ঘড়ি টিক টিক করছে। এই তো আর দুদিন পরই আসছে ঈদ উল আযহা। চারদিকে সাজ সাজ রব। প্রস্তুতি চলছে এবং একইসাথে যারা কুরবানী করবেন আল্লাহর উদ্দেশ্যে, তাদেরও চলছে নানা প্রস্তুতি।
শহর ঢাকা আস্তে আস্তে ফাঁকা হচ্ছে। স্কুল কলেজ অফিস আদালত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আর সে সাথে চলছে ঈদকে উদযাপন করার প্রস্তুতি। কুবানী শব্দটি এসেছে “কুরব” থেকে। এর মানে হচ্ছে, নৈকট্য, সান্নিধ্য এবং আরো অগ্রসর হওয়া, নিকটবর্তী হওয়া। হযরত ইবরাহীম (আঃ) তার প্রাণের প্রিয় পুত্র ইসমাইলের গলায় ছুরি চালাতে দ্বিধা বোধ করেন নি। আল্লাহর উদ্দেশ্যে তিনি তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটিকে কুরবানী করতে প্রস্তুত হয়ে যান। মহান আল্লাহর অপার মহিমায় ইবরাহীমের ছুরির নিচে চলে এল একটি দুম্বা এবং তারই ফলশ্রুতিতে আজ আমরা পালন করছি পবিত্র ঈদ উল আযহা। আসুন, আজ জেনে নেয়া যাক, বিভিন্ন দেশে ঈদ উল আযহা কেমন ভাবে, কি নামে পালিত হয়ে থাকেঃ
১) আমাদের দেশে অর্থাৎ, বাংলাদেশে ঈদ উল আযহা পরিচিত “কুরবানীর ঈদ” হিসেবেই। তবে বিভিন্ন দেশে এর বিভিন্ন নাম রয়েছে। মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মিসর ও লিবিয়ায় একে বলা হয়ে থাকে “ঈদুল কিবির”।
২) আফ্রিকার অনেক এলাকায় এটির পরিচয় ‘তাবাসকি’ বা ‘তোবাসকি’ নামে। নাইজেরিয়া এবং পূর্ব আফ্রিকায় পরিচিত ‘বাব্বার সালাহ’ নামে। সোমালিয়া, কেনিয়া এবং ইথিওপিয়ায় বলা হয় ‘সিডওয়েনি’। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পাকিস্তানে ঈদুল আযহাকে বলা হয় ‘বকরি ঈদ’। এসব দেশে বেশির ভাগই ছাগল কুরবানী করা হয়।
৩) একমাত্র ইন্দোনেশিয়াতেই শুধু বলা হয় ‘ঈদুল আযহা’। তুরস্কে বলা হয় ‘কুরবান বেরামি’ বা ত্যাগের উৎসব। অন্যদিকে বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, আলবেনিয়া এবং বুলগেরিয়ায় বলা হয় ‘কুরবান বাজরাম’। কাজাখস্তানে বলা হয় ‘কুরবান এইত’। কুর্দিশরা বলে ‘সেজনা কুরবানে’।
৪) পবিত্র ঈদের দিন নামাজ পড়ে ঘরে ফিরতে ফিরতেই দেখা যায় চারদিকের রাস্তাঘাট হয়ে আছে পশুর রক্তে রঞ্জিত। অর্থাৎ, কুরবানী সম্পন্ন হয়েছে। তবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মুসলমানরা কুরবানী দেন গরু ও ভেড়া। তবে সেটা প্রকাশ্যে নয়, করতে হয় নির্দিষ্ট একটি স্থানে। যুক্তরাজ্যের মুসলমানরাও বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের অন্যান্য দেশের মতো আড়ম্বরপূর্ণভাবেভাবে পবিত্র কুরবানীর ঈদ পালন করতে পারেন না। অনেকটাই আনুষ্ঠানিকতা পালন মাত্র।
৫) আমাদের দেশে কুরবানী ঈদের সময় একটি অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে পশুর হাট। পশুর হাটে দলবলে যেয়ে পশু কিনে তার গলায় নানা রঙ এর মালা, সাজিয়ে নিয়ে বাড়ি পৌছানো রীতিমিত একটি উৎসবের ব্যাপার। এছাড়াও রাস্তা ঘাটে বিভিন্ন মানুষের “ভাই কত নিল” প্রশ্নের উত্তর দেয়া তো আরো বেশ রোমাঞ্চকর। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় হাটে গিয়ের গরু দেখে কেনা হয় না। সেখানে কোন গরুর হাট বসে না। এর বদলে রয়েছে ডেইরি ফার্ম। না। ফার্মে সরাসরি গিয়ে গরু পছন্দ করে অর্ডার দিয়ে আসেন গ্রাহকরা। এছাড়া বেশির ভাগ বাঙালি গ্রোসারি অর্ডার করা গরু কেটে তিন ভাগ করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। আর দানের অংশ ফুডব্যাংক বা শেলটারগুলোতে দান করা হয়। খামারে ইলেকট্রনিক ও অটোমেটিক মেশিনে জবাই হয়।
আজ এ পর্যন্তই। প্রিয়লেখার সাথেই থাকুন।