আমাদের মনের ভাবনা গুলো, বন্ধুত্বের গল্পগুলো, ভালোবাসার উচ্ছ্বাস সমূহ অথবা নিজের ব্যক্তিগত ছবি সবই আজ আমরা খোলা মনে শেয়ার করছি। তবে এই শেয়ারের ও লাইকের ফাঁদে পড়ে আমাদের ব্যক্তিগত জীবন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে না তো ! আমরা জানি আমাদের সব ডেটাই ফেসবুক সংরক্ষন করে, আমাদের সেখানে অ্যাকাউন্ট করা রয়েছে তাই। তবে আমরা কি জানি যাদের ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট নেই তাদের ডেটাও তারা সংরক্ষন করছে ?তাই এখন প্রয়োজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু কিভাবে? তা জানাতেই আমাদের আজকের আয়োজন।
কেন ব্যাক্তিগত জীবনে ফেসবুকের এই নজরদারি
সবার প্রথমে যে কারনে তারা এই কাজটি করছে তা হলো – টার্গেট বেসড, ব্যক্তি কেন্দ্রিক, কার্যকরী অ্যাড প্রস্তুত করা। ওয়েবে ব্যবহারকারীর সার্চের ধরন দেখে তার আগ্রহের ক্ষেত্রগুলোকে নির্ধারণ করে অ্যাড গুলো সেই ব্যবহারকারীর ওয়ালে পৌঁছে দেওয়াই স্মার্ট মার্কেটিং।
ফেসবুক আসলে আমাদের ব্যপারে ঠিক কি জানছে
আমরা যতটুকুই ভাবি না কেন আমাদের সম্পর্কে তারচেয়ে অনেক বেশী কিছু জানে ফেসবুক। কি ধরনের বিষয় নিয়ে আপনি আগ্রহী, আপনার ঠিকানা, আপনার ফোন নাম্বার, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, আপনার স্নাতক বিষয়, আয়,খরচ, আপনার বেড়ানোর এলাকা- এই সব কিছুই তারা জানতে পারবে আপনার ও আপনার বন্ধুদের ইন্টারনেট অ্যাক্টিভিটি অ্যানালিসিস করে।আরো বড় ব্যপার হলো আপনি আপনার তথ্য মুছে দিলেও তা ফেসবুক ডেটাবেজ সার্ভারে রয়ে যাবে আজীবন।
ফেসবুক তাদের দিকেও নজর রাখছে যাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও নেই
একটি সমীক্ষা যেটি বেলজিয়ান কমিশন ফর দি প্রোটেকশন অফ প্রাইভেসি প্রকাশ করেছে যে ফেসবুক শুধু তাদের তথ্যই সংরক্ষন করে না যারা ফেসবুকের অ্যাকাউন্ট হোল্ডার বরং তাদের ও তথ্য সংরক্ষন করে যাদের সোশ্যাল সাইট মিডিয়াতে কোন অ্যাকাউন্টই নেই ।
এটি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র ওয়েবসাইট কুকিজ ও সোশ্যাল সাইটস প্লাগইন্স এর কারনে। আপনি এমন অনেক অ্যাপ্লিকেশন ও পেজে লাইক দিয়ে রেখেছেন যাদের আপনি অনুমতি দিয়েছেন আপনার তথ্য সংরক্ষন করার । যাই হোক রিসার্চাররা বলেছেন আপনি ওয়েব দুনিয়ায় বিচরন না করলেও মোবাইল অ্যাপস বা গেমসের মাধ্যমে আপনাকে ট্র্যাক করা সম্ভব। এছাড়াও অ্যাপস ও ওয়াইজেটএর লাইক এর ব্যবহার তো রয়েছেই।
কিভাবে এই নজরদারি হতে রক্ষা পেতে পারিঃ
যদি আপনি হন ফেসবুক ব্যবহারকারী তবে ঠিক আপানার জন্যেই ডেটা অ্যানালিসিস স্পেশালিষ্ট ভিকি বয়কিস দিয়েছেন একটি সেফটি গাইড। সেটি অনুসারে ফেসবুকে আপনার প্রাইভেসী রক্ষায় কিছু নিরাপত্তা মূলক পন্থা অনুসরন করতে পারেন-
- খুব বেশি ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন ।
- ফেসবুকে আপনার পরিবারের আপনার সন্তানদের ছবি পোষ্ট করা থেকে বিরত থাকুন ।
- কাজ শেষ হলে লগ আউট করতে ভুলবেন না, দরকার হলে বিভিন্ন কাজে ভিন্ন ভিন্ন ব্রাউজার ব্যবহার করুন ।
- অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করুন ।
- মোবাইলে মিনি ব্রাউজার ব্যবহার করুন, সরাসরি মেসেঞ্জার অথবা ফেসবুক লাইট অথবা ফেসবুক অ্যাপস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন ।
বিজনেস ইনসাইডার একটি আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন সকল প্রকার ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কে নিম্ন লিখিত সতর্কতা মূলক পদক্ষেপ গুলো নিতে বলেছেঃ
- আই ফোন ও আই প্যাড ব্যবহারকারীরা সেটিংস এ যান ; সেটিংস> কনফিডেন্সিয়ালিটি> অ্যাডভারটাইজিং > লিমিট অ্যাড ট্র্যাকিং অপশন টা চালু করে রাখুন
- অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহার করলে গুগল সেটিংস এ যান ; গুগল> অ্যাড সেটিংস> টার্ন অফ অ্যাডস পার্সোনালাইজেশন
- ক্রোম ব্রাউজার বা অন্য কোন ব্রাউজার ব্যবহার করলে সেটিংস আগের মতই ; ওপেন সেটিংস> অ্যাডভান্সড সেটিংস> প্রাইভেসী, তারপর বক্স খুঁজুন যেখানে বলা রয়েছে সেন্ড “ডু নট ট্র্যাক” যা ব্রাউজার ট্রাফিক থেকে গুগলকে অনুসরন না করার অনুরোধ জানাবে।
এখনো তেমন কোন আইন প্রতিষ্ঠিত হয় নি যা ব্যাক্তিগত ব্যপারে ফেসবুক এর নজরদারি রোধ করতে পারে। তবে ফেসবুক ও কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মাঝে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে যাতে বলা রয়েছে তাদের কর্মী ও তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ফেসবুক তাদের কোন প্রকার তথ্য ব্যবহার করতে পারবে না।
বন্ধুরা তাহলে আজ এই পর্যন্তই। দ্রুতই ফিরবো নতুন কিছু নিয়ে পুনরায় আপনাদের সামনে ততদিন আমাদের সাথেই থাকুন
নাসীব উর রহমান
Thanks Brightside