১৯২৬ সালের ১১ ডিসেম্বর ভারতের দিল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন শান্তি দেবী। আর দশটি সাধারণ শিশুর তুলনায় তিনি ছিলেন একেবারেই আলাদা। হবেই বা না কেন, চার বছর বয়সে কোন শিশু তার স্বামী-সন্তানের কথা জানতে চায়!
১৯৩০ এর দশকে শৈশবাবস্থায় নিজেকে ‘জাতিস্মর‘ (পূর্বজন্মের স্মৃতিধর) হিসেবে দাবি করেন শান্তি দেবী। ঘটনাটি মহাত্মা গান্ধীর গোচরে আনা হলে তিনি শান্তির সঙ্গে দেখা করেন এবং তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করেন; ১৯৩৬ সালে এর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আরও দুটি প্রতিবেদন সেই সময় লেখা হয়েছিল। বালচন্দ্র নাহাত তাঁর প্রতিবেদনটি ‘পুনর্জন্ম কি পর্যালোচনা‘ নামে একটি হিন্দি পুস্তিকার আকারে প্রকাশ করেন। তিনি এতে বলেন, “যে সব তথ্য আমাদের কাছে এসেছে, তাতে নিশ্চিতভাবে উপসংহার টানা যায় না যে, শান্তি দেবীর ‘পূর্বজন্মের স্মৃতিসমূহ বা এ সংক্রান্ত ঘটনা পুনর্জন্ম প্রমাণ করে।” ইন্দ্র সেন তাঁর এক নিবন্ধে এই যুক্তি খন্ডন করেন।
১৯৩৬ সালে নেওয়া সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে, ১৯৫২ সালে আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।এক সুইডিশ লেখক শান্তি দেবীর দু‘বার সাক্ষাৎকার নিয়ে ১৯৯৪ সালে একটি বই প্রকাশ করেন; এর ইংরেজি অনুবাদ ১৯৯৮ এ বের হয়।
শান্তি দেবী মাত্র চার বছর বয়সে তাঁর বাবা-মাকে বলেন যে, তাঁর আসল বাড়ি মথুরাতে এবং সেখানে তাঁর স্বামী বাস করেন। তার বাড়ি দিল্লী থেকে ১৪৫ কিমি দূরে অবস্থিত। ছয় বছর বয়সেই তিনি মথুরায় পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে পালান। বাড়ি ফিরে তিনি স্কুলে বলেন যে, তিনি বিবাহিতা এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার দশদিন পর তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। শিক্ষকদের সাথে আলাপচারিতায় শান্তি মথুরার কথ্যভাষা ব্যবহার করতেন এবং নিজের ব্যবসায়ী স্বামীর নাম ‘কেদারনাথ‘ বলে উল্লেখ করতেন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মথুরাতে গিয়ে ঐ নামে এক ব্যবসায়ীকে খুঁজে বার করেন, যার স্ত্রী লগড়ি দেবী, ন‘বছর আগে একটি পুত্রসন্তান জন্ম দেওয়ার দশদিন পর মারা গিয়েছিলেন। কেদারনাথ দিল্লিতে পৌঁছালে শান্তি তাকে ও তাঁর ছেলেকে তৎক্ষণাৎ চিনতে পারেন। শান্তি দেবী কেদারনাথের দাম্পত্য জীবনের নানা খুঁটিনাটির বর্ণনা দিলে কেদারনাথ তাকে লগডি দেবীর ‘পুনর্জন্ম‘ হিসেবে মেনে নেন। ঘটনাটি মহাত্মা গান্ধীর নজরে আনা হলে তিনি শান্তির সঙ্গে দেখা করেন এবং তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করেন। কমিশন ১৯৩৫ সালের ১৫ই নভেম্বর শান্তি দেবীকে নিয়ে মথুরা যায়। সেখানে শান্তি লগড়ি দেবীর দাদু তথা পরিবারের আত্মীয়দের শনাক্ত করেন। শান্তি বুঝতে পারেন যে, কেদারনাথ তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুশয্যায় দেওয়া কয়েকটি প্রতিশ্রুতি পালন করেননি। কমিশনের রিপোর্টে শান্তি দেবীকে লগড়ি দেবীর যথার্থ জন্মান্তর হিসেবে দেখিয়ে উপসংহার টানা হয়।
শান্তি দেবী আজীবন অবিবাহিতা ছিলেন। ১৯৫০ এর দশকে তিনি তাঁর কাহিনী আবারও বলেন। ১৯৮৬ তে তিনি আয়ান স্টিভেনসন ও কে.এস. রাউতকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লগড়ি দেবীর মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতাসমূহ ব্যক্ত করেন। কে.এস. রাউত তাঁর তদন্ত ১৯৮৭ সালেও চালিয়ে যান এবং শেষ সাক্ষাৎকারটি ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৭ তে শান্তি দেবীর মৃত্যুর চারদিন পূর্বে নেওয়া হয়।