শূন্য যদি ব্যবহার করা না হত বা শূন্যের ব্যবহার যদি কেউ না জানত, তাহলে এ মহাবিশ্ব অনেক পিছিয়ে থাকত। গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এমনকি আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও শূন্যের ব্যবহার অনেক। শূন্যের কোন মূল্য নেই, এ কথা বলাটা রীতিমত পাপের পর্যায়ে পরে। আজ এই শূন্য নিয়েই কিছু কথা বলব প্রিয়লেখার এই আয়োজনেঃ
গণিতে শূন্যের ব্যবহার ছিল মোটামুটি একটি বিপ্লবের পর্যায়ে। ইতিহাসবিদগণ অনেকদিন ধরেই জেনে আসছেন যে প্রাচীন ভারতবর্ষেই এর ব্যবহার প্রথম শুরু হয় কিন্তু কোন স্থান থেকে এটি এসেছিল, তা সম্পর্কে তারা স্পষ্ট কোন ধারণা পান নি। তবে এই দিন বোধহয় এবার ফুরিয়ে এল।
ভারতবর্ষে সবচেয়ে “আদিমতম” শূন্যের প্রচলন কবে হয়েছিল, তা নিয়ে তৃতীয়-চতুর্থ শতাব্দীর একটি ম্যানুস্ক্রিপ্ট সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষকরা তাদের গবেষণালব্ধ প্রাপ্তি অবশেষে প্রকাশ করেছেন।
১৯০২ সাল থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহে একটি প্রাচীন বিখ্যাত ম্যানুস্ক্রিপ্ট রয়েছে। এটির নাম ‘বাশখালী ম্যানুস্ক্রিপ্ট’। ১৮৮১ সালে বাশখালী গ্রামে এক কৃষক তার ক্ষেতে এই ম্যানুস্ক্রিপ্টটি খনন করে খুঁজে পায়। এই বাশখালী গ্রামটির অবস্থান পেশোয়ারের নিকট, যা আজকের পাকিস্তান নামে পরিচিত। এই ম্যানুস্ক্রিপ্টটি পাতার তৈরি এবং এখানে ডটের সাহায্যে অন্তত কয়েকশ শূন্যের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে।
তবে এই শূন্যগুলো ঠিক এমন নয়, যা আমরা আজকের শূন্য হিসেবে চিনি। পূর্বে শূন্যকে ব্যবহার করা হত সেসব সংখ্যার সাথে, যাদের বেশ বড় ধরণের একটি মান রয়েছে। (যেমন ১ এর পরে ০ ব্যবহার করলে ১০ হয়। তবে অতীতে শূন্য ব্যবহার করা হত তিন বা ততোধিক সংখ্যার সাথে) এছাড়াও, মায়ান সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা- ইত্যাদি সভ্যতার মানুষ শূন্যকে অনেক বড় পরিমাপক হিসেবে ব্যবহার করত।
মারকাস দু সতো, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের একজন অধ্যাপক, বলেন,
‘নতুন এই প্রাপ্তি আমাদের কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয়। কারণ, এটি হচ্ছে একটি বীজের মত, যা শত শত বছর পরে একটি বিশাল মহীরুহ হয়ে আমাদের কাছে তার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানান দিয়েছে। ইতিহাসের অন্যতম মুহুর্তগুলোর মাঝে এই মুহুর্তটি প্রকাশ করবার মত ভাষা আমাদের কাছে নেই।’
বীজগণিত, জ্যামিতি, কম্পিউটার বিজ্ঞান ইত্যাদি নানা ধরণের বিষয়ে শূন্যের ব্যবহার যে অপরিসীম, তা বলাই বাহুল্য। এছাড়াও আজকের ক্যালকুলাসের যে সীমাহীন অগ্রগতি এবং উন্নতি, তা শূন্যের ব্যবহার ছাড়া একদম অনিশ্চিত ছিল- এটা বলাই চলে। সাংখ্যিক বিচারে শূন্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সর্বপ্রথম জ্যোতির্বিদ ব্রহ্মগুপ্ত তার “ব্রহ্মপুতসিদ্ধান্ত” নামক বইতে ব্যবহার করেন। খ্রিস্টের জন্মের ৬২৮ বছর পূর্বে এই বইটি লিখা হয়েছিল।
বাশখালী ম্যানুস্ক্রিপ্ট উন্মোচনঃ
লেখার ধরণ ও ভাষা অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা এতোদিন ধারণা করতে চাইছিলেন এটির বয়স কত হতে পারে। তবে সম্প্রতি একটি জাপানি গবেষণায় তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, অষ্টম থেকে দ্বাদশ- এই সময়ের ভেতর এই ম্যানুস্ক্রিপ্ট লেখা হয়েছিল। এছাড়াও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় রেডিওকার্বন ডেটিং-এর সাহায্যে এর বয়স নির্ধারণ করার চেষ্টা করে। রেডিওকার্বন ডেটিং হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যার সাহায্যে কোন বস্তুর উপাদানগুলোর মাত্রা ও পর্যায় নির্ধারণ করে বস্তুটির বয়স কত হতে পারে তা নির্ধারণ করা হয়। তবে এই প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বিজ্ঞানীদের। দেখা যাচ্ছে যে, বাশখালী ম্যানুস্ক্রিপ্ট কেবলমাত্র একটি উপাদান নয়, বরং অনেকগুলো উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
রেডিওকার্বন ডেটিং-এ তিনটি ফলাফল পাওয়া যায়। প্রথমটি হচ্ছে ২২৪-৩৮৩ এডি, দ্বিতীয়টি হচ্ছে ৬৮০-৭৭৯ এডি এবং তৃতীয়টি হচ্ছে ৮৮৫-৯৯৩ এডি।
ক্যামিলো ফরমিগাত্তি, বদলিয়ান লাইব্রেরির একজন সংস্কৃত বিষয়ক লাইব্রেরিয়ান ও গবেষক বলেন,
‘এটা সম্ভব যে বাশখালী ম্যানুস্ক্রিপ্ট কয়েকটি টেক্সটে লেখা হতে পারে। তবে আমাদের আরো গবেষণা করবার প্রয়োজন।’
আমরাও তাই চাই। দ্রুত উন্মোচিত হোক বিজ্ঞানের এই অন্যতম এক প্রাচীন রহস্যের। একইসাথে মানব ইতিহাসের অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর জেনে যাক সকলে। ততদিন আমরা আশায় বুক বাঁধি। আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে যেতে পারেন এই ভিডিও লিংকে
আজ আর নয়। প্রিয়লেখার সাথেই থাকুন।
(তথ্যসূত্রঃ লাইভ সাইন্স)