কয়েকজন বন্ধু কলেজ কিংবা ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে একটি রেস্তোরাঁয় বসেছে। পেট পূজা আর সাথে হালকা কিছু আড্ডার জন্য উদগ্রীব সবাই। কি খাওয়া যায়? এক বন্ধু প্রস্তাব দিল, আজ নাচোস খেলে কেমন হয়? মেক্সিকান খাবারের স্বাদও নেয়া গেল একটু। সবাই হৈ হৈ করে উঠল। নাচোসের অর্ডার দিল নিমিষেই।
আচ্ছা, ওদের মত আপনারাও নাচোস খেতে কেউ পছন্দ করেন? মেক্সিকান এই খাবারের স্বাদ যেন মুখে লেগে থাকে আমাদের সকলের। মেক্সিকোর কোন ঐতিহ্যবাহী ডিশ একে বলা যাবে না অবশ্য। নাচোসকে অনেকে টেক্স-মেক্স ডিশও বলে থাকেন (টেক্স মেক্স ডিশ হচ্ছে টেক্সাস ও মেক্সিকোর মিশ্রণে তৈরি বিশেষ একধরণের ডিশ। পিয়েদ্রাস নেগ্রাস নামক মেক্সিকোর ছোট একটি শহরে পৌছে এই ডিশ এখন পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে তৈরি করা হয়ে থাকে। আবার অনেকে বলেন টেক্সাসের ঈগল পাসে এই ডিশের উদ্ভব হয়েছিল। যদিও নাচোস কোন দেশে প্রথম উদ্ভব হয়েছিল, সেটা নিয়ে বছরের পর বছর নানা তর্ক বিতর্ক হয়েছে। আজ আমরা প্রিয়লেখার পাতায় নাচোসের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করবঃ
সাল ১৯৪৩। ডানকান মিলিটারি বেজে যুদ্ধরত আছে ইউএস মিলিটারী। তাদের স্ত্রীরা একদিন কাছেই ঈগল পাসে গেল বাজার করতে। সন্ধ্যা নামলে তাদের মনে হল এবার কিছু খেয়ে নেয়া যাক তবে। তবে খেতে গিয়ে দেখা গেল সব রেস্তোরাঁই বন্ধ হয়ে আছে। সীমান্ত অতিক্রম করে মেক্সিকোর দিকে গেল তারা, যদি কিছু খাবার পাওয়া যায় এই আশায়। পিয়েদ্রাস নেগ্রাসের ভিক্টোরি ক্লাবের রাঁধুনি ইগনাসিও আনায়া ভদ্রমহিলাদের দেখে একটু খারাপই বোধ করেন। খাবারও প্রায় শেষ। এবার তিনি ঠিক করলেন হেঁশেলে যা আছে, তা দিয়েই আপ্যায়ন করা যাক। কিছু টরটিলা চিপস, ভাজা, স্লাইসড জালাপেনিওস, শেদার মিশ্রণ করে ওভেনে কিছু সময় রাখলেন তিনি। সদ্য আবিষ্কার করা এই ডিশের নাম তিনি রাখেন “নাচো’স স্পেশাল”। এই নাচো নামটি ইগনাসিওর ডাকনাম।
১৯৫৪ সালে নাচোস তৈরির রেসিপি ঈগল পাস চার্চের কুক বুকে চলে আসে এবং ১৯৬০ সালে ইগনাসিও দাবি করেন এই খাবারের স্বত্ব তার। তার পক্ষে প্রমাণ করা খুব কঠিন ছিল বিষয়টা। আইনজীবী তাকে উপদেশ দেন,
“দেখ, ১৭ বছর পর এসে তুমি খুব সুবিধে করতে পারবে না। এটা এখন জনগণের সম্পদ।”
‘নাচো’ ইগনাসিও আনায়ার ছেলে ইগনাসিও আনায়া জুনিয়র তার পিতার সম্মানার্থে প্রতি বছর পিয়েদ্রাস নেগ্রাসে বার্ষিক “নাচো প্রতিযোগিতা”য় বিচারকের ভূমিকা পালন করেন। প্রতি বছরের অক্টোবরের ২১ তারিখকে তাই আন্তর্জাতিক নাচো দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
আজ এ পর্যন্তই ছিল প্রিয়লেখার পাতায়। সবাই প্রিয়লেখার সাথেই থাকুন।