সফলতার গল্প শুনতে আমরা সবাই ভালোবাসি । তাদের উদাহরন হিসেবেও তুলে ধরি মানুষের কাছে । কিন্তু তাদের এই সফল হবার পেছনের গল্প গুলো কি আমরা জানি ? আজ আমরা আপনাদের কাছে তুলে ধরবো বিশ্বসেরা ১০ জন ব্যক্তিত্বের ব্যর্থতাকে পরাজিত করে সফল হয়ে উঠার পিছনের গল্প । চলুন তবে জেনে নেই বিশ্বজয়ী ১০ জন সেরা ব্যাক্তিত্ব দের পেছনের গল্প
ডিজনীর মিকি মাউস, ডোনাল্ড ডাক সহ হাজারো কার্টুন দেখেই তো কেটেছে আমাদের ছেলেবেলা।জানেন কি এসব কার্টুনের জনক সেই ওয়াল্ট ডিজনী একটি দৈনিক পত্রিকা থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন তিনি যথেষ্ট ক্রিয়েটিভ না এই অভিযোগে?এখানেই তার ব্যর্থতা শেষ হয়নি, বরং শুরু হয়েছিলো।তার সৃষ্ট প্রথম কার্টুন চরিত্র- “অসওয়াল্ড দ্যা লাকী র্যাবিট” এর নির্মাণসত্ত্ব (কপিরাইট) ও তিনি হারান।তার প্রথম গড়ে তোলা ব্যবসায় এতোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে তাকে দেউলিয়া বলে ঘোষণা করা হয়। যখন ডিজনী প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য অ্যানিমেশন চলচিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেন তখন কেউই তার এই ধারণাকে সম্ভাবনা বলেও পাত্তা দেয় নি। তাকে এমন কি নিজের বাড়ি বন্ধক রেখে তার অ্যানিমেশন চলচিত্র ‘ স্নো হোয়াইট এন্ড সেভেন ডোয়ারফস’ বানাতে হয় কারন তার কাছে যথেষ্ট পরিমাণে নগদ অর্থ ছিল না। কিন্তু যখন অ্যানিমেশন চলচিত্রটি রিলিজ পায় তাখন তা চলচিত্র সমালোচকদের কাছে থেকে বিপুল প্রশংসা পায়। চলচিত্রটির প্রদর্শনীর সত্ত্ব $৮ মিলিয়ন ইউএস ডলারে বিক্রয় করা হয় এবং তা সে সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচিত্র হিসেবে গন্য করা হয়।
জীবনের ২৫টি বছর একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে দেবার পর মেরি কে অ্যাশ উপলদ্ধি করেন যে তার আইডিয়া ঐ প্রতিষ্ঠানটি আর গ্রহন করছে না। ঘটনাটি বুঝতে পেরে তিনি সেই প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করেন। অবসর পাবার পর তিনি একটি বই লেখার কথা ভাবেন যেখানে তিনি নারীদের ব্যবসায় পরিচালনা সংক্রান্ত ধারনা দিতে চান। তার লেখাটি একটি সার্থক ব্যবসায় পরিকল্পনা (পারফেক্ট বিজনেস প্ল্যান) হিসেবে ব্যপক জনপ্রিয়তা পায়। অতঃপর মেরি কে নিজ নামে বিশ্বব্যপী জনপ্রিয় একটি কসমেটিক্স নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।
ব্যর্থতার গল্প শুনাবো আর সেখানে ট্মাস আল্ভা এডিসনের নাম আসবে না সেটা তো হতেই পারে না। ব্যর্থতার উদাহরনে তিনি যেন Robert Bruce। বানিজ্যিক ভাবে ইলেক্ট্রিক বাল্ব তৈরি করতে গিয়ে তিনি হাজারোবার ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু তার কাছে ব্যর্থতা ছিল সফলতার দিকে ধাবমান পরবর্তী পদক্ষেপ। তার ভাষায় তিনি ব্যর্থ হন নি বরং কাজ করার আরো ৯৯৯৯ পথ খুঁজে পেয়েছেন। পর্যায়ক্রমে এডিসন এমন একটি বাল্ব প্রস্তুত করেন যা ১৫০০ ঘন্টার উপরে আলো দিয়েছিলো।
নিরলস পরিশ্রম উপরে উঠে আসা ব্যক্তির নাম মিশেল ওবামা। তিনি এমন একজন ব্যক্তিত্ব যার উপর কোনদিনই অন্যের মতামত কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারে নি। নিজের মেধা ও শ্রম তাকে দিয়েছে বিশেষত্ব। যখন তিনি অল্পবয়সী ছিলেন তখন আশেপাশের মানুষের কাছে তার পরিচয় ছিলো নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের খেটেখাওয়া পরিবারের সদস্যা হিসেবে। নিজ মেধায় যখন তিনি প্রিন্সটন ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পান তখনো তিনি খুব অল্প কিছু মানুষের ভরসা অর্জন করতে পেরেছিলেন। বার বার সমালোচনার শিকার হয়ে তিনি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সবসময় নিজের কাছে সত্য ও সৎ থাকবেন। তার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিলো নিজের দেশের জন্য কিছু করার ও নিজের পরিচয়ে পূর্ণ রূপে আত্মপ্রকাশ করার ও তার প্রতিফলন তিনি দেখিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্টের অর্ধাঙ্গী হয়ে।
Stay Hungry Stay Foolish- কথাটি আমরা যখন তখন কাজে লাগাই, আর আই ফোন আইপ্যাড তো আমাদের স্ট্যাটাস সিম্বল এ পরিণত হয়েছে আজ। তবে যার উদ্ভাবনে আমাদের এই আয়াস কখনো তার ব্যর্থতা সম্পর্কে কোন গল্প কি আমরা শুনেছি? ১৯৮৫ সালে তিনি তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি থেকে বরখাস্ত হন যা তিনি তার বন্ধুর সাথে সম্মিলিত ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাকে বরখাস্তের কারন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিলো যে তাকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়। আর তিনি যে প্রোজেক্ট গুলো নিয়ে আসে তাও কল্পনাপ্রসূত ও শেষ করা সম্ভব হয়ে উঠে না।স্টিভ ১৯৯৬ সালে আবার তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি ‘অ্যাপল এ ফিরে আসেন যখন কোম্পানি প্রায় দেউলিয়া হবার পথে তখন তিনি তার হাতে তৈরি কোম্পানিটি পুনরায় কিনে নেন।তার এই ফিরে আসাই ‘অ্যাপল’ কে আবার নিয়ে যায় সফলতার শীর্ষে।
আজ আমরা যে পার্সেল কফি দেখতে পাচ্ছি যা মার্কিনীরা চলার পথে, অফিসের কাজের ফাঁকে,বাসে-ট্রামে পান করে অভ্যস্ত তার জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ দিতে হবে বিশ্ব বিখ্যত ক্যাফে স্টারবাক্স এর হাওয়ার্ড স্কাল্টজ কে। চলার পথে কফি পান করা সম্ভব এই ধারনার পিছে কোন বিনিয়োগকারী বিনিয়োগে বিন্দুমাত্র আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু হাওয়ার্ড স্কাল্টজ এর জিদের কাছে প্রতিকুল পরিস্থিতি ও হার মেনে যায়। যতদুর জানা যায় হাওয়ার্ড এর প্যাকেজ কফির আইডিয়া ২১৪বার রিজেক্ট হয়েছিলো।
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ড দ্যা বিটলস ক্যারিয়ারের শুরুতেই অসংখ্য রেকর্ড কোম্পানি থেকে রিজেক্ট হয়েছিলো । ১৯৬২ সালের জানুয়ারির ১ তারিখে দ্যা বিটলস লন্ডনের ডেকা রেকর্ডসে এসে প্রায় ১৫টির মত গান রেকর্ড করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডেকা রেকর্ডস দ্যা বিটলস কে ব্যান্ড হিসেবে রিজেক্ট করে যা পরবর্তীতে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভুল হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলো।
মিল্টন হার্শে খুবই ছোটবেলা থেকেই ১টা চকলেট ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। ১৮৭৬ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি তার প্রথম চকলেটের দোকান খুলেন। কিন্তু সেখানে তিনি সাফল্যের দেখা পান নি। পরবর্তীতে তিনি নিজের অভিজ্ঞতা বাড়াতে আবারো একটি চকলেট ফ্যাক্টরিতে কাজ নেন। সেখানে তিনি এমন অনেক কিছু শিখেন যা তিনি আগে জানতেন না। ১৮৮৩ সালে তিনি আবারো একটি চকলেটের দোকান খুলেন। এবার তিনি ও তার চকলেটের দোকানটি খুবই দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়।১০ বছর পর হার্শে আবারো একক ঝুঁকিতে বিক্রি করে দেন জনপ্রিয় হয়ে উঠা চকলেটের দোকানটি । পরবর্তীতে তিনি চালু করেন তার জীবনের সেরা সাফল্য হার্শে চকলেট ফ্যাক্টরি।
এই জনপ্রিয় মার্কিনী লেখকের ক্যারিয়ারের সূচনাই হয়েছিলো এমন একটি লেখার মাধ্যমে যা বিভিন্ন প্রকাশনী কর্তৃক ৩০ বার রিজেক্ট হয়েছিলো। পরবর্তীতে সেই মাস্টার পিসের জায়গা হয়েছিলো ডাস্টবিনে। প্রত্যেক সফল মানুষের পিছে যে একজন নারীর সফল অবদান থাকে তা প্রমান করেছিলেন লেখকের স্ত্রী। তিনি ডাস্টবিন থেকে অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপিটি উদ্ধার লেখক কে প্রেরনা দেন সেই পাণ্ডুলিপিটি সম্পূর্ণ করার যা থেকে জন্ম নেয় বেস্ট সেলার উপন্যাস ‘ক্যারি’ যা থেকে পরবর্তীতে চলচিত্র নির্মাণ করা হয়।স্টিফেন কিং এর উপন্যাস এর কপি ৩৫০ মিলিয়ন এর অধিক বিক্রি হয় ও তার মধ্যে অনেকগুলো থেকে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচিত্র নির্মাণ করা হয় যার মধ্যে রয়েছে দ্যা গ্রীন মাইল, ইট প্রভৃতি।
১৯০৬ সালে জাপানে জন্ম নেওয়া এই উদ্যেক্তার ছেলেবেলা কাটে তার বাবার সাইকেলের দোকানে বাবাকে সহায়তা করে।১৮ বছর বয়সে সইচিরো তার প্রথম রেসিং কার তৈরি করেন।২২ বছর বয়সে তিনি তার অটোরিপেয়ারিং বিজনেস চালু করেন ও কিছুদিন পরেই ‘টোকাই সেইকি’ নামে অটো কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বোমা হামলায় তার কোম্পানিটি ধ্বংস হয়ে যায়। হোন্ডা তার কোম্পানিটি পুনরায় চালু না করে ১ বছর তার বাগানে অ্যালকোহল উৎপাদন করে সময় কাটান। হয়তো এভাবেই তার জীবন কাটতো যদি না হঠাৎ একদিন তিনি তার স্ত্রীর বাইসাইকেলে রেডিও জেনারেটর স্থাপনের পরিকল্পনা না করতেন। ঠিক দুই বছর পরে হোন্ডা সম্পূর্ণ মোটর চালিত বাইসাইকেল “এ” টাইপ এর উৎপাদন শুরু করেন যা হোন্ডা কোম্পানির উদ্ভাবিত প্রথম মোটর সাইকেল ছিলো। তারপর থেকেই আমরা অনেকে মটর সাইকেল কে হোন্ডা হিসেবেই ডাকতাম।
নাসীব উর রহমান