১৯ সেপ্টেম্বর, মহালয়া। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয়া দুর্গাপূজার বাকি থাকবে কেবল আর এক সপ্তাহ। শারদীয়া দুর্গাপূজার এক সপ্তাহ আগে দেবী দুর্গার আরাধনা বন্দনায় পালিত হয় মহালয়া। মহালয়ার দিন ভোরে উঠে দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের গল্প শোনা এখনো হিন্দু সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। মহালয়া সামনে রেখে জেনে নিন এর ইতিহাস।
শাস্ত্রমতে মহালয়া হচ্ছে একটি অমাবস্যা তিথি, এ তিথিতে সাধারণত পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ তর্পণ করা হয়। এ দিন তর্পণ করলে পিতৃপুরুষরা নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে উত্তরসূরিদের আশীর্বাদ প্রদান করেন। এছাড়া মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গার বোধন করা হয়, বোধন অর্থ জাগরণ। তাই মহালয়ার পর দেবীপক্ষের/শুক্লপক্ষের প্রতিপদে ঘট বসিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার সূচনা করা হয়। শ্রাবণ থেকে পৌষ এই ছয় মাস দক্ষিনায়ণ, দক্ষিণায়ণ দেবতাদের ঘুমের কাল। তাই বোধন করে দেবতাদের জাগ্রত করা হয়। মহালয়ার পর প্রতিপদে যে বোধন হয় সে সময় সংকল্প করে দুর্গাপূজার আয়োজন চলে। একে বলে কল্পরম্ভা, যদিও ষষ্ঠী থেকে পূজার প্রধান কার্যক্রম শুরু হয় তাই বলা হয় ষষ্ঠাদিকল্পরম্ভা। এবং সপ্তমী থেকে বিগ্রহতে। প্রতিপদ থেকে শুধু ঘটে পূজা ও চন্ডী পাঠ চলে।
মহালয়ার ইতিহাস:
শ্রী শ্রী চন্ডী গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ের কাহিনী অনুসারে, প্রলয়কালে পৃথিবী এক বিরাট কারণ–সমুদ্রে পরিণত হলে শ্রীবিষ্ণু সেই সমুদ্রের উপর অনন্তনাগকে শয্যা করে যোগনিদ্রায় মগ্ন হলেন। এই সময় বিষ্ণুর কর্ণমল থেকে মধু ও কৈটভ নামে দুই দৈত্য নির্গত হয়ে বিষ্ণুর নাভিপদ্মে স্থিত ব্রক্ষ্মাকে বধ করতে উদ্যত হল। ভীত হয়ে ব্রহ্মা বিষ্ণুকে জাগরিত করবার জন্য তাঁর নয়নাশ্রিতা যোগনিদ্রাকে স্তব করতে লাগলেন। সন্তুষ্ট হয়ে দেবী শ্রীবিষ্ণুকে জাগরিত করলে তিনি পাঁচ হাজার বছর ধরে মধু ও কৈটভের সাথে মহাযুদ্ধে রত হলেন। পিতৃপক্ষ আর দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণ হচ্ছে মহালয়া৷ ভাদ্র মাসের কৃষ্ণা প্রতিপদ শুরু হয়ে পরর্বতী অমাবস্যা র্পযন্ত সময়কে পিতৃপক্ষ বলে৷ পুরাণ মতে ব্রহ্মার নির্দেশে পিতৃপুরুষরা এই ১৫ দিন মনুষ্যলোকের কাছাকাছি চলে আসেন৷ তাই এই সময় তাঁদের উদ্দেশ্যে কিছু র্অপণ করা হলে তা সহজেই তাদের কাছে পৌছায়। তাই গোটা পক্ষকাল ধরে পিতৃপুরুষদের স্মরণ ও মননের মাধ্যমে র্তপণ করা হয়৷ যার চূড়ান্ত প্রকাশ বা মহালগ্ন হল এই মহালয়া৷ অনেকেই এই দিনটিকে দেবীপক্ষের সূচনা বলে থাকেন। যদিও এটি একটি জনপ্রিয় ভ্রান্ত ধারণা৷ মহালয়া পিতৃপক্ষের শেষ দিন৷ পরের দিন শুক্লা প্রতিপদে দেবীপক্ষের সূচনা হয়৷ সেই দিন থেকে কোজাগরী পূর্ণিমা পযন্ত ১৫ দিনই হল দেবীপক্ষ৷