্ড সহ একে একে দিন। এখানেও সাম্প্রতিক ডিগ্রিটির নাম আগে উল্লেখ করবেন। যেমন ধরা যাক, আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি পাশ করে বেড়িয়েছেন। সেক্ষেত্রে আপনার সিভিতে শুরুতে থাকবে মাস্টার্সের ফলাফল, বিশ্ববিদ্যালয়, পাশ করার সন। এভাবে পর্যায়ক্রমে অনার্স, এইচএসসি, এসএসসি এগুলোর ফলাফল আসবে।
এই অংশে আপনি আপনার অতিরিক্ত যোগ্যতাবলি, যেগুলোকে আমরা কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস বলে থাকি, সেগুলো উল্লেখ করুন। এখানে মূলত আপনার নানাবিধ যোগ্যতাগুলোর উপর ফোকাস করুন। আপনার ভাষাগত দক্ষতা, কম্পিউটারের জ্ঞানের উপর দক্ষতা এগুলো হাইলাইট করুন। স্কুল লাইফে স্কাউট কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিএনসিসি’র মত প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকলে সেগুলো অবশ্যই উল্লেখ করুন। এগুলো আপনার নেতৃত্বগুণ সম্পর্কে ধারণা দেবে চাকুরিদাতাকে। যোগ্যতার স্বীকৃতিস্বরূপ কোন পদক বা সম্মাননা পেয়ে থাকলে সেগুলোও উল্লেখ করতে ভুলবেন না যেন। ইংরেজি ছাড়া অন্য কোন বিদেশী ভাষার উপর দখল থাকলে সেটাও উল্লেখ করুন, আপনার ইম্প্রেশন ভালো হবে। স্কুল কলেজে ডিবেটে অংশগ্রহণ করে থাকলে সেটা উল্লেখ করুন, এতে করে আপনার পাবলিক স্পিকিংয়ের দক্ষতা সম্পর্কে চাকুরিদাতা অবহিত হবেন।
এই অংশে সাধারণত পিতা-মাতার নাম, জাতীয়তা, ধর্ম, বৈবাহিক অবস্থা, স্থায়ী ঠিকানা এই জিনিসগুলো আসে। আধুনিক কালের সিভিতে এই অংশটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না, তবুও ফরমালিটি হিসেবে এসব তথ্য দিয়ে দিন।
সিভির একদম শেষ অংশ এই রেফারেন্স। এখানে আপনার কোন নিকট আত্মীয়দের নাম উল্লেখ না করাই ভাল। আপনার পূর্বের কর্মক্ষেত্রে আপনাকে কাছ থেকে দেখেছে, কিংবা আপনার শিক্ষাক্ষেত্রে আপনাকে কাছ থেকে দেখেছে, এমন কাউকে রেফারেন্স হিসেবে রাখুন। যাদেরকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করছেন তাদের ঠিকানা এবং ফোন নম্বর দিন। যাদেরকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করছেন, তাদের আগে থেকে অবশ্যই অবহিত করবেন যে আপনি রেফারেন্স হিসেবে তাদের ব্যবহার করছেন। রেফারেন্স হিসেবে দুই থেকে তিনজনের নাম ব্যবহার করাই যথেষ্ট।