অভিযাত্রীকের এবারকার লক্ষ্য বাংলাদেশের বগা লেকে। অপার সৌন্দর্যের অধিকারী এই বগা লেকের কিছু মিথ রয়েছে, রয়েছে কিছু আখ্যান। অভিযাত্রীক তার ডায়েরীতে পাঠকের জন্য এসব কিছু কথা তুলে রাখবে তবে তার আগে বগা লেক সম্পর্কে দু-চারটি কথা জেনে নেয়া যাকঃ
শুরুর কথাঃ
বগাকাইন হ্রদ বা বগা হ্রদ বা বগা লেক; যে নামেই একে ডাকুন না কেন, বগা লেককে ভ্রমণপিয়াসুরা বরণ করেছে সাদরে। প্রতি বছর হাজারো মানুষ এখানে এসে মাখিয়ে নেন প্রকৃতির রুপ-রস-বৈচিত্র্য। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বগা লেক একেবারে ক্রিওকারাডং এর গা ঘেঁষে অবস্থিত। মজার কিংবা অদ্ভুত, যাই বলুন না কেন, এই হ্রদের গঠন অনেকটা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের মত।
রুমা উপজেলার পূর্ব দিকে একটি নদী আছে, নামটি ভারী মিষ্টি। এই নদীর নাম শঙ্খ নদী। নাম শুনলেই মনে হয় এই নদীর পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে শোনা যাবে শাঁখের মায়াময় সুরের ঝংকার। এই নদীর তীর থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রয়েছে নাইতং মৌজা। নাইতং মৌজার পলিতাই পর্বতশ্রেণীর অন্তর্গত একটি পাহাড়ের চূড়ায় হ্রদটি অবস্থিত।
এবার পাঠকের জন্য অভিযাত্রীকের রয়েছে কিছু গল্প। গল্প বলবেন নাকি গালগল্প, তা পাঠকের হাতেই ছেড়ে দেয়া যাক। আসুন তাহলে শুরু করা যাক বগা লেকের ড্রাগন মিথ দিয়েঃ
বগা লেকের উৎপত্তি নিয়ে ধারণা করা হয় এটি আজ থেকে প্রায় ২০০০ বছর আগে গঠিত হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই এর সাথে জড়িয়ে থাকবে নানা ধরণের কাহিনী ও উপকথা। স্থানীয়রা মনে করে, এই বগা লেক এবং তার আশেপাশের অঞ্চল তৈরি হয়েছে একটি ভূমিকম্পের মাধ্যমে। সাথে সাথে আরেকটি গল্পও বগা লেক নিয়ে প্রচলিত আছে। তা হচ্ছে, এই অঞ্চলের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে বসবাস করত প্রাচীন দেব-দেবীরা। স্থানীয়রা তাদের পূজা করত ও তাদের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য প্রদান করত।
হঠাৎ করেই একদিন আগমন ঘটল এক দৈত্যের। স্থানীয় খুমি গোত্রের লোকজনকে সে হত্যা করল (কোন কোন গাঁথায় রয়েছে এদের সে খেয়ে ফেলেছিল)। ঘটনাটি এখানেই শেষ হতে পারত, কিন্তু শেষ হয় নি।
এই দৈত্য প্রতি বছর একটি ভয়ানক ড্রাগনের রুপ নিয়ে আসতে থাকে। তার এই প্রলয়ঙ্করী রুপ তৈরি করে ভূমিকম্পের, অসংখ্য গ্রাম বিরান হয়ে যাবার এবং সবচেয়ে মজার মিথটি হল, মানুষ মনে করে ঐ দৈত্যটির ড্রাগন আকৃতিতে পরিবর্তনের ফলেই তৈরি হয়েছে আজকের এই অপরুপ বগা লেক।
এবার একটা প্রাসঙ্গিক আলোচনায় আসা যাক।
বগা লেক কখনো শুকায় না; যদিও এর আসল কারণ কি তা ভূতত্ত্ববিদরা এখনো বের করতে পারেন নি। কারণ হচ্ছে, প্রবল এবং নিয়মিত ঝর্ণাধারার প্রস্রবণ বগা লেকে হয় না। তাহলে এমনটা হবার কারণ কি থাকতে পারে? আবার প্রতি বছর এপ্রিল-মে মাসের দিকে বগা লেকের টলটলে পানি হয়ে যায় কর্দমাক্ত ও খয়েরী রুপ ধারণ করে। এটির কারণও এখনো বের করতে পারেন নি ভূতত্ত্ববিদরা। এসব ঘটনা ঘিরেই তৈরি হয়েছে নানা মিথ ও উপকথা।
আজ আর নয়। থাকুন প্রিয়লেখার সাথেই। অভিযাত্রীক আবারো হাজির হবে আপনাদের সামনে, নতুন কিছু নিয়ে।
(তথ্যসূত্রঃ বান্দরবান ট্যুরস ডট কম)