ধরুন ছেলেটার নাম রাহাত। স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানে সবেমাত্র যোগ দিয়েছে। পড়াশোনা শেষ করবার পর খুব বেশি অপেক্ষা তাকে করতে হয় নি, যেহেতু বরাবরই সে ছাত্র হিসেবে ভালো। তবে চাকরির প্রথম দিনই যোগ দেয়ার পরপর সে একটু খেই হারিয়ে ফেলে। কারণ, কর্পোরেট জগতের সাথে পরিচয় না থাকা, কেমন করে সবার মন যুগিয়ে চলতে হবে এবং কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে- তা সম্পর্কে রাহাত নিতান্তই কম জানে। এর মাঝে বেশ কিছু শত্রুও জুটিয়ে ফেলেছে ও। আস্তে আস্তে অফিসের জীবনটা তার কাছে বিষময় হয়ে উঠতে থাকে। খাপ খাইয়ে নিতে না পারা, অফিসের নানা ধরণের এটিকেট, আচার ইত্যাদি মেনে না চলার ফলে রাহাত এখন ভাবছে চাকরিটাই ছেড়ে দেবে কি না!
পড়াশোনা শেষ করবার পর প্রতিটি তরুণের মনেই স্বপ্ন থাকে একটি চাকরি করা। যে চাকরি তাকে দেবে উপযুক্ত বেতন ও সুন্দরভাবে জীবন নির্বাহ করার আস্বাদ। কেউ কেউ যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পায় না, আবার কেউ কেউ যোগ্যতা না থাকার ফলেও নিজের স্মার্টনেস ও কর্মদক্ষতার ফলে খুব সহজেই ভালো একটি অবস্থানে পৌঁছে যেতে পারে। আবার কারো কারো অবস্থা এসে দাঁড়ায় উপরে বর্ণিত রাহাতের মত। কেমন হয় একটি অফিস? কিভাবে তার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়, কেমন করে এই জগতের মানুষের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতে হয়- এই নিয়েই আজকের প্রিয়লেখার আয়োজন-
সময়ানুবর্তীতা যে অনেক বড় একটি গুণ, এটি বলাই বাহুল্য। চাকরির প্রথম দিনে কখনোই দেরি করে আসবেন না। পারলে জীবনের যে ক’টি দিন অফিসে আসছেন, তার একদিনও দেরি করবেন না। যদি কোন ধরণের সমস্যা হয়, সেটি ভিন্ন বিষয় তবে স্বেচ্ছায় কখনো দেরি করবেন না। সময়মত অফিসে আসা এক ধরণের বোনাস পয়েন্ট যোগ করবে আপনার খাতায়। যেটি আপনার পরবর্তীতে নানা ধরণের সুফল এনে দেবে।
স্কুল কলেজের মত অফিসে কোন ধরণের ড্রেস কোড নেই সত্যি, কিন্তু তাই বলে যা তা ভাবে অফিসে আসাও যাবে না। সুন্দর পরিপাটি হয়ে অফিসে আসুন। এক্ষেত্রে ফরম্যাল গেট আপই সকলে পছন্দ করে।
নতুন অফিসে যোগদানের পর আপনার ভুলত্রুটি হবে এটিই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে আপনার কাজ হবে, উর্ধ্বতনদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া। তারা যা করছেন কিংবা যেভাবে কাজ করছেন, তা ভালোভাবে খেয়াল করুন। তবে বসদের মন যুগিয়ে চলার জন্য আপনার মোক্ষম অস্ত্র হতে পারে নিজের বিবেক বিবেচনা। অন্যের সাহায্য নেবেন, কিন্তু তা থেকে নিজের জন্য সেরা কোন কাজটি তা নির্ধারণ করে ফেলুন। আর সবচেয়ে ভালো হয় বসের সাথে আলোচনা করে নিজের সমস্যাগুলো বের করা।
একজন সবকিছু সম্পর্কে জানবে সেটি কখনোই কাম্য নয়। তবে আগ্রহ প্রকাশ করা ভালো, যদি সেটি খুব বেশি বিরক্তির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। প্রশ্ন করুন, জেনে নিন আপনার চারপাশে কি হচ্ছে। নিজের কাজ সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানতে উর্ধ্বতনদের নিকট প্রশ্ন করে জেনে নিন নানা ধরনের টিপস সম্পর্কে।
কি কাজ করছেন, কি কাজ করবেন এটির জন্য একটি লিস্ট করে রাখুন। এক্ষেত্রে তারিখের নিচে করণীয় কাজগুলো কি, তা লিখে রাখলে সবচেয়ে ভালো হবে। এটিকে বলা হয়, “ক্যালেন্দার সংরক্ষণ”।
কর্মক্ষেত্র মানেই নতুন নতুন ধরণের চ্যালেঞ্জ হাতে নেয়া। একজন কর্মী এই চ্যালেঞ্জগুলো গ্রহণের মাধ্যমে বেশ সহজেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে, যা তার পরবর্তী পদোন্নতির ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে এমন কোন কাজ বা চ্যালেঞ্জ হাতে নেবেন না, যা আপনি করতে পারবেন না। তাহলে আপনার সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ভূমিকা সকলের মনেই আসবে।
অফিসে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করবেন বসের কাছে। এক্ষেত্রে আপনার কর্মরিকল্পনা ও কর্মসম্পাদনাই হবে প্রধান হাতিয়ার। অনেকে অফিসে বসের মন যুগিয়ে চলার জন্য চাটুকারিতা শুরু করে দেয়। এটি কখনোই কাম্য নয়। কারণ, এর ফলে আপনি অনেকের ঈর্ষার কারণ হবেন ও আপনার যোগ্যতা নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্নের উদয় হবে। আপনার ব্যবহার, কাজ, প্রত্যুৎপন্নমতিতা ইত্যাদি নানা গুণাবলির সমন্বয়ে বসের মন যুগিয়ে চলার চেষ্টা করুন।
একটি অফিসে সকলেই আপনার সাথে সমান আচরণ করবে না। আপনি যে সকলের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠবেন এটিও ভাবা দুষ্কর। তবে সরাসরি কাউকে যুদ্ধে আহ্বান করার চাইতে একটি হাসি গড়ে তুলতে পারে একটি অফিসকে। কি দরকার অযথাই কারো সাথে ঝগড়া কিংবা মনোমালিন্যের তৈরি করার। সে যদি আপনাকে কটু কথা বলে, তাহলে চুপ থাকুন। মনের রাগকে প্রশমিত করুন। নিজের কাজ ও কথার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিন যে আপনিই সঠিক। অফিসে হাসিমুখ ধরে রাখা অতি জরুরী।
অফিসে কারো সাথে অন্যের বদনাম করবেন না। এটি সুরুচির পরিচয় দেয় না। এটি একভাবে যেমন আপনার সম্পর্কেও একটি বিরুপ প্রতিক্রিয়া অন্যের মনে তৈরি করে, ঠিক তেমনি অফিসের সুসম্পর্কগুলোকে বিষিয়ে দেয়।
কাজের ক্ষেত্রে কখনো মনমত হয়ে উঠতে নাই পারে একজন। সেক্ষেত্রে তাকে একান্তে ডেকে কমতিগুলো বুঝিয়ে দিন, তার ভুলগুলো সম্পর্কে তাকে জানান। কিন্তু তাকে কখনো অন্যের সামনে অপমান করবেন না, বিশেষ করে অধস্তনদের সামনে। কারণ, এই ধরণের ঘটনাগুলো অফিসে একস্থানে আটকে থাকে না, ছড়িয়ে পড়ে। নানা ধরণের ফিসফাস ও কানকথা শুরু হয়, যা একটি অফিসের পরিবেশের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়।
একটি অফিস সুন্দরভাবে পরিচালিত হতে পারে তার কর্মীদের মাধ্যমেই। এভাবেই এক একটি অফিসের ভেতর গড়ে ওঠে ঐক্য, সহমর্মিতা ও কাজের প্রতি নিবেদন।
আজ এ পর্যন্তই। প্রিয়লেখার সাথেই থাকুন, সকলের প্রিয় হয়ে উঠুন।