আপনি হতে চাইছেন আগামীর সবচেয়ে সফল একজন উদ্যোক্তা। ব্যবসায় এর নাম তুলে ধরতে চাইছেন সকলের কাছে খুব সুন্দর কোন প্রতীকের সহায়তায়। তখন কিন্তুআপনাকে ভাবতে হবে কোন স্মার্ট স্টাইলিশ লোগো সম্পর্কে। কারণ সেই লোগোই হয়ে দাঁড়াবে আপনার বিজনেস রেপুটেশনের প্রতীক।
চলুন তবে জানি একজন ব্যবসায়ীকে ব্র্যান্ডিং সৃষ্টির জন্য প্রথমে কোন প্রাথমিক ভাবনাগুলো ভাবতে হয়। একটি সফল ব্র্যান্ড প্রকাশ করে প্রত্যাশা, স্মরণীয় অভিজ্ঞতা, গল্প এবং সম্ভাবনা। তার পাশাপাশি প্রত্যেকটি ভাবনা ও পরিকল্পনাকে কিভাবে সফলতায় রূপান্তরিত করবেন, সুন্দর একটি ছন্দবদ্ধ সম্পর্ক স্থাপন করবেন যা আপনার সম্ভাব্য ভোক্তা বা ক্লায়েন্টকে আপনার পণ্য বা সেবাটি নির্বাচন করার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে তাও কিন্তু নির্ধারণ করে দিবে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্র্যান্ড ।
একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের পরিচয় শুধু তার ইউনিক ডিজাইন নয়। সেই ব্র্যান্ডের সমর্থনকারী ক্রেতা ও ভোক্তা সম্প্রদায়, যারা সেই ব্র্যান্ডের রেফারেল হিসেবে জনপ্রিয়তা সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ সহায়তা করে। উদাহরণ স্বরূপঃ যারা কোকের অন্ধ ভক্ত তারা কিন্তু কখনোই আপনাকে পেপসি পান করতে উৎসাহিত করবে না।
আপনার ব্যবসায়ের জন্য আসলেও কি ব্র্যান্ডিং প্রয়োজনঃ
আপনার ব্র্যান্ডিং কিন্তু শুধু আপনার নাম বা পরিচয় নয়, এটি আপনার কমিটমেন্টের পরিচায়ক। এমন একটি ওয়াদা যা যতদিন আপনার প্রতিষ্ঠান চালু থাকবে ততদিন আপনার প্রচার ও প্রসার অব্যাহত রাখবে।
হ্যাঁ, তাই জোর দিয়েই বলছি পণ্য বা সেবা যাই হোক না কেন ব্র্যান্ডিংএর কোন বিকল্প নেই। কারণ যে পণ্য ও সেবা আপনি দিচ্ছেন তা তো আপনার মত আরও অনেক প্রতিষ্ঠান দিচ্ছে। তবে কেন আপনার প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তারা বেছে নিবে? ব্র্যান্ডিং তাই আপনার নিজের পজিটিভ ইমেজ কে জানাতে ভীষণ ভাবে প্রয়োজন। ব্রান্ডিং আপনার জন্য আবশ্যক –
এছাড়াও, একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ডিজাইন সৃষ্টির অন্যান্য সুবিধাও রয়েছে:
বিজনেস টু বিজনেস ( B2B) মার্কেটাররা ব্র্যান্ডিং সম্পর্কে কি বলছেঃ
উপরে উল্লিখিত ঘটনাগুলি স্পষ্ট করে তোলে যে আপনার ব্র্যান্ডটি শুধু আপনার ব্যবসায়িক পরিচয় নয় বরং প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি করে যা কেবল কথা বলে না কিন্তু দৃশ্যমান মনোভাবকে ও প্রকাশ করে।
আপনার টার্গেটেড ক্লায়েন্টের সাথে একটি চিরস্থায়ী সম্পর্ক তৈরি করতে আপনাকে বা আপনার ব্যক্তিত্বকে এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে যা বিশ্বাস উৎপাদন করে এবং আপনার অডিয়েন্সের মনে আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনার জন্ম দেয়।
টার্গেটেড ক্লায়েন্টের সাথে স্পষ্টতই যোগাযোগ করার জন্য আপনাকে “ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি ডিজাইন” তৈরি করতে হবে
ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি একটি যৌথ বার্তা যা আপনার লোগো, ব্র্যান্ড নাম, শৈলী, এবং ভিজ্যুয়াল মাধ্যম কে বোঝায়।
ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি ডিজাইন কি?
সহজ শর্তে, ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি ডিজাইন বলতে বুঝায় সুকৌশলে টার্গেটেড ক্লায়েন্টের সামনে নিজের প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়, কাজের মান এবং সব ব্র্যান্ড এলেমেন্ট গুলোর চিত্র প্রকাশ করে।
আমরা একটি ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি ডিজাইন প্রকাশে ২টি প্রধান বিল্ডিং ব্লককে কাজ ভেদে প্রাধান্য দিতে পারি। এর মধ্যে রয়েছে :
প্রতিটি বিল্ডিং ব্লক সম্পর্কে চলুন একটি জানিঃ
ডেভেলপিং ব্র্যান্ড ডিজাইন
আপনার ডিজাইন যে ব্র্যান্ডের সঙ্গে যেতে পারে তা বিবেচনা করার আগে, আসুন আমরা শূন্য থেকে শুরু করি। প্রথমে আপনার ব্র্যান্ড আইডিন্টিটি সৃষ্টিতে আগে কোন বিল্ডিং ব্লক রাখবেন সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যা আপনার ব্র্যান্ড ডিজাইন এলেমেন্টের জন্য বেস তৈরি করবে।
এই ডিজাইনে অবশ্যই থাকতে হবে:
টাইপোগ্রাফিঃ
আপনি সঠিক অনুমান করেছেন। আমরা আপনার সমস্ত ব্র্যান্ডিং এলেমেন্ট গুলোর মাঝে একটি ইউনিফর্ম অন্তর্ভুক্ত করা উচিত আর সেটি অবশ্যই ফন্ট।
৪টি প্রধান ধরনের টাইপোগ্রাফি রয়েছে:
টাইপোগ্রাফি আপনার ব্র্যান্ড এর ভয়েস বহন করবে এবং আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে অপ্রকাশ্য অনেক কিছু বলবে।
সুতরাং, তাদের মান এবং গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টিতে একই সাথে সতর্কতা ও বুদ্ধি মত্তার পরিচয় দিন।
কালার প্যালেটঃ
রং মানুষের সাথে মানসিক সম্পর্ক তৈরি করে।
একইভাবে, আপনার ব্র্যান্ড কালার প্যালেটটি আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের উপর পজিটিভ-নেগেটিভ ২ ধরনের প্রভাবই ফেলতে পারে।
আপনি আপনার ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি ডিজাইন করতে নীচের রং এবং তাদের বৈচিত্র্য বিবেচনা করতে পারেন।
ব্র্যান্ডিং আইডেন্টিটি-কালার ডিজাইন
ফরম / লোগোঃ
যখন আপনি একটি লোগো ডিজাইন করার কথা ভাবছেন,তখন হয়তো আপনার মনে ফর্ম এবং আকৃতি সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন জাগতে পারে।
আপনার ওয়েবসাইটের জন্য কল-টু-অ্যাকশন কৌশল নির্ধারণ করার সময় ফর্ম এবং আকারের প্রশ্নটিও মনে জাগবে।
চলুন দেখি কিছু আকারঃ
ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি ডিজাইন-লোগো
বৃত্তাকার শেপ: বৃত্তাকার আকৃতি এমন একটি সম্প্রদায়কে পরিবেষ্টিত করে যা ঐক্য ও স্নেহের চিত্রায়ন ঘটায়।
স্ট্রেইট এইজড শেপ: সোজা প্রান্তের সাথে, শক্তি দৃঢ়তার যে সমন্বয় তা দেখায়স্ট্রেইট এইজড শেপ। এটি শক্তি এবং দক্ষতার ও ইঙ্গিত বহন করে।
স্ট্রেইট লাইন: স্ট্রেইট লাইন এর বিভিন্ন প্রভাব রয়েছে। তার মধ্যে Vertical লাইন শক্তি বোঝায়, Horizontal রেখা শান্তি প্রস্তাব বোঝায়।
আপনার লোগো ডিজাইন আপনার ব্র্যান্ড এর পরিচয় দানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আপনার ডিজাইনারের সাথে কাজ করার সময়, আপনার লোগোটি যেন নিম্নলিখিত প্রয়োজনীয়তাগুলি পূরণ করতে পারে সেদিকে আপনার লক্ষ্য রাখতে হবে:
নিশ্চিত করুন, যেন আপনার ডিজাইনার লোগোটি নানা প্যাটার্ন সৃষ্টি করে যেন বিশেষ বিশেষ দিনে আপনি তার প্রয়োগ ঘটিয়ে আকর্ষণীয় ব্র্যান্ড ইমেজ সৃষ্টি করতে পারেন। (যেমনঃ- একটি কালো এবং সাদা সংস্করণ বা একাধিক আকার)।
ওয়েবসাইটঃ
নিম্নলিখিত ৫টি উপাদান আপনার ওয়েবসাইটকে একটি সফল ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি এলেমেন্ট এর পরিবেশ দিবে:
রঙ:
আপনার ব্র্যান্ডের নাম এবং লোগো ছাড়া, আপনার ব্র্যান্ডিং এর অন্য সব দিক অপরিমাপযোগ্য এবং সেই বৈশিষ্ট্যগুলো আপনার সম্ভাব্য গ্রাহকদের আবেগকে উদ্দীপিত করে। আপনার ব্র্যান্ড টোন, ইন্ড্রাস্ট্রি ট্রেন্ড, এবং প্রতিযোগীদের চ্যালেঞ্জের ভিত্তিতে ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করে এমন কালার প্যালেট নির্বাচন করুন।
টাইপোগ্রাফি:
টাইপোগ্রাফি কিন্তু আপানার ব্যবসায়িক যোগাযোগের টোন নির্ধারণ করে, অনেক সময় ক্লায়েন্ট আপনার সাইটের টাইপোগ্রাফি দেখে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে আকৃষ্ট হয়।
ক্যারেক্টার:
আপনার ওয়েবসাইটটিকে আরও আকর্ষণীয় করতে আপনার ব্র্যান্ডকে প্রতিনিধিত্ব করে এমন ক্যারেক্টার ব্যবহার করতে পারেন। আপনার ব্র্যান্ড ক্যারেক্টারকে জীবিত মানুষের সাথে তুলনা করুন এবং মনে করুন যে আপনি কিভাবে সেই মানুষের ব্যক্তিত্বকে আরও উন্নত করতে পারেন- যেন আরও লোক তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। টুইটারে anthropomorphism ব্যবহার করে একটি পাখির মাঝে মানুষের গুণাবলি সংযুক্ত করে। একটি নির্ভরযোগ্য চরিত্রায়নের মাধ্যমে ব্র্যান্ডকে অডিয়েন্সের মাঝে আরও জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব ।
কন্সিস্টেন্সি:
আপনি আপনার ব্র্যান্ড উপাদানের পুনরাবৃত্তি বা রিপিটেশন এমন ভাবে করুন যেন তা আপনার ব্র্যান্ডের নাম ও কাজ অডিয়েন্সের স্মৃতিতে স্মরণীয় করে রাখে। আপনার ব্র্যান্ড মেসেজের কৌশলী রিপিটিশন ঘটান, যেন তা প্রায় সময়ই আপনার ওয়েবসাইটের পৃষ্ঠা জুড়ে উপস্থিত থাকে। আপনার লোগো, ব্র্যান্ড নাম, রঙ এবং চরিত্রটি আপনার সমস্ত কমিউনিকেশন চ্যানেল জুড়ে ক্রমাগত প্রদর্শিত হবে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করুন । প্রাথমিক পর্যায়ে, আপনি একই UX-User Experience ঠিক রাখার জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড কালার, হেডার এবং ফুটার কন্সিস্টেন্ট বা একই ধারার রাখতে পারেন যেন ব্যাকগ্রাউন্ড কালার, হেডার এবং ফুটার দেখলেই অডিয়েন্সের মনে আপনার ব্র্যান্ড এর নাম ভেসে উঠে যা অডিয়েন্সকে একই সাথে আপনার পণ্য ও সেবা সম্পর্কে প্রভাবিত করবে এবং তারই সাথে ইন্ডাস্ট্রি আপনাকে ফলো করবে।
ইউএসপি: (Unique Selling Proposition)
একজন ভিজিটর, আপনার ওয়েবসাইটে পৌঁছানোর আগেই নিশ্চিত হবে যে তারা সঠিক জায়গায় আছেন কিনা, তাদের অনুসন্ধানের বিষয়টি কী, প্রাপ্ত তথ্যটি কি আকর্ষণীয়/ প্রয়োজনীয়? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর করা যেতে পারে ইউএসপি’র মাধ্যমে। ইউএসপি হবে একটি এমন একটি বিবৃতি যা আপনার ওয়েবসাইটের ট্রাস্ট ফ্যাক্টর বাড়াবে ।
সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যম:
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায় সব ইন্ডাস্ট্রি রিলেটেড মানুষের বিশেষ অবস্থান রয়েছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি আপনার টার্গেটেড মার্কেটের একটি বিশাল অংশ কে খুঁজে পাবেন।
তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আপনি পেতে পারেন ব্র্যান্ড আইডেন্টিটিঃ
ই-মেইল ডিজাইনঃ
আপনার ই-মেইল ডিজাইন যদি ভাল দেখায়, তার মানে আপনার ব্যবসায় এর ধরণ আপনার সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে ভালো দেখাচ্ছে।
সুন্দর ই-মেইল ডিজাইন, মেসেজ এবং অফারগুলো ক্লায়েন্টের মনোযোগ আকর্ষণ করে, পাশাপাশি তাদের মনে বিশ্বাসেরও সৃষ্টি করে।
আপনি যদি এখনও আপনার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে ইমেল পাঠান,তাহলে আপনাকে আরও প্রফেশনাল হতে হবে।
আপনার ইমেইল এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল নিশ্চিত করা, যে আপনি ক্লায়েন্টদের যে মেসেজটি পাঠাচ্ছেন তা যেন আপনার ব্র্যান্ড ভ্যালুর মান বজায় রাখে।
ব্র্যান্ডিং করার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পয়েন্ট গুলো আপনাকে সাহায্য করবে:
আজ এই পর্যন্তই। দ্রুতই আপনাদের সামনে আসবো নতুন কোন বিষয় নিয়ে ততদিন আমাদের সাথেই থাকুন।
আর্টিকেলটি যেখান হতে রূপান্তরিত।
ছবিসূত্রঃ ইন্টারনেট