রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে একটু লম্বা মানুষ দেখলেই আমরা চমকে গিয়ে তাকে দ্বিতীয়বার দেখি অনেকেই। সুলতান কোসেনকে হঠাৎ চোখের সামনে দেখলে হয়তো অবিশ্বাসে চোখ কচলাতে পারেন কেউ কেউ। এত লম্বাও মানুষ হয়!
তা কত লম্বা সুলতান কোসেন? শুনলে চমকে যেতে পারেন, তুরস্কের এই ব্যক্তির উচ্চতা ৮ ফুট ২.৮ ইঞ্চি! সেন্টিমিটারে মাপলে যা দাঁড়ায় ২৫১ সেন্টিমিটারে। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার অধিবাসী এই সুলতান কোসেনই বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ব্যক্তি।
১৯৮২ সালে জন্মগ্রহণ করা এই ব্যক্তিকে ২০১১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমানে জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা বলে স্বীকৃতি দেয় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। গত ২০ বছরে ৮ ফুটের বেশি কাউকে স্বীকৃতি দেয়া প্রথম ব্যক্তি সুলতান কোসেন।
প্রথমবারের মত সুলতান বিশ্বের দীর্ঘতম জীবিত ব্যক্তি হন ২০০৯ সালে, তখন তার উচ্চতা ছিল ৮ ফুট ১ ইঞ্চি বা ২৪৬.৫ সেন্টিমিটার। সুলতানের আগে এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন চায়নার জি সুন, তার উচ্চতা ছিল ৭ ফুট ৮.৯৫ ইঞ্চি বা ২৩৬.১ সেন্টিমিটার।
আরও একটি বিশ্বরেকর্ডের মালিক সুলতান। জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা হাতের মালিকও এই সুলতান। তার একেকটি হাতের দৈর্ঘ্য ২৮.৫ সেন্টিমিটার বা ১১.২২ ইঞ্চি। এই পরিমাপটা করা হয়েছে কবজি থেকে মধ্যাঙ্গুলির শীর্ষভাগ পর্যন্ত।
এর আগ জীবিত কোন ব্যক্তির দীর্ঘতম পায়ের রেকর্ডও সুলতানের দখলে ছিল। সুলতানের বা পায়ের উচ্চতা ৩৬.৫ সেন্টিমিটার বা ১ ফুট ২ ইঞ্চি, আর ডান পায়ের উচ্চতা ৩৫.৫ সেন্টিমিটার বা ১ ফুট ১.৯৮ ইঞ্চি।
গ্রোথ হরমোনের অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণেই সুলতানের এমন অস্বাভাবিক উচ্চতা বৃদ্ধি। পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে এই হরমোন নিঃসরিত হয়ে মস্তিস্কে প্রবেশ করে। যদি এই গ্রন্থি কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় (যেমন টিউমার দ্বারা হতে পারে), তাহলে অতিরিক্ত কিংবা খুব কম হরমোন নিঃসরিত হতে পারে।
১০ বছর বয়স পর্যন্ত সুলতান অন্য সব স্বাভাবিক বাচ্চাদের মতই ছিল। কিন্তু এরপরই অস্বাভাবিক রকমের উচ্চতা বৃদ্ধি হতে থাকে তার। ২০১০ সালের আগস্টে আমেরিকার ভার্জিনিয়ায় তার পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমার অপারেশনের মাধ্যমে অপসারণ করা হলে সুলতানের উচ্চতা বৃদ্ধি বন্ধ হয়।
সুলতানের বাবা-মা এবং তার বাকি চার ভাইবোন অবশ্য এই রোগে আক্রান্ত হননি, তারা সবাই স্বাভাবিক মানুষের মতই উচ্চতাপ্রাপ্ত। অস্বাভাবিক এই উচ্চতার কারণে সুলতান তার স্কুল জীবনও শেষ করতে পারেননি। কৃষিকাজ করে তিনি সংসারে সহযোগিতা করতেন।
তার এই অস্বাভাবিক লম্বা হওয়ার একটা উপকারী দিকও অবশ্য দেখিয়েছেন সুলতান। ঘরের বাল্ব বদলে দেয়া, কিংবা পর্দা বদল করা, এসব কাজে মাকে খুব সহজেই সাহায্য করতে পারতেন তিনি!
তবে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি। তার সাইজের জামা কাপড় খুঁজে পাওয়া যেন পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটি! ৮ ফুটি উচ্চতা নিয়ে কোন গাড়িতেও ঠিকমত বসতে পারতেন না সুলতান!
তবে বর্তমানে জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা হলেও সর্বকালের সবচেয়ে লম্বা ব্যক্তি কিন্তু সুলতান নন। গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস সেই স্বীকৃতিটা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রবার্ট ওয়াডলোকে। ১৯৪০ সালে ওয়াডলোর উচ্চতা ২৭২ সেন্টিমিটার রেকর্ড করে গিনেজ, যা এখনো পর্যন্ত কোন ব্যক্তির জন্য সর্বোচ্চ উচ্চতার রেকর্ড।