আপনি কি একজন শখের ফটোগ্রাফার? কখনো নেহায়েত খেয়ালের বশে ছবি তুলেছিলেন? আচ্ছা, কখনো কি আপনার মনে হয়েছে, আপনার তোলা ছবিই হয়ত যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে তৈরি করে যাবে অস্বস্তি? হয়ত ভাবছেন, শখের বশে তোলা ছবি আবার মানুষের অস্বস্তির কারণ হতে পারে কিভাবে? আরে হয়, হয়! আজ প্রিয়লেখার আয়োজনে থাকছে পৃথিবীর বিখ্যাত কিছু অস্বস্তিকর ফটোগ্রাফঃ
১) শায়িত ডুবুরী
ছবিটি দেখলে প্রথমে আপনার এটিকে একটি সাধারণ ছবি বলেই মনে হবে। কিছু শখের ডুবুরী হয়ত তাদের ছুটির সময়টা সাগরে নিচে ডাইভিং করে উপভোগ করছে, এটিই মনে হতে পারে আপনার কাছে তবে একটা কিন্তু রয়েছে। খেয়াল করলে দেখবেন, পেছনে একজন ডুবুরী রয়েছে যিনি ভাসবার চেষ্টা করছেন না; বরং তাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি পানিতেই শুয়ে আছেন। ঠিক তাই ঘটেছে হতভাগ্য এই ডুবুরীর কপালে। এটি হতভাগ্য এই স্ত্রীর মৃতদেহের ছবি, যাকে তার স্বামী হত্যা করেছে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে।
রোদেলা এক দুপুরে কিছু ডুবুরী পানিতে নেমেছিলেন আবহাওয়াটাকে উপভোগ করবার আশায়। পানিতে নেমে কিছুদূর যাবার পর তারা দেখেন একটি মানুষের অবয়ব কিন্তু তা কোন ধরণের নড়াচড়া করছে না। তাড়াতাড়ি মানুষটির কাছে গিয়ে তারা দেখেন মানুষটি মৃত। ১৯৯৯ সালের ইংল্যান্ডের ভার্জিন আইল্যান্ডের নিকটে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ খুনের আসামি হিসেবে মৃতার স্বামীকে অভিযুক্ত করা হয় এবং পরবর্তীতে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তিনিই দোষী সাব্যস্ত হন।
২) মাকড়সা বৃক্ষ
২০১০ সালে পাকিস্তানে ঘটে যায় ভয়াবহ এক বন্যা। বেশ কিছু অঞ্চল ডুবে যায় এই বন্যায়। তবে সিন্ধের কিছু অঞ্চলে একটি অবাক করার মত দৃশ্য দেখা যায়। গাছের ওপর মাকড়সার জালের মত আঁশটে কিছু একটা জড়িয়ে রয়েছে বলে দেখা যায়। পরবর্তীতে দেখা যায় যে, জালের মত নয়, বরং এগুলো মাকড়সার জালই। বন্যার পানির কারণে মাকড়সাগুলো কোথাও যাবার জায়গা না পেয়ে গাছের ওপরে ওঠে এবং সেখানেই জাল বুনে বাসা বাঁধতে শুরু করে। যুক্তরাজ্যের একজন মাল্টিমিডিয়া এডিটর, রাসেল ওয়াটকিন্স এই ছবিটি তার ক্যামেরায় ধারণ করেন।
৩) পেছনে ফ্রেডি ক্রুগার নয় তো!
বিখ্যাত হরর ছবি “আ নাইটমেয়ার অন এলম স্ট্রিট” যারা দেখেছেন, তাদের কাছে ফ্রেডি ক্রুগার নামটি অপরিচিত নয়। বিকটদর্শন এই খুনী প্রেতাত্মা তাড়া করে বেড়ায় কিছু কিশোর ছেলেমেয়েকে, যার কারণ তাদের বাবা মায়েদের করা অতীতের কিছু ভুল। সে যাক গে; তারচাইতে বরং ছবিটার দিকে খেয়াল করা যাক। হাসিখুশি তিনটি বাচ্চা বেশ পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছবি তুলবার জন্য। তবে একদম বাঁ পাশের বাচ্চাটিকে বেশ অবাক লাগছে এবং সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে, তাদের ঠিক পেছনে যে ব্যক্তিটিকে দেখা যাচ্ছে, সে অবিকল ফ্রেডি ক্রুগারের মত বেশভূষা! মাথায় হ্যাট, মুখাবয়ব, লম্বা লিকলিকে দেহ- নাহ, এ ফ্রেডি ক্রুগার না হয়েই যায় না, এমনটিই মতামত দিয়েছেন অনেকে। প্রশ্ন হচ্ছে পর্দার চরিত্র বাস্তবে চলে আসে কিভাবে? হয়ত আপনারা বলবেন, ছবিটি দেখে পেছনের ব্যক্তি (!) অনুপ্রাণিত হয়েছেন এমন একটি অস্বস্তিদায়ক ছবি তুলবার জন্য। এবার যদি আপনাদের বলা হয়, ছবিটি তোলা হয়েছিল আ নাইটমেয়ার অন এলম স্ট্রিট ছবিটির মুক্তি পাওয়ার অনেক আগে, তাহলে কি বলবেন? একটু হলেও অস্বস্তি জাগছে, তাই না?
৪) জানালার ওপাশের মানুষটিঃ
ধরুন, আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। এমন সময় আপনার সামনে একটি পিলার এসে পড়ল, যেখানে একটি নোট সাঁটানো আছে। আপনি এড়িয়ে যেতে চাইছেন কিন্তু নোটের ঠিক ওপরেই একটি পুতুল আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। এবার আপনি পড়া শুরু করলেন নোটটি। যেখানে লেখা আছে,
“যখন তুমি এই নোটখানা পড়া শুরু করেছ, ঠিক তখনই তোমার ওপরের জানালা থেকে কেউ একজন তোমার ছবি তুলে নিচ্ছে। সে তোমার ছবিটি দিয়ে একটি উই পুতুল তৈরি করবে। এবার তোমার উই পুতুলের সাথে সে অন্যান্য আরো উই পুতুল নিয়ে ভয়ানক সব খেলা খেলবে।”
বলুন এবার কেমন লাগবে আপনার? মনের মাঝে ভয় সৃষ্টি হবে না? হয়ত এই নোটখানা তৈরি করা হয়েছিল রাস্তায় হেঁটে যাওয়া পথিকদের মনে স্রেফ ভয় তৈরি করতে করতে। তবে কে জানে, সত্যিই ওপরের জানালা থেকে আপনাকে আমাকে কেউ লক্ষ্য করছে কি না!
৫) বিয়ের অনুষ্ঠানে ওরা কারা!
সকল নরনারীর জীবনেই বিয়ে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আনন্দে উৎসবে মাতোয়ারা হন এদিন সবাই। তবে এই ছবিটি দেখলে একটু চমকে উঠতে হয়। একটি বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে এবং তার এক বিল্ডিং সামনেই অদ্ভূত আলখাল্লা পরিহিত একদল মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন নব্যবিবাহিত দম্পতি ও আগতদের দিকে। জুম করলে দেখা যায় তাদের বেশভূষা সাধারণ নয়; বরং কোন কাল্ট বা গোপন চক্রের সদস্যদের মতই তাদের বেশভূষা। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, যাদের বিয়ে হচ্ছে বা যারা আমন্ত্রিত অতিথি, তারা এই সদস্যদের সম্পর্কে কিছুই জানেন না!
এই ছবিটি নিয়ে নানা ধরণের বিতর্ক রয়েছে। কেউ বলেছেন এটি ফটোশপ করা, কেউ বলেছেন দুটি ছবিকে জোড়া দিয়ে এমন একটি ছবি বানানো হয়েছে। তবে ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করলে মানুষ এখনো এই ছবিটিকে পৃথিবীর অন্যতম অস্বস্তিকর ছবি হিসেবেই চিহ্নিত করে থাকে।
আজ আর নয়। থাকুন প্রিয়লেখার সাথেই।
(ফিচারটি তৈরি করা হয়েছে “দ্য রিচেস্ট ডট কম” অবলম্বনে)